শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই, দুই মাসে না.গঞ্জে নিহত ১৯

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় লাশের সংখ্যা বেড়েই চলছে। লাইসেন্স বিহীন অদক্ষ চালক ও ফিটনেস বিহীন গাড়ির কারণেই  সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার চালকেরা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে সড়ক আইন না মেনে গাড়ি চালিয়ে কেড়ে নিচ্ছে জীবন। সড়ক আইন থাকলেও নেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ। ফলে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলছে।


গত দুই মাসে নারায়ণগঞ্জে ১৭টি সড়ক দূর্ঘটনায় ১৯ জন জনের মুত্যু হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন ও অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়।


২৭ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জে কাভার্ডভ্যান চাপায় হৃদয় (২৬) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী পাঠাও চালক নিহত হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কাভার্ডভ্যানের চালককে আটক করে।


২৪ অক্টোবর ১দিনে সড়ক দূর্ঘটনায় ৫ জন মারা যায়। সকালে ফতুল্লার পাগলা  বাজার এলাকায় ট্রাকের চাপায় লালন চাঁন নামের একজন রিক্সাচালক নিহত হয়েছে। দুপুরে রূপগঞ্জের তারাব সুলতানা কামাল সেতু এলাকায় অজ্ঞাত গাড়ির চাপায় ফরহাদ হোসেন (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের স্থানীয় ছনপাড়া এলাকায় মেঘালয় পরিবহনের একটি যাত্রীবাহি বাস খাদে পড়ে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।


২৫ অক্টোবর বন্দরে অটো ইজিবাইকের ধাক্কায় নজরুল ইসলাম ওরফে নজু (৫০) নামে এক সিএনজি চালক নিহত হয়েছে। সকালে দড়ি-সোনাকান্দা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন তিনি।


২৩ অক্টোবর বরফকল মাঠ সংলগ্ন আওয়ামীলীগ অফিসের সামনে ট্রাকের নীচে চাপা পড়ে মো. শান্ত (৩০) নামের এক যুবক আহত হয়। ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়।


২০ অক্টোবর আড়াইহাজারে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের পূর্বকান্দি এলাকায় মটর সাইকেলের ধাক্কায় রেজিয়া খাতুন (৭০) নামে এক বৃদ্ধা নিহত হয়। একইদিন রোববার দুপুরে সোনারগাঁয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশের কনস্টেবল আরিফ নিহত হয়। মোটরসাইকেলযোগে রূপগঞ্জের গাউছিয়া যাওয়ার পথে তিনি ট্রাক চাপায় নিহত হন।


 ৯ অক্টোবর বন্দরের ফুলহর এলাকায় কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় রাসেল ওরফে শুভ (২২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত রাসেল ওরফে মুন্না বন্দরের চাপাতলী এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। ওইদিন সন্ধ্যায় আড়াইহাজারে কৃঞ্চপুরা চৌরাস্তায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় আবুল হাসেম (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। 


৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় আড়াইহাজার উপজেলায় কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের কদমিরচর ও নোয়াগাঁও সড়কে  ট্রাক্টরের চাপায় আবু সাঈদ (৮) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। 


পরের মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়। রূপগঞ্জে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় বীরমুক্তিযোদ্ধা খাঁন মোহাম্মদ খুরশিদ আলম (৬৫) নিহত হয়েছেন। ২৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার তারাব পৌরসভার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।


২১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ৪টায়  বন্দরেরমদনপুরস্থ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যানের পিছনে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় লোকমান মিয়া নামে পিকআপ ভ্যানের মালিক নিহত হয়েছে। নিহত লোকমান (৪৫) লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানার দেবীপুর এলাকার শফিউল্লাহ মিয়ার ছেলে।


ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সদর উপজেলার গোগনগর এলাকায় একটি সিমেন্টবাহি ট্রাকচাপায় জামাল হোসেন নামে এক অটোরিকশা চালক নিহত ও একজন যাত্রী আহত হয়েছেন। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর ) সকালে সাড়ে ছয়টায় সড়কের মন্ডলবাড়ি সেতুর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।


৭ সেপ্টেম্বর  ফতুল্লাার দেলপাড়া এলাকায় ট্রাক চাপায় আরাফত হোসেন (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছে। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত ট্রাক আরাফাতকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।


আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম (৩০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর লাশ উদ্ধার করে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ। ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পুরিন্দা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। নিহতের শরীরে কিছু জখমের চিহ্ন দেখে ধারনা করে সড়ক দ‚র্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে।  


২ সেপ্টেম্বর  রূপগঞ্জে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকের সহযোগী (হেলপার) রাজু পাটোয়ারি (২৮) নিহত হয়েছেন।
এদিকে এই বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এই আইনের মাধ্যমে বাতিল হচ্ছে ৭৯ বছরের পুরোনো মোটরযান অধ্যাদেশ। নতুন আইন অনুযায়ী সড়কে আইন বাস্তবায়ন হলে মানুষের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি পাবে ও সড়ক দূর্ঘটনা হ্রাস পাবে বলে জানান নগরের সচেতন মহল।


নতুন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালকের কারণে মৃত্যু হলে পাঁচ বছর কারাদÐ বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দÐের বিধান রাখা হয়েছে। আর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে হত্যাকাÐ ঘটালে সর্বোচ্চ সাজা হবে ফাঁসি।
 
 

এই বিভাগের আরো খবর