শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শেখ রাসেল পার্কের কাজ নিয়ে টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সামনের বছরই উদ্বোধন হওয়ার কথা দেওভোগের শেখ রাসেল নগর পার্কের। তবে রেলওয়ের সাথে পার্কের জায়গা নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দ্বৈরথে শেখ রাসেল পার্কের কাজ শেষ করা নিয়ে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।

তবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা শেখ রাসেল পার্কের কাজ শেষমুহুর্ত্বে এসে বাধাগ্রস্ত করায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে নগরীর বাসিন্দা ও নানা সংগঠন। রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নগরের দেওভোগে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্মাণাধীন শেখ রাসেল পার্কের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পার্কটি পরিদর্শন করে।

পার্কটি পরিদর্শন কালে রেলওয়ের জমিতে পার্কটি নির্মাণাধীন বিধায় পার্কের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেন। এসময় পার্কে কর্মরত ২১ জন শ্রমিকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ২জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেখে ১৯ জনকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (কমলাপুর স্টেশন) উপ পরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আটককৃতরা হলেন মুকুল (৩২) ও মিঠু (২২)।

একদিকে পার্কটির নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করেছে অন্যদিকে শেখ রাসেল পার্কের কাজ দ্রুত সম্পন্ন ও পার্ক নির্মাণে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠন। একই দিন দুপুর ৩ টায় শেখ রাসেল প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করা হয়।

তবে সিটি করপোরেশনে একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ রাসেল পার্কের সবকিছু নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তারিখের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সভায় শেখ রাসেল পার্কের নামকরণের অনুমতি প্রদান করা হয়।

এরআগে জায়গা সম্পর্কিত সকল বিষয়ে ট্রাস্ট এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র যথাযথভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, পার্ক সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে রেলমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দেয়া হয়ে থাকতে পারে।  


অল্পকদিনের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জবাসীর যান্ত্রিক জীবনে শেখ রাসেল পার্ক প্রশান্তি ও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিশুদ্ধ বাতাস ও সবুজ প্রাণের টানে সকালে বিকালে নগরবাসী ছুটে আসে এখানে। তবে হঠাৎ রেলওয়ে মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে নগরবাসীর কাছে শেখ রাসেল পার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে। রেলওয়ে মন্ত্রীর সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে নারায়ণঞ্জবাসী সংগঠন।


নারায়ণগঞ্জে ডাবল রেললাইনের কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফে রাসেল পার্ক সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশনও সরকারের, রেলওয়েও সরকারের। শেখ রাসেল পার্কের সম্পত্তির মালিক রেলওয়ে। রেলওয়ের জায়গা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয় তাহলে যে সকল নিয়ম-নীতি রয়েছে সেই সকল কার্যক্রম মেনেই নিতে হবে। রেলওয়ের জায়গা রেলওয়ের কাছে রাখার জন্য যে ব্যবস্থা করা দরকার আমরা করবো। কিন্তু গায়ের জোরে কিছু করা যাবেনা।


তিনি আরো বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই। আর এ উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমরা রেলওয়ের জায়গার ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করবো। পরবর্তীতে আমরা সময় দিয়ে রেলওয়ের উন্নয়ন প্রকল্প শেষে যে সকল জায়গা অতিরিক্ত থাকবে তা যথাযথ ব্যস্থাপনার মধ্যে দিয়ে লিজ দিয়ে দিব।


অপরদিকে আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনেরর মানববন্ধনে সভাপতি নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক বছর যাবৎ জিমখানা এলাকায় একটি পার্ক , লেক ও ঈদগাহ ময়দানের প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশন মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের স্বপ্নের পার্ক লেক বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে।

এজন্য মেয়রকে সাধুবাদ, তিনি অপরাধের আখড়ায় পরিচিত জিমখানা বস্তির জায়গায় সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে শেখ রাসেল পার্ক ও লেক নির্মান করেছেন। মেয়রের কাছে অনুরোধ রাখছি দ্রুত পার্কের কাজ শেষ করে জন সাধারনের বিনোদনের  জন্য খুলে দেওয়া হোক। কোন অশুভ শক্তি এখানে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। যেকোন  মূল্যে এই পার্ক আমরা রক্ষা করব।

পার্কটি নির্মানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদেরকে প্রতিরোধ করতেই এই মানববন্ধন। কুচক্রিমহল পার্ক নির্মানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসীরা এই পার্কের পক্ষে আছি। অপশক্তিকারীরা নারায়ণগঞ্জের হাতির ঝিলকে মতিঝিল করার পায়তারা করছে। এই জমিতে আগে কুকর্ম হতো এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য পার্ক হচ্ছে।’


আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মন্ডলির সদস্য নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি এড. মাহবুর রহমান মাসুম তার বক্তব্যে বলেন, ‘জিমখানা বস্তিটি ছিল একটি মাদক জুয়া সহ অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া। সেই কলঙ্কিত বস্তিকে  শত বাধা উপেক্ষা করে মেয়র আইভি সাহসিকতার সঙ্গে উচ্ছেদ করে নারায়ণগঞ্জের সৌন্দয্য বৃদ্ধির জন্য এই শেখ রাসেল পার্ক নির্মান কাজ শুরু করেছেন।

অনেক গডফাদার ইতিপূর্বে এই জিমখানা বস্তি থেকে চাঁদা উত্তোলন সহ মাদক ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল, যা তিনি উৎখাত করে পরিবেশকে সুরক্ষা করছেন, এখন সময় এসেছে সিনেমায় যেমন শেষ দৃশ্যে ভিলেনের পরাজয় ঘটে, তেমনি ভাবে ভিলেনের পরাজয় অনিবার্য।’ 


নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টু বলেন, জিমখানা পার্কের এই জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। অনেক সমস্যার সমাধানের পর পার্কের কাজটি শুরু হয়, কিন্তু অশুভ শক্তি পার্কের কাজটি বন্ধ করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পার্ক নিয়ে ষড়যন্ত্র নারায়ণগঞ্জবাসী মেনে নেবে না। পার্কের নির্মাণ কাজ চলবে। পার্কের কাজ বন্ধ করা হলে নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিয়ে হরতাল করা হবে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর