বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ের রাজনীতি দখলে মরিয়া ইঞ্জিনিয়ার মাসুম, নেপথ্যে গডফাদার

প্রকাশিত: ১ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ের উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি।

জেলার শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন কোন নিয়মনীতি না মেনে সোনারাগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির ভেঙে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো.বাদল। 

এই আহবায়ক কমিটির পেছনে রয়েছে সোনারগাঁ দখলের রাজনীতি এবং টাকার খেলা। তারা বলেছেন, পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম প্রকাশ্যেই উপজেলা কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নিজে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকার পরেও এই উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক হয়েছেন। 

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, পিরোজপুরসহ আশেপাশের এলাকায় টাকা উড়ছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধভাবে কৃষকের জমি দখল করে, বালুভরাট করে, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। আর এই চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক গডফাদার।  

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি পিরোজপুর ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির দেনদরবার হয়েছে। আর সেটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মদদ ছিলো। 

যার দরুণ অবৈধভাবে এই আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। সোনারগাঁয়ে নানা ব্যবসায় টাকা উড়ছে। সেখানে এক গডফাদারের আত্মীয়স্বজনকে একটি চক্রের সাথে জোড়া লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তাদেরকে সুবিধা দিতেই এই আহবায়ক কমিটি। আমরা আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি এব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।’  

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহিদুল্লাহ বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র ২৫(১)(ক) ধারায় সভাপতির শুধু রুল দেয়ার ক্ষমতা এবং ২৫(১)(গ) ধারায় স্পষ্ট লেখা আছে কেউ একক সিদ্ধান্ত দিতে পারবেনা। সংখ্যাগরিষ্টতার উপর ভিত্তি  করে যে কোন সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে। সোনারগাঁয়ের যে আহবায়ক কমিটি দেয়া হলো তা সম্পূর্ণ অবৈধ। 

ব্যক্তিস্বার্থ এবং ক্ষমতার স্বার্থ রক্ষার জন্যই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই কাজ করেছেন। এর পেছনে রয়েছে গডফাদারের হাত। সারা নারায়ণগঞ্জ সেই গডফাদার কব্জা করে নিতে চায়। 

সোনারগাঁয়ে একটি চক্রকে সুবিধা দিতেই সেই গডফাদারের নির্দেশে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আহবায়ক কমিটি দেয়ার এই কাজ করছে। শুধুমাত্র সম্পূর্ণভাবে একটি চক্রকে সুবিধা পাইয়ে দিতে। সোনারগাঁয়ে শুধু টাকার খেলা। আমরা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ন্যায়সঙ্গতাবে, আইন অনুযায়ী যেটি করণীয় সেটিই করবো।’ 

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এড.আসাদুজ্জামান বলেন, সোনারগাঁয়ে এভাবে আহবায়ক কমিটি দেয়া সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ। সোনারগাঁয়ের লোকজন বলাবলি করছে  পিরোজপুরসহ ওখানকার আরো কয়েকটি এলাকায় বালুমহালসহ নানা ব্যবসায় সক্রিয় একটি চক্র এই কমিটি দেয়ার পেছনে কাজ করেছে। যারাই করুক বিষয়টি অবৈধভাবে হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যক্তিদের মতামত নেয়া হয় নাই। কেন্দ্রে জানানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একজন স্বজ্জন ব্যক্তি। তিনি আমেরিকায় স্ত্রীকে চিকিৎসা করতে যাওয়া প্রশ্নবোধক। একথাটি এ কারণে বললাম জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি দেয়ার পর এ পর্যন্ত কয়েকবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত অভিযোগ এসেছে। 

কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে আহবায়ক কমিটি করে দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। বর্ধিতসভাতেও এনিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’   

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, ‘কারো সাথে কোন আলোচনা নেই, হুট করে কমিটি দিয়ে দিলো। এটি অবৈধ। এই তো কয়েকদিন আগে  ইঞ্জিনিয়ার মাসুম উপজেলা নির্বাচনে কালামের পক্ষ নিয়েছিলো। বাকিরা ছিলো নৌকার পক্ষে। 

এখন আবার সবএকসাথে হয়ে সোনারগাঁয়ে এক গডফাদারকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই আহবায়ক কমিটি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এব্যাপারে কারো সাথে আলোচনার প্রয়োজন মনে করে নাই। এসব কর্মকা-ে আমরা সকলেই বিব্রত হচ্ছি।’

সোনারগাঁয়ে আহবায়ক কমিটি দেয়ার পেছনে কোন আর্থিক লেনদেনের বিষয় নেই দাবি করে আমেরিকায় অবস্থান করা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘সোনারগাঁয়ের উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি দেয়ার সাথে আর্থিক লেনদের বিষয়টি আসা অবান্তর বিষয়। যাই হোক এটি নিয়ে আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছিনা। দেশে ফিরে এসবের উত্তর দেবো।’ 

প্রসঙ্গত, ১৫ জুলাই এড.শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহবায়ক এবং  পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহবায়ক করে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন। 

কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু। 

এই কমিটির ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও নাসিক মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি কি করে হলো এটি আমি জানিনা। তবে জেলা আওয়ামী লীগের ১৩ তারিখের বর্ধিত সভায় এধরণের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে পাশ কাটিয়ে এ ধরণের কমিটি দেয়া মোটেও ঠিকনা এবং এটি একটি অবৈধ কমিটি। জেলা কমিটিতে এধরণের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’
  
অপরদিকে যে কোন সিদ্ধান্ত সভাপতি ও সেক্রেটারি এককভাবে দেয়ার এখতিয়ার রাখেন মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল বলেন, ‘আমরা যে কোন সিদ্ধান্ত এককভাবে দেয়ার এখতিয়ার সভাপতি ও সেক্রেটারির রয়েছে। 

সোনারগাঁয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী প্রত্যেকেই দাবি করেছে  প্রায় ২০ জনের অধিক সিনিয়র নেতা মৃত্যুবরণ করেছে। এই কমিটিও অনেক বছরের কমিটি যেটির বেশিরভাগ পদেই ভারপ্রাপ্ত। আমরা এখানে আহবায়ক কমিটি চাই। তার ভিত্তিতেই এ কমিটি দেয়া হয়েছে।’ 
 

এই বিভাগের আরো খবর