বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

হি ওয়াজ মিসটেকেইনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘হি ওয়াজ মিসটেকেইনলি বর্ন ইন বাংলাদেশ।’ এ কথাটি বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার। সেই অটো ফিস্টার, যিনি ঘানাকে বিশ্ব যুব কাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন, সেই ফিস্টার যিনি আফ্রিকার দারিদ্রপীড়িত দেশ টোগোকে বিশ্বকাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে গিয়েছিলেন।


আর এ কথাটি তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালী যুগের মহানায়ক, দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার মোনেম মুন্না সর্ম্পকে । বাংলাদেশে যতজন বিদেশী কোচ কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকেই মুন্নার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।


আজ মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার  সেই মোনেম মুন্না’র ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ।


এ উপলক্ষে মোনেম মুন্না স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূূচীর আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, মরহুমের কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধা নিবেদন, বাদ জোহর কাঙ্গালী ভোজ ও দোয়ার মাহফিল।

 

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের তথা ওপার বাংলাসহ দক্ষিন এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে মুন্নার রঅবদান ভোলার মত নয়। নারয়ণগঞ্জসহ দেশের নতুন প্রজন্ম মুন্নার সর্ম্পকে খুব কমই জানে। যদিও ২০০৮ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ মোনেম মুন্নার স্মরণে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সেতুটির নামকরণ করে 'মোনেম মুন্না সেতু' । যেটা আমরা অনেকেই জানি না। আর জানবোই বা কীভাবে ? অযতœ  আর অবহেলায় সেই ফলকটিও এখন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়।

 

কেউ খবর ও রাখেনি ইয়াসমীন মোনেম সুরভীর যার কিনা ১২টি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি নিজের বিবাহ বার্ষিকীতে কাটাতে হয় স্বামীবিয়োগের বেদনা নিয়ে । দিনটি তাঁর জীবনে কাটতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার আনন্দ উদযাপনের মধ্য দিয়ে । আর এখন কাটছে সেই প্রিয় জীবনসঙ্গীকে হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ।

 

আবাহনীর সাথে মোনেম মুন্নার বোধহয় আত্মার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল যার কারণে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শেখ কামালের হাতে গড়া আবাহনীর সাথেই জড়িত ছিলেন। ১৯৮৭ থেকে একটানা ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আবাহনীতে খেলেছেন মুন্না। আবাহনীর হয়ে খেলেই অবসরে গেলেও আবাহনীর ম্যানেজার হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে আবাহনী মাঠেই ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কিডনী রোগে তার মৃত্যুর পর শেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।

 
১৯৯৯ সালে হঠাৎ তাঁর কিডনি সমস্যা ধরা পরলে, সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসেন। তাতে খুব কাজ হয়নি, পরের বছরই মেঝ বোনের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর শরীরে। তারপর কয়েক বছর ভালোভাবে কেটে গেলে ২০০৪ সালের শেষদিকে আবার সমস্যা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং ২০০৫ সালের এই দিনে তিনি পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে কাঁদিয়ে চলে যান অন্য ভুবনে।


মৃত্যুর বার বছর পরও বাংলাদেশ পায়নি কোন যোগ্য উত্তরসূরী কিংবদন্তি মুন্নার ; যিনি চুম্বকের মতো এক দশকেরও বেশি সময় টেনে রেখেছিলেন লাখ লাখ ফুটবল অনুরাগীকে। যাকে দলে নিতে ১৯৯১ সালে আবাহনী- মোহামেডানের যে প্রতিযোগীতা হয়েছিল সেটাও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সেরা গল্পগুলোর একটি। নব্বই দশকে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের আবির্ভাবে চড়া দামে বিক্রি হওয়া ফুটবলারদের খাতায় নাম লেখাননি মুন্না। আবাহনীতেই থেকে গিয়েছিলেন এবং তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে আবাহনীর মর্যাদা ও অক্ষুন্ন রেখেছিলেন। 

 

শুধু এই বাংলায় নয়, ওপারেও এই ডিফেন্ডার ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। ঠিক যেমন আবাহনীর ঘরের ছেলে তেমনিই ছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছেও। তার মৃত্যুর পর চোখের জলে ভেসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বাসীও।

 

এক নজরে মোনেম মুন্না
জন্ম : ৯ জুন ১৯৬৮, বন্দর ,নারায়ণগঞ্জ
মৃত্যু : ১২  ফেব্রুয়ারি ২০০৫, ঢাকা

 

ফুটবল ক্যারিয়ার
১৯৮০-৮১ : পাইওনিয়ার ফুটবল পোস্ট অফিস
১৯৮২ : দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল শান্তিনগর
১৯৮৩ : দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
১৯৮৪-৮৫ : প্রথম বিভাগ ফুটবল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ

 

১৯৮৬ : প্রথম বিভাগ ফুটবল ব্রাদার্স ইউনিয়ন
১৯৮৭-৯৮ : প্রথম বিভাগ ফুটবল আবাহনী
১৯৯১-৯৩ : ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কলকাতা
জাতীয় দল : ১৯৮৬-১৯৯৭।

এই বিভাগের আরো খবর