শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শুভ জন্মদিন তামিম ইকবাল

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) টিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রধান তিন স্তম্ভর মূল পিলারই তামিম। যে কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে আস্থার জায়গাই তামিমের ব্যাট। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া পরিবারের সেই কনিষ্ঠ সদস্য তামিম ইকবালের আজ ৩০তম জন্মদিন।


১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাজীর দেওরিতে বিখ্যাত খান পরিবারে জন্ম তামিমের। পিতা ইকবাল খান ছিলেন আপাদমস্তক ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়ানুরাগী ও ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ। ফুটবল ও ক্রিকেট একসঙ্গেই খেলেছেন দাপটে। সত্তর দশকে ঢাকার ফুটবলের সূর্য যখন মধ্যগগণে, তখন ইকবাল খান ছিলেন নামী ফুটবলারদের একজন।


চাচা আকরাম খান বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার হাত ধরেই ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে উড়েছিল ক্রিকেটে জয়ের কেতন। বড় ভাই নাফিস ইকবালও ছিলেন জাতীয় দলের স্টাইলিশ ওপেনার, টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানও। স্বভাবতই ক্রিকেটটা তামিমের রক্তে, অস্থি-মজ্জায়।
ড্যাশিং এই ওপেনারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০৭ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে তামিম সবার সবার নজর কাড়েন ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজের অভিষেকে সাহসী ব্যাটিংয়ে।


দুর্দান্ত এক হাফসেঞ্চুরির পথে ভারতের সে সময়ের এক নাম্বার ফাস্ট বোলার জহির খানকে উইকেট ছেড়ে দু পা বেরিয়ে লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তামিম জানান দিয়েছিলেন-শুধু জহির খানকে নয় বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করতেই এসেছি আমি। জহির খানের বলে তামিমের ওই ছক্কা হাঁকানোর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিই মাঝে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে গিয়েছিল।


চাচা আকরাম খান ছিলেন মারকুটে ব্যাটসম্যান। আর বড় ভাই নাফিস ইকবালকে ধরা হতো 'সিম্বল অব এলিগেন্স।' কিন্তু তামিম বড় হয়েছেন নিজের মতোই। তার বয়স যখন ১১-১২ বছর তখনই কিশোর তামিমকে দেখিয়ে কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে চাচা আকরাম খান বলেছিলেন-আমার চেয়েও জোরে মারতে পারে আমার এই ভাতিজা। এই বয়সেই ওর ব্যাটের তেজ অনেক ঝাঁঝালো।


চাচা আকরাম আর বড় ভাই নাফিসের চেয়ে সত্যিই বিগ হিট নেয়ার প্রবণতা ও ক্ষমতা-দুইই বেশি তামিমের। ক্যারিয়ারের শুরুতে তার ব্যাট ছিল খোলা তরবারি। যে ফরমেটের খেলাই হোক, তামিম উইকেটে গিয়েই যাকে তাকে ইচ্ছেমত চার ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করতেন। সেই আক্রমণাত্মক মেজাজ, অসীম সাহস ও নিজের সামর্থ্যের প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাসের কারণেই তামিম সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।


এই তামিমের সবচেয়ে জ্বলজ্বলে বীরত্বের গল্পটাও খুব বেশি দিনের পুরানো নয়। ২০১৮ তে জাতীয় নায়কে পরিণত হন এই ক্রিকেটার। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ থেকেই চলে যান হাসপাতালে। কিন্তু মাঠে দেশের খেলা চলছে, কিছুতেই থাকতে চাচ্ছিলেন না সেখানে। চলে আসেন আবার মাঠে।


বাংলাদেশ যখন হারের দুয়ারে। ঠিক তখনই সেই ভাঙা আঙুল নিয়েই নেমে যান মাঠে। মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গ দিয়ে দেশকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই দেশ সেরা ওপেনার।


দেশের হয়ে টেস্টে ৩০০০ এবং ওয়ানডেতে ৫০০০ হাজার রান করা মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার তামিম। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে তার নামের পাশে আছে টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ রান। 


দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৮ টেস্টে ৪৩২৭ এবং ১৮৯ ওয়ানডেতে ৬৪৬০ হাজার রানের মালিক ক্রিকেটার তামিম। ৭৫ টি-টোয়েন্টিতে মোট রান ১৬১৩। মুশফিকুর রহিমের পর বাংলাদেশের ২য় ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে দ্বি-শতক করেন তামিম ইকবাল।


একজন মাঠের তামিমের গল্প অনেকেরই জানা থাকলেও মাঠের বাইরেও তামিম এক অন্য মানুষ। মানুষের প্রয়োজনে নিজেকে সব সময় প্রস্তুত রাখেন তিনি। চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় ১৫ থেকে ২০টি এতিমখানা দেখাশোনা করেন তিনি। জাতীয় লিগে প্রথম ম্যান অব ম্যাচ পুরস্কারের টাকা বাল্যবন্ধু ফারহানের মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসায় খরচ করেন। ফারহান বন্ধুর এ অবদানের কথা এখনো সবাইকে বলে বেড়ান। 


২০১৩ সালের ২২ জুন দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা আয়শা সিদ্দিকাকে বিয়ে করে সংসার পাতেন দেশ সেরা এই ক্রিকেটার। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের ঘর উজ্জ্বল করে জন্ম নেয় আরহাম ইকবাল খান।


যুগের চিন্তা পরিবারের পক্ষ থেকে তামিম ইকবালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন তামিম ইকবাল !

এই বিভাগের আরো খবর