বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সপ্তাহ জুড়ে পেঁয়াজের ঝাঁজে পুড়েছে মানুষ, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সপ্তাহ জুড়ে পেঁয়াজের বাজারে চলছে অস্থিরতা। সকালে দাম কমে তো বিকালে বাড়ে আবার সন্ধ্যায় কমে তো পরের দিন সকালে বেড়ে যাচ্ছে।

 

‘এভাবে পেঁয়াজের এখন দাম যেনো সাপ-লুডু খেলার মতো। এই মই বেয়ে দাম উপরে উঠলো তো আবার সাপের মুখে পরে নিচে নেমে গেলো।’ ঠিক এমনটাই মন্তব্য করেছেন শহরের মিশন পাড়া থেকে দিগুবাবুর বাজারে আসা মজিবুর রহমান নামের একজন।

 

এ সময় এসে যোগ দিলেন জামান নামের একজন। তিনি বললেন, পেঁয়াজের দাম মই বেয়ে উপরে ওঠে ঠিকই কিন্তু বড় সাপে খায় না, খায় ছোট সাপে। দাম যেভাবে বেড়েছে সেভাবে কমেনা। আর এখন তো আকাশ ছোঁয়া দাম।

 

বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা । আর বিদেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকার মধ্যে। নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা দরে।

 

তাছাড়া বাজারে এখন পাওয়া যাচ্ছে চায়না থেকে আমদানীকৃত সবজি পেয়াজ নামে পরিচিত এক ধরনের বড় আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে।

 

পেঁয়াজের সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম এখন অনেক ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। শীতের সবজি, চাল, আটা ময়দা এগুলোর দামও অস্বাভাবিভাবে বেড়েছে। শহরের দ্বিগুবাবুর বাজার, কালীর বাজার, বাবুরআইল বাজার, খানপুর বৌ বাজারসহ কিছু বাজার ঘুরে শীতের সবজিরসহ নিত্য প্রয়েজনীয় জিনিসের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।  

 

বাজারে দেখা যায, ফুলকপি ও বাাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস ৫০-৬০ টাকা করে । লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতি ৫০-৮০ টাকা পিস। শসা, গাজর, টমেটো প্রতি কেজি  বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা।

 

সবজির পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, আটা ও ময়দা ও ভোজ্য তেলের দামও বাড়ার পরে আর কমেনি। ডালের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা করে, আটার দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২-৩ টাকা করে, ময়দার দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৬-৮ টাকা করে এবং ভোজ্য তেরের দাম বেড়েছে প্রতি লিটারে ২-৩ টাকা করে। বাজারে এখন প্রতি কেজি ভালে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা মিনিকেট ৪৫-৫০ টাকা এবং মোটা চাল ৩৫-৪০ টাকা।

 

গত বছরের এ সময়ের তুলনায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেশি বাড়তি। বাজারে ক্রেতাদে কোন স্বস্তি নেই।শহরের  দেওভোগ পানির ট্যাংকি এলাকা থেকে বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী লিটন মিয়া জানান, পেঁয়াজ, আলু, চাল এবং সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ক্রমে বেড়েই চলছে, কমার কোনো লক্ষণ নেই। চাকরি করে মাসে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বাজারে ব্যয় বেইে চলছে কিন্তু মাস শেষে বেতন একই রকম আছে।

 

বাজারে দেখা গেছে পেঁপে, কাঁচকলা, কুমরা, লাল শাকসহ সব সময় পাওয় যায় এমন কিছু শাক-সবজির দামও চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ১৫-২০ টাকা, করল্লা ও কাকরোল প্রতি কেজি ৬০-৮০ টাকা, পোটল প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, বটবটি প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা, কুমরা প্রতি পিস আকার ভেদে ৫০-৮০ টাকা, লাল শাক ও পালং শাক প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা এবং ডাটা প্রতি আঁটি ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

তবে সবজির দাম বাড়লেও কমেছে কাঁচা মরিচের ঝাল ও ধনে পাতার ঘ্রাণ। প্রতি কেজি কাঁচা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে। এবং ধনে পাতার কেজি পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-১০০ টাকা কেজি দরে।

 

বাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে ডিম, মাংস ও মাছের দাম। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৬ টাকা হালি দরে। শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৩০-৪৫০ টাকা। প্রতিটি হাঁস আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা দরে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮০০-১০০০ টাকা।

 

শহরের ৫নং মাছ ঘাটের বাজারসহ দিগুবাবুর বাজার, কালির বাজার, বাবুরাইল বউ বাজার এবং খানপুর বউ বাজারসহ বাজারগুলেতে প্রচুর মাছের সরবরাহ রয়েছে। আকার ও বাজারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৬৫০ টাকা, কাতলা ও মৃগেল মাছ ৩০০-৬০০টাকা, পাঙ্গাস মাছ ১১০-১৪০টাকা, কই মাছ ১৪০-১৮০, তেলাপিয়া মাছ ১৩০-১৭০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা।

 

বর্তমানে বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ দেখা যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে।প্রতিটি ১কেজি ওজনের কম-বেশি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে। তবে হালিতেও বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। আকারভেদে ১ হালি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরো খবর