শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ম আছে সেবা নেই

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র থেকে শ্রমিকদের নানান বিভাগে বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করার নিয়ম রয়েছে। শ্রমিকদের চিকিৎসা শাখা, পরিবার পরিকল্পনা শাখা, সাধারন শাখায় সেবা প্রদান করা হয়।


এছাড়াও বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে একাধিক সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও চাষাঢ়ার বাগে জান্নাত মসজিদ এলাকায় অবস্থিত শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে শ্রমিকরা পর্যাপ্ত সেবা পায় না। সেবা প্রদানের তালিকা থাকলেও কাঙ্খিত সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেই।


শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা প্রদানের তালিকা অনুযায়ী, চিকিৎসা শাখায় বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র প্রদান, বিনামূল্যে সরবরাহকৃত প্রাথমিক ঔষধপত্র বিতরণসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করা হয়। পরিবার পরিকল্পনা শাখায় বিনামূল্যে পরিবার পরিকল্পনার সকল সেবা সেবা প্রদান ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক পরামর্শসহ পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে।


সাধারণ শাখায় বিনামূল্যে লাইব্রেরী সংক্রান্ত সেবা প্রদান, পাঠাগারে রক্ষিত পুস্তকাদি ও দৈনিক পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থা থাকার কথা। একই সাথে শ্রমিকদের খেলাধুলার সহ বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা থাকার কথা।


 লেখা আছে শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র কর্তৃক সপ্তাহব্যাপী শ্রমিক প্রশিক্ষণ প্রদান ও সনদ প্রদান করা হয়। শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিকের আবাসিক এলাকা সমূহ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য সচেতনতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়।


তবে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে পুরো বিপরীত চিত্র। চিকিৎসা সেবার ভিন্ন এক রূপ দেখা যায়। শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের বর্তমান ব্যবস্থায় শ্রমিকদের বিভিন্ন সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সকল সেবা প্রদান করা হচ্ছে না। শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে কর্ম পদের সংখ্যা ১৬ জন থাকলেও এখন ৯ জন আছেন।


এই ৯ জনের মধ্যেও অনেকেই অনুপস্থিত। একদিকে নেই প্রয়োজনীয় লোকবল। অন্যদিকে নেই পর্যাপ্ত সেবা ব্যবস্থা। ভবনটির ভিতরে ও বাহিরে পানি জমে আছে। একাধিক কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙা। ভবনের ছাদের আস্তর খসে রড বেরিয়ে আছে। ভবনের উত্তরদিকে পানি জমে ডোবা তৈরী হয়েছে। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কোন পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। কুকুর সাপ সহ বিভিন্ন প্রাণীর বসবাসের স্থান হয়েছে।


ভবনের দুইটি কক্ষ ব্যতিত সবগুলো কক্ষই ছিল বন্ধ। পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক ডাক্তার সহ কোন ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়নি। উপস্থিত রয়েছে শ্রম কল্যাণ সংগঠক কাজী নাজরীন নাহার ও ফার্মাসিস্ট মো. নাইদুল ইসলাম ছিলেন। তারাই কোন রোগী আসলে প্রাথমিক সেবা দেন। এছাড়া সাধারণ শাখার কোন সেবা ব্যবস্থা নেই।


নাম প্রকাশের শর্তে একজন কর্মচারী জানান, শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে মাঝে মধ্যে রোগী আসলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা সহ ঔষধপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা কম দেওয়া হয়। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসার বাহিরে অন্যান্য সেবাগুলো পায় না বলে জানা যায়। শ্রমিকদের তুলনায় আশেপাশের এলাকার মানুষই বেশি এসে সেবা গ্রহণ করে।


জানা যায়, শ্রম অধিদফতর এবং এএফসি হেলথ লিমিডেট ও ফর্টিস হেলথকেয়ারের যৌথ উদ্যোগে চাষাঢ়ার শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের ১০১ শতাংশ জমিতে হাসপাতাল নির্মাণের একটি প্রকল্প করা হয়েছিল। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ শয্যা হাসপাতাল তৈরীর প্রকল্প করা হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর পার হলেও হাসপাতাল এখন পর্যন্ত তৈরী হয়নি।    


বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মো. খোরশেদুল হক ভূঞা বলেন,  ‘দুই-আড়াই বছর আগে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় এখানে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ শয্যা হাসপাতাল হওয়ার জন্য একটি টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি আর্থিক সংকটের কারণে এখনো শুরু হয়নি। এই জন্য আমাদের এইখানে কোন ধরণের মেরামত কিংবা অন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।


এখন আর এখানে এই প্রকল্প হবে বলে আমার মনে হয় না। তবে শীঘ্রই হয়ত নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের সব ধরনের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের মেডিকেল অফিসার একজন ছুটিতে আছেন। তিনি আগামী মাসে আসলে আমরা চিকিৎসা সেবা ভালোভাবে দিতে পারব। বর্তমান পরিবশের কারণেই সকল সেবা পুরোপুরিভাবে  দেওয়া যায় না। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’  

 

এই বিভাগের আরো খবর