শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সড়ক যেন মরণ ফাঁদ !

তুষার আহমেদ 

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২০  

ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কেওয়াটখালী রোলিং মিল পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের অভাবে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সড়কটির এই নাজুক অবস্থা থাকলেও যেন তা নজরে আসেনি কারোর।

 

অথচ এই সড়কের পাশেই রয়েছে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান কার্যালয়! একই সাথে এই সড়ক ধরেই উইজডম এ্যাটায়ার্স নামক নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান।

 

এদিকে, রাস্তাটি সংস্কারে সংশ্লিষ্টরা এখন করোনা পরিস্থিতির অযুহাত দেখালেও সূত্র বলছে, করোনা উদ্ভবের আগে থেকেই এই সড়কটির বেহাল দশা বিরাজ করছে। পর পর দুটি শীত মৌসুম পার হলেও তা সংস্কার করা হয়নি। এখন চলে এসেছে বৃষ্টির মৌসুম। এতেকরে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে পূরনো ভোগান্তি শুরু হয়েছে নতুন করে।


জানাগেছে, ২০১৫ সালের ৫ই আগষ্ট দাপা ইদ্রাকপুরে ফতুল্লা পোষ্ট অফিস রোডের এই শাখা সড়কটির আর.সি.সি ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন নারায়ণগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর এল.জি.ই.ডি’র বাস্তবায়নে এ কাজের ঠিকাদারী নেন ‘মেসার্স এহসান এন্টারপ্রাইজ’।


অভিযোগ রয়েছে, পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলেও পোষ্ট অফিস টু শিবু মার্কেট এবং শাহ-জাহান রোলিং মিল টু ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সড়কে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা করেনি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

 

এতে করে সামান্ন বৃষ্টিতেই পানি ও কাদামাটি জমে সেই পুড়নো চিত্র দেখা যায় সড়কটিতে। শুধু তাই নয়, অদৃশ্য কারণে দক্ষিন শিয়াচর হাজী বাড়ীর মোড় হতে দাপা ইদ্রাকপুর এলাকায় অবস্থিত সাংসদ সেলিম ওসমানের শিল্প প্রতিষ্ঠান উইজডম এটায়্যার্স গার্মেন্টস পর্যন্ত সড়কে আর.সি.সি ঢালাই দিয়েই কাজ গুটিয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

 

আর উইজডমের পর কেওয়াটখালী রোলিং মিলস্ থেকে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার বিহীন অবস্থায় থেকে যায়। ওই অবস্থাতেই আশপাশের অসংখ্য গার্মেন্টস ও ডাইংয়ের মালামাল বহনকারী কাভার্ডভ্যান এবং ইট-বালু বহনকারী অগনিত ট্রাক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সড়কটি দিয়ে। মালবাহী গাড়ি চলাচলের ফলে আরো বেশি খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে সড়কটি।

 

এরপরও বছরের পর বছর ধরে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দাপা ইদ্রাকপুর ও শিয়াচর এলাকার কর্মজীবি হাজারো মানুষ। এ নিয়ে কোন তদারকী কিংবা মাথা ব্যাথাও  নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তবে, কিছুদিন পূর্বে সড়কটিতে নিজ অর্থায়নে ড্রেন নির্মাণ করেছে আশপাশের ডাইং-কারখানার মালিকরা।

 

এ বিষয়ে শিয়াচর এলাকার বাসিন্দা তানজিল আহমেদ বলেন, ইতিপূর্বে বছরের পর বছর ধরে ফতুল্লা পোষ্ট অফিস সড়কটি সংস্কার বিহীন অবস্থায় ছিল। মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিলো না। আমাদের এমপি শামীম ওসমান সাহেবের হস্তক্ষেপে এল.জি.ই.ডি’র অর্থায়নে ওই সড়কের কিছু অংশ আর.সিসি ঢালাইয়ে পরিনত হলেও এতে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা করেনি।

 

ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শাজহাজান রোলিং মিল সড়কের কেওয়াটখালী রোলিং মিল পর্যন্ত সড়কটি অদৃশ্য কারণে সংস্কারবিহীন অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে। এতেকরে ওই অঞ্চলের মানুষ পূনরায় দূর্ভোগে পড়েছে। সড়কটি একেবারে মৃত্যু ফাঁদে পরিনত হয়েছে।

 

ক’দিন আগে মোটর সাইকেল যোগে ওই সড়ক দিয়ে আসার পথে গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাতের হাড় ভেঙ্গে যায়! এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে। এরপরও এটা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এখন করোনার অযুহজাত দেখঅনো হচ্ছে। তাহলে করোনার আগে শুকনো মৌসুমে কেন এই সড়কের কাজ ধরা হলো না? সারা দেশে এতো উন্নয়ন করা হলেও এই এলাকার বেলায় এমন কেন ! এমন আক্ষেপ ভড়া প্রশ্ন ওই এলাকার সকল বাসীন্দাদেরও।


শিয়াচর এলাকার সুজন নামে এক যুবক জানান, চাকরীর সুবাধে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ফতুল্লায় যাতায়ত করতে হয়। কিন্তু সড়কের যেই অবস্থা, কোন রিক্সা চালকও এই সড়ক দিয়ে যেতে চায় না। কেউ আসলেও দিগুন ভাড়া দাবি করে। বছরের পর বছর এই অবস্থায় পড়ে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সত্যিই এটা দুঃখ জনক।


শাহ-আলম নামে এক রিক্সা চালক বলেন, ‘গতকাল সকালে সড়ক দিয়ে কাঁচা বাজার বোঝাই মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রবল ঝাঁকুনীতে চাঁকার টায়ার ফেটে যায়। প্রায় সময়ই এখানে যাত্রীবাহী অটো রিক্সা কিংবা অন্যান্য বাহন উল্টো যাচ্ছে। এভাবে চলাচল করা কঠিন। তাই এ সড়কে যাত্রি নিয়ে আসতে চাই না। আর কেউ কেউ আসলেও একটু বেশি ভাড়া দাবী করে থাকে।’   


এ ব্যপারে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার লূৎফর রহমান স্বপন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এল.জি.এ.ডি’র অধিনে এখানে কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু জানতে পেরেছি, বাজেট স্বল্পতার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার কেওয়াটখালী রোলিং মিল পর্যন্তু সড়কে আর.সি.সি ঢালাই করা সম্ভব হয়নি। প্রথম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা থেকে এসেছিলো।’


তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটির ভয়াবহ অবস্থা। আমরা এই সড়কসহ বেহাল সড়ক গুলোর তালিকা আমাদের এমপি মহোদয়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। এই সড়কের নতুন করে টেন্ডার হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা সাজনু সাহেবের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই টেন্ডার পেয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তারা নির্মান সামগ্রীও এনেছেন। কিন্তু করোনার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে এলজিইডি ভালো বলতে পারবে।’   


এবিষয়ে জানতে কথা হয় এল.জি.ই.ডি নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সেলিম সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
 

এই বিভাগের আরো খবর