শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সড়কে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য : স্বাস্থ্যঝুঁকি

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) :  ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের মেডিকেল (চিকিৎসা) বর্জ্য বিনষ্ট বা শোধন করা হচ্ছে না। হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য হাসপাতালের বাহিরে বঙ্গবন্ধু সড়কে ফেলা হয়। সড়কে মেডিকেল বর্জ্য ফেলায় স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

 


হাসপাতালের বিপরীতদিকে স¤্রাট এন্ড কোং এর (প্রাঃ) লিঃ। স¤্রাট এন্ড কোং এর (প্রাঃ) লিঃ গার্মেন্টেসের সামনে বঙ্গবন্ধু সড়কে হাসপাতালের মেডিকেল (চিকিৎসা) বর্জ্যসহ সকল ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। দিনে ২ বেলা মেডিকেল বর্জ্য ফেলা হয়।

 

হাসপাতাল থেকে সকালে বর্জ্য ফেলে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ১২ টায় অপসারন করে আবার দুপুরে বর্জ্য ফেলে দুপুর ৩ টায় অপসারন করে। কখনো কখনো দুপুরের বর্জ্য সারাদিন ফেলে রাখা হয়। পরদিন সেই বর্জ্য অপসারন করা হয়।   


সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বিপরীত দিকে ফুটপাতের পাশে সড়কে ময়লার ভাগাড়। রাস্তায় গৃহস্থালি বর্জ্যরে পাশাপাশি মেডিকেল বর্জ্য পড়ে আছে। সংক্রামক বর্জ্য ব্যান্ডেজ, তুলা, স্পঞ্জ, রক্ত, পুঁজ, দেহরস দ্বারা সংক্রমিত গজ, রক্ত সঞ্চালনের ব্যাগ-টিউব, রক্ত দ্বারা সংক্রমিত স্যালাইন সেট, সংক্রমিত সিরিঞ্জ ইত্যাদি ময়লার পরে আছে। মাছি ভনভন করছে। মেডিকেল বর্জ্যরে সাথে সম্পৃক্ত কীটপ্রতঙ্গ মানুষের জন্য ভয়াবহ বলে মনে করছেন ফুটপাতের পথচারীরা।

 


মন্ডলপাড়ার বাসিন্ধা রফিকুল আলম বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমরা প্রতিদিন চলাচল করি। রাস্তার পাশে হাসপাতালের ময়লা ফেলে। সাধারন গৃহস্থালি ময়লা থেকেও এই ময়লা বেশি ক্ষতিকর। হাসপাতালের মানুষ এই বিষয়ে সাধারন মানুষের চেয়ে ভালো বুঝে। তাদের কাছে এই কাজটি আশা করা যায় না। তাদেরকে না করেছে সাধারন মানুষ। তারপরেও একই অবস্থা। রোজ হাসপাতালের বাহিরে রাস্তায় ময়লা ফেলে রাখে। 


ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বর্জ্য হাসপাতালের ভিতরে এক পাশে ফেলা হতো। হাসপাতালে ইনসাইনেরেটর না থাকায় বর্জ্য শোধন ও বিনষ্ট না করে হাসপাতালের ভিতরে দিনের পর দিন বর্জ্য জমে থাকত। মাসে মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এসে বর্জ্য নিয়ে যেত। নয়ত এই  বর্জ্যে পুরো হাসপাতালে দূগর্ন্ধের সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সময়মত এসে ময়লা না নেওয়ায় বর্জ্য হাসপাতালের বাহিরে সড়কে ফেলা হয়। পরবর্তীতে সড়ক থেকে বর্জ্য অপসারন করা হয়।

 


এদিকে  সিটি করপোররেশন বেসরকারি এনজিও সংস্থা প্রিজম বাংলাদেশে ফাউন্ডেশনের সাথে সিটি করপোররেশনের ভিতরের সকল মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এই চুক্তিতে প্রায় সকল মেডিকেল প্রতিষ্ঠান এই চুক্তির অধীন আসলেও ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের বর্জ্য প্রিজমের সাথে যুক্ত হয়নি। 

 


সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের আয়োজিত মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক এক সেমিনারে ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু জাহের প্রিজম বাংলাদেশকে ৩০০ শয্যা হাসপাতালের বর্জ্য অপসারন করতে বলেন। 

 


এই সভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ১৫ নং ওর্য়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস  বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। যারা দায়িত্বশীল তারাও ভুল করছে। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের প্রশানিক দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তার সাথে মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে কয়েকবার কথা বলা হয়েছে। 

 


সরকারি হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য বিনষ্ট করার ক্ষেত্রে সার্ভিস ফি দেওয়ার খাত রয়েছে। আইনে এই বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টি আমরা ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পারছি না। 

 


হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কথা হলো আইনে রয়েছে সিটি করপোরেশন এই বর্জ্য নিতে বাধ্য। এই কারণে মেডিকেল বর্জ্য প্রতিদিন হাসপাতালের বাহিরে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এই সংক্রামক বর্জ্য সংগ্রহ করছে। যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

 


নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এই বিষয়ে বলেন, আমার ঢাকায় বর্জ ব্যবস্থ্পনার বিষয়ে কথা হয়েছে হাসপাতাল ডিরেক্টরের সাথে। প্রিজমের মাসিক ফি এর বিষয়ে কথা বলেছি। ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাসিক ফি দেওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। 

 


আমরা আবেদন করব হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার পরিচালকের কাছে। আর উনমুক্তভাবে হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য ফেলে রাখার কোন নিয়ম নেই। শীঘ্রই এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   
 

এই বিভাগের আরো খবর