বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা 

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২০  

সিদ্ধিরগঞ্জ (যুগের চিন্তা ২৪) : সিদ্ধিরগঞ্জের ৬নং ওয়ার্ডে আদমজী, ইপিজেড, শিমুলপাড়া ও আইলপাড়া এলাকায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং। পাড়া মহল্লায় এই কিশোররা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অপরাধ মূলক কর্মকান্ড ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি করছে। 


এ সকল কিশোর গ্যাং এর জন্য থানা পুলিশকেও পড়তে হচ্ছে বিভ্রান্তিতে। আর এসব কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা বিভিন্ন সমাজপতি রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আনুগত্য নিয়ে চলে বিধায় সহজেই পার পেয়ে যায়। 


যার ফলে পুলিশে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য পাচ্ছেনা, নিতে পারছেনা আইনগত ব্যবস্থা। এসব ষড়যন্ত্রে কিশোরগ্যাংদের অপরাধের দায়ভার সাধারন নিরিহ মানুষ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের কাধে ঝাপিয়ে দিয়ে অপরাধিরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। 


একটি সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ পুলিশের অসাধু কিছু কর্মকর্তা এসব কিশোর গ্যাং নিয়ে ত্রিমুখী খেলায় মেতে উঠেছে। কিশোর গ্যাংদের সংঘর্ষ ও গুলোগুলির ঘটনার মামলা নিতে ৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়। অভিযোগ দিতে হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। নেওয়া হয় মামলা। এতেও পুলিশ কর্মকর্তারা বাধ সাজে। বাদিকে নানা ভাবে ভয়বৃত্তি দেখানো হয় মামলা থেকে প্রধান আসামীকে বাদ দিতে। 


এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ নাসিক ৬নং ওয়ার্ডে মতির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গুলাগোলির ঘটনায় এখনো আসামী গ্রেফতার ও অবধৈ অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনাই পুলিশ। ঘটনাটি ভিন্নক্ষাতে নিতে পুলিশই কলকাটি নাড়ছে। পুলিশের কারনেই আদমজীতে আবার পূর্বের ত্রাস সৃষ্টি হবে। ঘটবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।    


জানা গেছে, আদমজী আইলপাড়া এলাকার সন্ত্রাসী মানিক এর সেল্টারে সন্ত্রাসী পানি আক্তার ওরফে কিশোর গ্যাং গ্রুপ বেপোরোয়া হয়ে উঠছে। অপরাধ মুলক কর্মকান্ড করেছে। মাদক ব্যবসা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড করছে। গত ১ বছরের একাধিক মারামরি, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর করেছে। 


এ বাহিনী আদমজীতে পূর্বের মত ত্রাস সৃষ্টির করতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে মাদক সেবন করে আইলপাড়া রেললাইন এলাকায় থার্টি ফাস্টনাইট রাতে কাউন্সিলর মতির দুই গ্রুপের সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। 


এতে সন্ত্রাসী পানি আক্তার গ্রুপ ও ভাতিজা শাকিল গ্রুপর অংশ নেয়। এর আগে মদ, বিয়ার, ইয়াবা খেয়ে রামদা, চাপাটি, চাকু, লোহারপাইপ, হকিস্টিকসহ অর্ধশতাধিক জনের একটি কিশোর গ্যাং পানি আক্তারের নেতৃত্বে ভাতিজা শাকিল গ্রুপের উপর হামলা চালায়। 


এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে ঘন্টা খানেক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গোলা গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি দোকান। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় এলাকার নীরিহ যুবকদের। এতে ১০/১৫ জন আহত হয়। 


আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নুর মোহাম্মদ নামে এক জন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে নাই। উল্টো পানি আক্তারের বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের মামলা দিয়ে নুর মোহাম্মদের মামলার বাদিকে হয়রানি করা হচ্ছে। 


পুলিশের দ্বিমূখী মনভাবের কারনে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। তাছাড়া নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের চিহ্নিত এক সন্ত্রাসী পানি আকতার বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং তৈরি, ইভটিজিং, আদমজী ইপিজেডে অবৈধ ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেয়া, ৬নং ওয়ার্ডে অবৈধ ডিশব্যবসা নিয়ন্ত্রনসহ অসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে।  নাসিক প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর মতির অনুসারী হিসেবেই এলাকায় বেশি পরিচিত। সে মানিকের প্রধান ক্যাডার। 


ইপিজেড ব্যবসায়ীরা জানান, এ কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান পানি আকতার ইপিজেডের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করছে। তাই ইপিজেড ব্যবসা খাতকে সচল রাখতে সন্ত্রাসী পানি আক্তার যেনো ইপিজেড এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান।


এ পানি আকাক্তার গত বছরের ৩ জানুয়ারী সুমিলপাড়া মুনলাইটের পিছনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের একটি অফিস ভাংচুর করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এতে আগুনে পুড়ে যায় পুরো অফিস সহ অফিসে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি শামীম ওসমানের ছবি। 


গত বছরের জুন মাসে সুমিলপাড়া মুনলাইট রেললাইন চৌরাস্তা এলাকায় নারী পোশাক শ্রমিকদের উত্ত্যক্ত করে আসছিলো ক্যাডার পানি আক্তারের সহযোগীরা। 


প্রতিদিন সন্ধ্যায় পানি আক্তারের সহযোগী শামীম মেয়েদের উত্তক্ত করতো। এতে বাঁধা দেয় ছোট মিজান ও তার লোকজন। এরই জেরে পানি আক্তার ও তার ৫০-৬০ জন সহযোগীরা চাপাটি, রামদা, রড, লাঠিসোটা নিয়ে মিজান গ্রুপের উপর হামলা চালায়। এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ১০/১৫ জন আহত হয়।  এ ঘটনায় বেশকিছু জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে পানি আকতার। 


এলাকাবাসী আরো জানান, পানি আক্তার এলাকার ত্রাস। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে রয়েছে তাঁর বেশ সখ্যতা। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি জোরদার হলে এই বাহিনী থেকে তাঁদের  মুক্তি মিলবে। 
এই সন্ত্রাসীর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তাকে গ্রেফতার করার জন্য জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ও র‌্যাব-১১ এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
 

এই বিভাগের আরো খবর