শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

হাজিরা দিতে এসে প্রতারক শাহনাজ ও সুলতান জেলহাজতে

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : প্রতারণার মামলায় মহা প্রতারক বাচ্চুর পর এবার তার স্ত্রী শাহানাজ (৪০) ও কথিত শ্যালক সুলতান মাহমুদকে (৩৮) জেল হাজতে প্রেরন করেছে বিজ্ঞ আদালত। 


আদালতে অসহায় বিধবা হাসনা জাহান রুনুর দায়ের করা একটি প্রতারণা মামলায় গতকাল বুধবার তাদের জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। 

 

বাদীর মৃত স্বামীর স্বাক্ষর জাল করে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (ডাইং ফ্যাক্টরী) দখলের অভিযোগে এই মামলা দায়ের করেন বিধবা হাসনা জাহান। 

 

মামলার বাদী জানান, গত বছরের ২১ নভেম্বর তল্লা এলাকার মজিবুর রহমান সোহেল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।  এ ঘটনার পর ফতুল্লা সস্তাপুর এলাকার মৃত জিন্নাত আলীর পুত্র শাহাদাত হোসেন বাচ্চু, তার স্ত্রী শাহানাজ ও শ্যালক সুলতান মাহমুদ ৩‘শ টাকার ৩টি স্ট্যাম্প নিয়ে হাসনা জাহান রুনুর বাসায় হাজির হয়ে জানায় মৃত মজিবুর রহমান সোহেল তাদের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা নিয়েছে এবং স্ট্যাম্পে তার মৃত স্বামীর স্বাক্ষর দেখায়। 

 

এর আগে থেকেই তার স্বামীর কাছ থেকে মেসার্স এ আর নিট কম্পোজিট ডাইং ভাড়া নেয়ার আলোচনা করেছিলো। কিন্তু মজিবুর রহমান সোহেলের মৃত্যুতে ভাড়া নেয়া হয়নি। কিন্তু সোহেলের মৃত্যুর পর থেকে বাচ্চু গং নানাভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে ডাইংটি দখলের নেয়ার চেষ্টা করে। 

 

এ ঘটনায় মৃত মজিবুর রহমানের স্ত্রী রুনু আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে প্রতারণার অভিযোগে বিজ্ঞ আদালত প্রথমে বাচ্চুকে এবং গতকাল আদালতে হাজির হলে বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ ও শ্যালক সুলতান মাহমুদকে জেলহাজতে প্রেরন করেন।


জানাগেছে, তল্লা এলাকার মৃত মজিবুর রহমান সোহলের স্ত্রী হাসান জাহান বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রে “খ” অঞ্চল আদালত, নারায়ণগঞ্জে উপস্থিত হয়ে শাহনাজ পারভীন, মো. শাহাদাত হোসেন বাচ্চু সহ মো. সুলতান মাহমুদদের বিবাদী করে একটি মামলা করেন যার পিটশন মামলা নং ১৮১/২০২০। দায়েকৃত মামলার প্রেক্ষিতে উল্লেখিত আসামীরা বুধবার আদালতে উপস্থিত হন।


দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদীর স্বামী মজিবুর রহমান সোহলের নিজ অর্থায়নে মেসার্স এ.আর.নীট কম্পোজীট নামে একটি ডাইং ফ্যাক্টরী স্থাপন করে ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছিলেন। 

 

ব্যবসা পরিচালনা করার সময় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার চিন্তা করে। সেই সময় মো. শাহাদাত হোসেন বাচ্চুর সাথে তার পরিচয় হয় এবং বাচ্চু এ.আর.নীট কম্পোজীট ভাড়া নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। 


সেই সময় মজিবুর রহমান সোহল ভাড়া নেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত দিলে অভিযুক্ত বাচ্চু তার সকল শর্ত মেনে নেয় এবং প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের নামে ভাড়া না নিয়ে তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের নামে নিবে মর্মে জানান। 


তাদের এমন আলোচনার পর ভাড়া নেয়া বিষয়ে মুজিবুর রহমান ও বাচ্চু একটি খসড়া চুক্তিপত্র সম্পাদনা করেন। মেসার্স এ.আর.নীট কম্পোজীট এর মাসিক ভাড়া ৭ লক্ষ টাকা এবং অগ্রিম হিসেবে ৪০ লক্ষ টাকা ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সহ গ্যাস বিল পরিশোধ করিবে মর্মে বিষয়টি উল্লেখ ছিল খসড়া চুক্তিপত্রে। 

 

মৃত মজিবুর রহমান সোহলের স্ত্রী হাসান জাহানের অভিযোগ, অগ্রিম ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়ার চুক্তি থাকলেও বাচ্চু ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনসহ মো. সুলতান মাহমুদ প্রতিনিয়ত তার স্বামীকে বিভিন্ন দিনক্ষন দিয়ে কালক্ষেপন করতে থাকে। 

 

এক পর্যায়ে অভিযুক্ত বাচ্চু ও তার স্ত্রী তাদের সেই প্রতিষ্ঠানে থাকা বিভিন্ন  মেশিনারিজ যন্ত্র সরিয়ে নেয়াসহ বিক্রি করার পাঁয়তারা করলে মজিবুর রহমান বিষয়টি বাচ্চুকে জানায়। তবে বাচ্চু সেই সময় ক্ষিপ্ত হয়ে মজিবুর রহমান সোহলের সাথে খারাপ আচরন করে। 

 

ঐ আচরনের মানুষিক চাপ সহ্য না করতে পারে মজিবুর রহমান সোহল মৃত্যুবরণ করেন বলে অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে।

 

জানা গেছে, মজিবুর রহমান সোহলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীসহ পরিবার সেই ফ্যাক্টরীর ভাড়াটিয়া  শাহনাজ পারভীন, মো. শাহাদাত হোসেন বাচ্চু সহ মো. সুলতান মাহমুদের নিকট বকেয়া টাকা, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাস বিল পরিশোধ সহ প্রতিষ্ঠান অন্যত্র ভাড়া দেওয়ার কথা বললে শাহনাজ পারভীন জানায় মৃত মজিবুর রহমান ৩০০ টাকা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছে। তবে তাদের এমন দাবি মিথ্যা ও তাদের প্রদর্শিত স্ট্যাম্পটি জাল বলে অভিযোগ উল্লেখ করেন হাসান জাহান। 

 

উল্লেখ্য, ফতুল্লায় মৃত স্বামীর রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (ডাইং) দখলের চেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ তুলে হাসনাত জাহান রুনু সম্প্রতি (১৫ ফেব্রুয়ারী) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে প্রতারক বাচ্চু, শাহনাজ বেগম ও সুলতান মাহমুদ গং এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা  করেছেন।

 

অন্যদিকে প্রতারক বাচ্চুর স্ত্রী শাহনাজ বেগম পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবী করেছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক অবৈধভাবে অন্য এক ব্যাক্তিকে ডাইংটি ভাড়া দিয়েছেন। তবে তার বক্তব্যের সাপেক্ষে সাংবাদিকরা যথাযথ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক অর্ধ-সমাপ্ত রেখে চলে যান।  
 

এই বিভাগের আরো খবর