শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জে আওয়ামীলীগের সম্মেলন ঘিরে পদ নিয়ে প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪): গত দু’মাস ধরেই কাউন্সিল চলছে থানা আওয়ামী লীগে। রূপগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে আড়াইহাজার, বন্দর পর্যন্ত সম্মেলনে নেতা নির্বাচিত হয়েছে। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগেও নেতা নির্বাচনে কাউন্সিলের আগেই কারা সভাপতি সেক্রেটারি হচ্ছেন তা জেনে ফেলায় ক্ষোভ তৃণমূলে।

 

থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন না প্রেসক্রিপশনে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন তৈরি হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগেও। পুরোনোরাই থাকছে নাকি নতুনরাও সুযোগ পাবে নেতৃত্বে আসার সেটি নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। দীর্ঘ দুই যুগ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগে প্রবীণ দুই নেতাই দখল করে আছেন পদ।

 

এবার কি সেটির ব্যতিক্রম হবে না কি প্রেসক্রিপশনের পথই বেঁছে নেওয়া হবে এটি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। পুরোনোদেরই  সভাপতি ও সেক্রেটারির পদে রাখতে ইতিমধ্যেই কূট-কৌশলের পথ তৈরি করা হয়ে গেছে বলে মত নবীনদের।

 

সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন নাকি প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমেই নেতা চাপিয়ে দেয়া কর্মীদের ঘাড়ে সেটি নিয়েও চলছে গবেষণা। নতুন নেতৃত্ব তৈরির ইচ্ছা থাকলে এবং দলে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করার বাসনা থাকলে এবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগে ব্যাপক রদবদল হওয়ার আশঙ্কা করছেন তৃণমূল।

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, মহানগরের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ড এরপরেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দুগ্রুপেরই টানাপোড়েন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে।

 

একটানা ২৬ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মজিবুর রহমান। ২০০৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ইয়াসিন মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এর পর গত ১৫ বছর ধরে সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক ও যুগ্ম সম্পাদকসহ অধিকাংশ বড় পদগুলো ঠিক রেখে কিছু রদবদল আর মৃত্যুবরণ করা নেতাদের শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদপুষ্ট লোক দিয়ে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।

তবে আরেকটি পক্ষ বলছে মজিবুর রহমান ও ইয়াসিন মিয়ার হাতেই নির্ভার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ। এবার সম্মেলনে তারাই নির্বাচিত হলে ঢেলে সাজানো হবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ।

 

সূত্র জানিয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মতিন মাষ্টার, বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া সাবেক পৌর প্রশাসক মতিন প্রধান, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সাদেকুর রহমান সাদেক, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মজিবর রহমান মন্ডলসহ আরো কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী।

 

সাধারণ সম্পাদক পদে কমিটিতে ঢুকতে আগ্রহী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহবায়ক ও  ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল হোসেন, নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী হোসেন আলা, ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলসহ আরো বেশ কয়েকজন।

 

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতিকে সভাপতি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হলেও তিনি সেক্রেটারি পদ পেলেও দ্বিমত নেই তার কর্মীদের। 

 

থানা আওয়ামী লীগের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে মূলত সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই বর্তমান সভাপতি, সেক্রেটারি এবং আগ্রহী প্রার্থীদের বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছে একটি চক্র।

 

একদিকে যেমন বর্তমান কমিটির নেতাদের দূর্বলতা, অপকর্মসহ নানা অভিযোগ তুলে নবীনদের পক্ষ থেকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, অপরদিকে সভাপতির পক্ষে আরেকটি পক্ষ বর্তমান সেক্রেটারি ইয়াসিন মিয়াকে বিতর্কিত করে সেক্রেটারি পদে নতুন কাউকে নিয়ে আসার জোর চেষ্টা করছেন।

 

স্থানীয় এমপিকেও নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে নতুন নেতৃত্বের কি প্রয়োজন। একাজে মৌন সম্মতি আছে বর্তমান সভাপতির বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

 

সম্প্রতি একটি মেজবান অনুষ্ঠান আয়োজনকে ঘিরে বর্তমান সেক্রেটারি ইয়াসিন মিয়াকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে মূলত এই সম্মেলনকে ঘিরে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

 

সূত্র জানায়, সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সাংসদ শামীম ওসমানও গিয়েছিলেন। এয়াড়া অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও ছিলেন। তবে আলোচনা যতই হয়েছে তা শুধু ইয়াসিন মিয়াকে নিয়েই। এরপেছনে অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের কারো ইন্ধন থাকতে পারে বলে মত ইয়াসিন সমর্থকদের।

 

তবে বর্তমান সভাপতি মজিবুর রহমান জানান, সম্মেলনের মাধ্যমেই কমিটি হবে। যারা যোগ্য তারাই কমিটিতে স্থান পাবে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরে তারিখ নির্ধারণ করা হবে। শুধু সুদিনেই নয় দুর্দিনেও বহু ত্যাগ স্বীকার করে দলকে আগলে রেখেছি। বহুবার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছি। কিন্তু নেতাকর্মীদের অনুরোধে ছাড়তে পারিনি।

 

সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া বলেন, ত্যাগী ও আসল নেতা বাঁছাই করতে চাইলে নেতা নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। আমরা চাচ্ছি সম্মেলন হোক। কিন্তু ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিল এখনো হয়নি বিধায় সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা যাচ্ছেনা। কাউন্সিলে যদি নতুন কাউকে নেতা হিসেবে বেঁছে নেয় তাতে আপত্তির কি থাকতে পারে। 

 

সাবেক পৌর প্রশাস মতিন প্রধান বলেন, আমি একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ। এমপি শামীম ওসমানের কথার বাইরে আমি যাবোনা। আওয়ামী লীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছি। পরে অভিমান করে চলে গিয়েছিলাম। এখন আবার নিজের ঘরে ফিরে এসেছি। এমপি সাহেব যা ভালো মনে করবেন, তাই মেনে নেবো।

 

সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগের আহবায়ক ও নাসিক ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বলেন, এতোদিন যুবলীগের সাথে জড়িত ছিলাম। এখন ইচ্ছা থানা ও মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হই। নেতাকর্মীরা যদি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদেও আমাকে চায় তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করাই শ্রেয়। 

 

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, খুব শীঘ্রই সম্মেলনের তারিখ দেয়া হবে। দলের ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে এবং বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে প্রবীণ-নবীনদের সমন্বয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য শক্তিশালী কমিটি উপহার দেয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর