শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, আহত ৫০

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁ উপজেলার টিপরদী এলাকায় একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। টিপরদী এলাকায় অবস্থিত পোশাক উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চৈতি কম্পোজিটে মহিলা শ্রমিককে মেরে হাত-পা বেঁধে লাশ বাথরুম থেকে গুম করা হয়েছে এ ধরণের গুজবে বৃহস্পতিবার সকালে কারখানার ভেতরে ভাঙচুর চালায় শ্রমিকরা।

পরে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা সহকর্মী মহিলা শ্রমিকের লাশ না দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ও  লাঠি ও ইটপাটকেল দিয়ে যানবাহনে ব্যাপক ভাব ভাঙচুর চালায়।

খবর পেয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশ, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো টিপরদী এলাকা রনক্ষেত্রে পরিণত হয়।

শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসময় ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ১০ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ৭ জন পুলিশ সদস্য, ৩ সাংবাদিক ও শ্রমিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এসময় কারখানা কর্তৃপক্ষ ২ দিনের ছুটি ঘোষণা করে।

ঘটনার সময় প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এসময় মহাসড়কের দুই প্রান্তে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কবলে পড়ে এসময় শতশত পরিবহন যাত্রী চরম দূর্ভোগের শিকার হন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁ পৌরসভার টিপরদী এলাকায় অবস্থিত পোশাক উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চৈতি কম্পোজিটের বিভিন্ন সেকশনে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে।  

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারকানার ৩য় তলায় সুইং সেকশনের মহিলা শ্রমিক রিনা আক্তারকে টয়লেটের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখেন তার সহকর্মী কয়েকজন মহিলা শ্রমিক।

এসময় রিনা আক্তারকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখে অচেতন হয়ে পড়েন শেফালী আক্তার ও নাজমা আক্তার নামের দুই শ্রমিক। খবর পেয়ে ওই সেকশনের এজিএমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা টয়লেট থেকে মহিলা শ্রমিক রিনা আক্তারকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর মহিলা শ্রমিক রিনা আক্তারকে মেরে তার হাত-পা বেঁধে লাশ বাথরুম থেকে গুম করার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে তুলে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে এধরণের গুজব পুরো কারখানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

মুহূর্তের মধ্যে কারখানায় কর্মরত শতশত শ্রমিক তাদের কাজ বর্জন করে কারখানা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করে ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা সহকর্মী মহিলা শ্রমিকের লাশ না দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

চৈতি কম্পোজিটের ডিজিএম (প্রশাসন) মিজানুর রহমান জানান, সকালে নাস্তা না খেয়ে সুইং সেকশনের মহিলা শ্রমিক রিনা আক্তার কারখানায় কাজে যোগদান করে। টয়লেটে যাওয়ার পর সে সেখানে পড়ে যায়। এ ঘটনা দুই মহিলা শ্রমিক দেখার দেখার পর রিনা আক্তার মারা গেছেন মনে করে তারা অচেতন হয়ে পড়ে।

রিনা আক্তারকে মেরে হাত-পা বেধে তার লাশ গুম করা হয়েছে এমন গুজবে শ্রমিকরা তাদের কাজ বর্জন করে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও ব্যারিকেট সৃষ্টি করে। উত্তেজিত শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও তারা তা শুনেনি।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের উধ্বর্তন কয়েকজন কর্মকর্তা ও র‌্যাব পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা কারখানা এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়া টয়লেটের সেই মহিলা শ্রমিক রিনা আক্তারের সঙ্গে তারা কথা বলেন ও ঘটনাটি যে একটা গুজবের কারণে হয়েছে তা তারা প্রমাণ পান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তাৎক্ষণিক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।     

কারখানার শ্রমিক হালিম মিয়া ও রুবি ইসলাম জানান, মহিলা শ্রমিক রিনা আক্তারকে মেরে তার লাশ গুম করা হয়েছে এ খবরে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। প্রকৃত পক্ষে কি ঘটনা হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।

সোনারগাঁ থানার ওসি অপারেশন আলমগীর হোসেন জানান, চৈতি কম্পোজিটের শতশত শ্রমিকরা গতকাল সকাল ১১টার দিকে মহাসড়কে অবস্থান নেয় ও বিদ্যুতের খুটি ও গাছ ফেলে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে।

এসময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন যানবহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশের একাধীক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্ট করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় পুলিশ ৪১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ ও ১০ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এব্যাপারে থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) মো.খোরশেদ আলম জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। পুরো ঘটনাটি একটা গুজবের কারণে ঘটেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

এই বিভাগের আরো খবর