শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সমাধান হচ্ছে ইউনিকোডে যুক্তাক্ষরের

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) :  ইউনিকোডে বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মানা নিয়ে আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা- আইক্যান এর পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ।


ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে বুধবার স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আইক্যান এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলা ডোমেইন নাম ও ইউনিকোডের যুক্তাক্ষর লেখা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছে আইক্যান।
 ফলে ইন্টারনেট ডোমেইনে যে সংকটটি ছিল তার দূর হওয়ার পথে বিরাট প্রতিবন্ধকতা দূর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।


বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আইক্যান কর্তৃপক্ষের কাছে ইউনিকোডে বাংলা ভাষার সমস্যা তুলে ধরে বলেন, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশিরা বুকের রক্ত দিয়েছে। বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশেও বাংলাদেশের অবদানই সবচেয়ে বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্য ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনেক ক্ষেত্রেই গৌণভাবে দেখেছে। ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। 


‘অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর মতো করে দেখা হয়েছে। বাংলা যে স্বতন্ত্র ভাষা এবং তার লিপির ব্যবহারও যে স্বতন্ত্র সেটি মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের ভাষাবিজ্ঞানীসহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে বাংলা ইউনিকোড লিপি উন্নয়নে বিবেচনায় রাখতে হবে।’


 তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারকে যুগোপযোগী ও সহজসাধ্য করতে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে সরকার ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষা চর্চা ও গবেষণা, বাংলা ভাষার উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এর প্রয়োগ করা আলাদা কোনো এজেন্ডা নয়, এর সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক।


মন্ত্রী বাংলা ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বাংলা ভাষায় যখন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে কোনো মতামত না নেওয়ায় বাংলা ইউনিকোডে ত্রুটি রয়ে গেছে। বাংলা ভাষায় অস্তিত্ব নেই এমন অনেক অক্ষর ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।


বৈঠকে আইক্যান প্রেসিডেন্ট ও সিইও গোরান মারবাই আইক্যান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। আইক্যান চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ডেভিড কনার্ডসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


এর আগে থাইল্যান্ডে ১৯৮৭ সালের অনুষ্ঠিত কনসোর্টিয়ামের সভায় মোস্তাফা জব্বার বাংলা ভাষার বিদ্যমান অক্ষরগুলো অন্তর্ভুক্ত করে ত্রুটিি দূর করার দাবি জানান।


মন্ত্রী জানান, ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। আমরা এই কনসোর্টিয়ামে ঢুকেছি ২০১০ সালে। এই ২৩ বছরে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ফলে বাংলার যেসব ইস্যুগুলো ছিল তা সিরিয়াসলি তুলে ধরা হয়নি।


তিনি বলেন, বাংলায় ‘ড়’, ‘ঢ়’, ‘য়’ এবং ‘ৎ’ বর্ণ আছে। কিন্তু হিন্দিতে নেই। যেহেতু আমরা ছিলাম না, সেই কারণে অন্য দেশের মতামত অনুসারে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা হয়েছে।


প্রতিবেশী দেশ ভারতে দেবনাগরীতে নোক্তা বলে একটা জিনিস আছে, এই নোক্তা তাদের নানা কাজে লাগে, শব্দের নিচে ব্যবহৃত হয়। আমারা নোক্তার যুগে থেকে সেই বিদ্যাসাগরের আমল হতে বেরিয়ে এসেছি এবং আমাদের ভাষায় নতুন চারটি অক্ষর যোগ করেছি।


মন্ত্রী বলেন, দেবনাগরী যেহেতু ফলো করা হয়েছে তাই আমাদের দাঁড়ি, ডাবল দাঁড়ি তাতে রয়ে গেছে। আর আমাদের ‘ড়’, ‘ঢ়’, ‘য়’ লিখতে ওরা নোকতা ব্যবহার করে। আমাদের যে স্বরচিহ্নগুলো এগুলোকে আমরা কার চিহ্ন বলি, আর ওরা বলে মাত্রা।


তিনি বলেন, আমরা আমাদের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু ইউনিকোডে বাংলার এই সমস্যার কারণে আমরা যখন ডটবাংলায় বাংলা ডোমেইনে লিখতে যাচ্ছি তখন বাংলার ‘ড়’, ‘ঢ়’, ‘য়’ এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দু’টি করে কোড দিতে হয়। নোক্তা একটা আর ‘ড’ একটা, নোক্তা একটা ‘ঢ’ একটা-এমন করে। এটির পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনেও বাংলায় তথ্য খুঁজতেও ঝামেলা তৈরি করছে।

এই বিভাগের আরো খবর