বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সাপের ফণার মত দেখতে ফুলটির নাম নাগলিঙ্গম

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

জহিরুল হক (যুগের চিন্তা ২৪) : নাগলিঙ্গম। নামটা শুনেই মাথায় আসতে পারে সাপ, নাগ-নাগিনী জাতীয় কোনো ছবি বা বাংলা সিনেমার কোনো দৃশ্য।

 

তবে আপনার চিন্তুায় ভাটা পড়বে নাগলিঙ্গমের প্রত্যক্ষদর্শনেই এর মাতাল করা সুগন্ধ আর লাল রঙের গোল গোল পাপড়ির সাথে হলুদ রঙের পরাগ রেণু দেখে। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ফণা তোলা সাপ। ফুলগুলোও বেশ বড় বড়। এক কথায় দেখতে অসাধারণ!


বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে রেলওয়ে ষ্টেশন মসজিদের পাশে দেখা মেলে এ গাছটির। সুমিষ্টি গন্ধযুক্ত নাগলিঙ্গম ফুলটি দেখতে এতো  সুন্দর যেকোন মানুষে প্রথম দেখলেই এর প্রেমে পড়ে যাবেন। এ তিনটি ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম। 


আর নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যও সেরা। কী দিন, কী রাত, নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণ কাছে টানবেই। বিরল প্রজাতির এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। এ ফুল দিয়ে তৈরি হয় আতর।


নাগালিঙ্গেমের ফল হুবহু কামানের গোলার মতো হওয়ায় এ গাছ ইংরেজদের কাছে ক্যানন বল ট্রি নামে পরিচিত। নাগলিঙ্গম ফল হাতির প্রিয় খাবার, এ জন্য কোথাও এ উদ্ভিদটি হাতির জোলাপ গাছ নামেও পরিচিত। 


নাগলিঙ্গম (Cannonball tree) দীর্ঘ চিরসবুজ বৃক্ষ এবং এ বৃক্ষ রাজ্যে আভিজাত্যের প্রতীক। এর বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis, hv Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। এ বৃক্ষ ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এ বৃক্ষের কান্ড সরল, উন্নত এবং উপরের দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। 


বৃক্ষের বাকল বাদামী ধুসর, অমসৃণ, রুক্ষ; পাতা গুচ্ছাকৃতির এবং ৮ থেকে ৩১ সে.মি পর্যন্ত দীর্ঘ। পাতা লম্বায় ৫৭ সে.মি পর্যন্ত হতে পারে। পাতার রং সবুজ, প্রায় কালো, কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। গ্রীষ্মকালে এদের পত্র মোচন হয়। এ বৃক্ষ বহু শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট এবং বড় বড় ডালে ফুলের মঞ্জুরি ধরে। কখনো কখনো সরা বৃক্ষের কান্ড থেকেই ফুল বের হয়। 


ফুলগুলো কমলা,উজ্জ্বল লাল গোলাপি রঙের, ঊর্ধ্বমুখী, ছয়টি পাপড়িযুক্ত এবং তিন মিটার দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ফুটে থাকে। একটি বৃক্ষে প্রায় এক হাজারটি ফুল ধরতে পারে। ফুল  দৈর্ঘ্যে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাপড়ি গোলাকৃতি, বাঁকানো, মাংসল এবং ভেতর ও বাইরে যথাক্রমে গাঢ় গোলাপী ও পান্ডুর হলুদ। 


নাগলিঙ্গমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পরাগচক্র সাপের ফণারমত বাঁকানো এবং উদ্যত ভঙ্গি। রাতের বেলায় ফুল থেকে তীব্র সুগন্ধ বের হয় যা সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। সারা গ্রীষ্মকাল ধরেই নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে। ফল ক্যানন বলের মত  দীর্ঘ, গোলাকার, ভারি এবং ২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। নয় মাসের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়।

 

ফল মাটিতে পড়লে মৃদু শব্দে ফল ফেটে যায়, এবং বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধের সৃষ্টি করে। ফলগুলো কখনো কখনো পরিপক্ক হতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ফলগুলো গাছের মত শক্ত। 


প্রতিটি ফল থেকে প্রায় ৬৫টি বীজ পাওয়া যায়। বীজগুলোতে আলাদা আলাদা ফুলের মত আস্তরণ থাকে যা এদেরকে প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। পঁচা ফলের গন্ধ অত্যন্ত উগ্র। বীজ থেকে সহজেই এ বৃক্ষেও চারা জন্মে। এই গাছ বাংলাদেশসহ ভারত,থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মে। নাগলিঙ্গম শ্রীলঙ্কার জাতীয় ফুল। 


এ গাছের ফুল, পাতা ও বাকল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই গাছের পাতার রস খেলে পেটের পীড়া দূর হয়।  নাগলিঙ্গম পাতার রস করে ব্রণে উপর লাগালে ব্রণ খুব দ্রুত ভালো হয়।


ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। নাগলিঙ্গম গাছের বাকল সিদ্ধ করে খেলে অর্শ ভালো হয়। নাগলিঙ্গম পাতা পিষে প্রলেপ দিলে বাত ব্যথা ভালো হয়। ডায়রিয়া হলে এই গাছের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
 

এই বিভাগের আরো খবর