বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জে বিমানের তেল চুরি, কোটি কোটি টাকা লোপাট

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সিদ্ধিরগঞ্জে সিন্ডিকেট করে চুরি করা হচ্ছে বিমানের জ্বালানি তেল। বাইরে বিক্রি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বিমানের তেল বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে। 

 

পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নীতিমালা অমান্য করে পদ্মা ও মেঘনা ডিপো এলাকায় গড়ে তুলা হয়েছে শতাধিক চোরাই তেলের আস্তানা। লোপাট হচ্ছে সরকারি কোটি কোটি টাকার জ্বালানি তেল।  

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এসও রোড এলাকায় মেঘনা পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ও বার্মাষ্ট্যান্ডে পদ্মা অয়েল কোম্পানী নামে দু’টি জ্বালানি তেলের ডিপোর রয়েছে। এই দু’টি কোম্পানীর নামমাত্র এজেন্টশিপ নিয়ে অনেকেই দাপটের সাথে চোরাই তেলের ব্যবসা চালাচ্ছে। 

 

বৈধ কাগজপত্র, জেলা প্রশাসকের অনাপত্তিপত্র, বিস্ফোরক সনদ, পরিবেশ ও ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্র ছাড়াই ডিপো এলাকায় গড়ে তুলা হয়েছে চোরাই তেলের এসব আস্তানা। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের নীতিমালা অনুযায়ী ডিপো এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো তেলের দোকান, এজেন্ট ও ডিলারশিপ কিংবা তেল মজুদ করা যাবে না। 

 

অথচ ওই নীতিমালার তোয়াক্কা না করে স্থানীয় কতিপয় সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক দলের নেতা, ডিপো কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই গড়ে তুলেছে দোকান। তেল ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করতে চোর সিন্টিকেড গড়ে তুলেছে বিভিন্ন নামে একাধিক সংগঠন। 

 

চক্রটি বিমানের তেল চুরির পাশাপাশি অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস চুরি করছে। রাতের আধাঁরে ডিপো সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙর করে রাখা জাহাজ থেকেও তেল চুরির অভিযোগ রয়েছে। দাম কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি চুরি হচ্ছে বিমানের তেল। 

 

রঙিন কেরোসিনের সঙ্গে এক প্রকার রাসায়নিক সাদা পাউডার মিশিয়ে রঙ সাদা করে অকটেন, পেট্রোল এবং  জেট-ওয়ানের সঙ্গে মিশিয়ে পেট্রোলপাম্পসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে ভেজাল তেল। যা ব্যবহার করে নষ্ট হচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন।

 

চোরাই তেল ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, খুন ও অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটছে। বিভিন্ন সময় র‌্যাব চোরাই তেলসহ একাধিক চোরকে গ্রেফতার করেছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তবু বন্ধ হচ্ছে না তেল চুরি। 

 

ডিপো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা ডিপো থেকে গড়ে দৈনিক ২০ লক্ষাধিক লিটার আর মেঘনা ডিপো থেকে ১৪ লক্ষাধিক লিটার তেল সরবরাহ করা হয়ে থাকে। দু’টি ডিপো থেকে তেল বহন করার জন্য কমপক্ষে আড়াই শতাধিক ট্যাংকলরী রয়েছে। 

 

প্রতিটি লরি থেকে দৈনিক সর্বনিন্ম ৮০ লিটার করে তেল চুরি করা হয়। পরিসংখ্যান মতে দৈনিক তেল চুরি হচ্ছে কমপক্ষে ২০ হাজার লিটার। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ১ লাখ ২০ হাজার, মাসে ৪ লাখ ৮০ হাজার লিটার। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৪ কোটি টাকা। পদ্মা ডিপো থেকে ১২৭ টি ট্যাঙ্কলরির মাধ্যমে বিমানের তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। 


ডিপো থেকে তেল লোড করে বের হওয়ার পর প্রতিটি ট্যাংকলরী থেকে সর্বনিন্ম ৮০ লিটার তেল চুরি করা হয়। সে হিসেবে দৈনিক ১০ হাজার ১৬০ লিটার, যা মাসে দাঁড়ায় ৪০ হাজার ৬৪০ লিটার। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে আড়াই কোটি টাকা। বছর বছর ধরেই চলছে তেল চুরির এই মহোৎসব। এতে লোপাট হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।

 

তেল চুরির কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্যাংকলরী চালক জানায়, ঢাকার কুর্মিটোলা ডিপো কর্মকর্তাদেরকে প্রতি গাড়ি প্রতি ঘুষ দিতে হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এই টাকা না দিলে গাড়িতে তেল ঠিক থাকলেও পরিমাপে কম দেখানো হয়। 

 

আর টাকা দিলে তেল কম থাকলেও পরিমাপ সঠিক দেখিয়ে চালান বুঝে রাখা হয়। কুর্মিটোলা ডিপোতে টাকা না দিলে পরিমাপে কম দেখানোর ফলে বাধ্য হয়ে তেল চুরি করতে হচ্ছে।


এ বিষয়ে পদ্মা ডিপোর ম্যানেজার আসিফ মালিক ও মেঘনা ডিপোর ম্যানেজার লুৎফর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দুইজনই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।  


সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক জানান, তেল চুরির সাথে জড়িতদের তালিকা করা হচ্ছে। অচিরেই ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর