শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

‘শৈবাল দীঘিরে বলে উঁচু করি শির, লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির’

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘মেয়র আইভীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে না হলে তাকে উৎখাতের জন্য যা যা করার দরকার তাই করবো’ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাবু চন্দনশীল এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এক বিবৃতিতে বলেছেন, মেয়রকে নিয়ে তাদের সমালোচনা অনেকটা এরকম ‘শৈবাল দীঘিরে বলে উঁচু করি শির, লিখে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির’।

 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০০১ সালের ১৬ জুন বোমা হামলার ঘটনার ১ বছর পর শামীম ওসমান দেশত্যাগ করেন। বোমা হামলার জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় এখানে মাদকসেবীরা মাদক সেবন করতো। বিএনপির শাসনামলে এখানে মানুষ ময়লাস্তুপ ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। বিএনপির আমলেই ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পৌরসভায় অর্থায়নে ২ লাখ টাকা এবং তাঁর বেতনের টাকা দিয়ে চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন। এছাড়া বোম হামলায় নিহত কাশীপুরের ভাসানীর ভাতিজা, সবুজের ভাগিনা, আক্তারের স্ত্রী, মশুর স্ত্রীকে মেয়রের কোটা থেকে দোকান বরাদ্দ এবং একাধিক পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। যখন বোমা হামলার জায়গাটি ময়লার ভাগাড়ে ছিলো তখন আজকে যারা মায়াকান্না করছেন তারা কোথায় ছিলেন।  

 

জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, মেয়র আইভী প্রকৃতপক্ষে মানুষের এবং দলের প্রকৃত রাজনীতি করেন বিধায়ই বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে এখানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছেন। বর্তমানে এই জায়গাটি যারা ময়লা আবর্জনা ফেলছেন সেটি রোধ করতে ওই জায়গার পাশেই একটি ডাস্টবিন করে দেয়া হয়েছে। তারপরেও এটি নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি করে তারা নিজেদের নোংরা মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন। 

 

জাহাঙ্গীর বলেন,  বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে আন্তরিকতা থেকেই স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছে মেয়র আইভী। স্মৃতিস্মম্ভেও পাশেই রয়েছে আরেকটি ফলক। যাতে লক্ষ করলে দেখা যাবে তাতে লেখা ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো, একটি পলাশ ফুলের মালা, আমি জনম জনম রাখবো ধরে, ভাই হারানোর জ্বালা’। বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে ২০০৭ সালের ১৬ জুন পলাশ ও কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপ করেন মেয়র আইভী। তখন কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিলোনা। 

 

তিনি বলেন, এই স্মৃতিস্তম্ভটি মেয়র আইভীই বানিয়েছেন। শামীম ওসমান এতো বড় বড় কথা বলেন ওই স্মৃতিস্তম্ভ তিনি বানানওনি এবং কোন শহীদ পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবরও নেননি। 

 

চন্দনশীলকে উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, ‘মেয়র আইভী ভেসে আসেন নাই। আইভীকে উৎখাত করা অতো সহজনা। মুখ দিয়ে অনেক কথা অনেকেই আওড়ান। আইভীর কিছু হলে আমরাও দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত আছি।’ 

 

বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গ টেনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এসপি হারুনকে ধন্যবাদ জানাই। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি আমরা হকারদেরকে বুঝিয়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত থেকে সরাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হকাররা একজনের উস্কানিতে মেয়রসহ আমাদের উপর আক্রমন করেছিলো। অনেক মানুষ সেদিন আহত হয়েছিলো। আমরা নিরীহ সাধারণ মানুষকে নিয়ে সেটি করতে চেয়েছিলাম বিধায়ই তারা এমনটা করতে পেরেছিলো। কিন্তু আজ এসপি সাহেব নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। আজ সেই গোষ্ঠির বাহুবল কোথায়, কোথায় গেলো তাদের সেই ক্ষমতা। এসপি সাহেবের এমন উদ্যেগকে জেলা আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে স্বাগত জানাই। 

 

উল্লেখ্য, গতকাল চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের পাশে রাখা ডাস্টবিন দেখে মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহসভাপতি বাবু চন্দন শীল বলেন, মেয়র আইভীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে না হলে তাকে উৎখাতের জন্য যা যা করার দরকার তাই করবো। 

 

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১৬ জুন চাষাঢ়া শহীদ মিনার ঘেঁষা আওয়ামী লীগ অফিসে তৎকালীন এমপি শামীম ওসমানের গণসংযোগ কর্মসূচিতে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িত নেতৃবৃন্দরা জড়ো হতে থাকে। রাত ৭টার মধ্যে পুরো অফিস লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। রাত পৌনে ৯ টায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোমাটি। হামলায় শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। সেখানে দুই পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন চন্দন শীল।
 

এই বিভাগের আরো খবর