বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শীতের রাতে শিশুদের ব্যবহার করে নিষ্ঠুর ভিক্ষা ব্যবসা!

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : শীতকাল। রাতে শীতের কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে ফুটপাতে ছোট একটি চেয়ারে বসে আছে শিশুটি। গলায় ঝোলানো একটি ব্যানার। ব্যানারে লেখা ‘আমি অন্ধ, আমি বোবা, আমি গরিব আমি অসহায় আমাকে সাহায্য করুন’। 

 

তার পাশে যেতেই একজন মহিলা এসে বলল আপা একটু সাহায্য করেন। পারলে কিছু টেকা দেন আফা। শিশুটির কি হন? প্রশ্নে সে বলে আমি ওর মা। শিশুটির সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যানার দেখিয়ে বলেন, ওই যে দেহেন লেখা আছে। 

 

শিশুটির নাম কি জিজ্ঞেস করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, টেকা দিলে দেন, না দিলে দিয়েন না। এতো কিছু জিগাইয়েন না। এটা বলেই শিশুটিকে রেখে এগিয়ে সামনে চলে যান।

 

শহীদ মিনারের প্রধান ফটকের সামনেই দুজন নারী বিছানা বিছিয়ে বসে আছে। বিছানায় তাদের সাথে একটি শিশু শুয়ে আছে। শিশুটির সব ঠিক থাকলেও তার মাথা অতিরিক্ত মাত্রায় বড়। দুজন নারীর মধ্যে তার মায়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান, শিশুর নাম মোবারক। তার বয়স ৮ বছর। 

 

তার বাবা আছে। আর বড় তিন বোন। মাথা বড় এছাড়া শরীরে সমস্যা হয় না। কোন সমস্যা না থাকলে কেন এই শিশুকে দেখিয়ে ভিক্ষা করছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা গরিব এজন্য ভিক্ষা করা লাগে।    

 

চাষাঢ়া সমবায় মার্কেটের সামনে ফুটপাতে প্রায় সময়েই একটি শিশুকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। পড়নে কোন কাপড় নেই। সামনে ভিক্ষার থালা। শিশুটির পাশে ১২-১৩ বছরের একটি মেয়ে বসে আছে।  সামনে গিয়ে দেখা যায় , শিশুটি ঘুমন্ত। 

 

মেয়েটির সাথে কথা হলে সে বলে, এটা আমার বোন। ওর নাম মিম। বয়স ২ বছর। বাবা নাই। বাড়ি কোথায় প্রশ্ন করলে থতমত হয়ে বলেন আমি জানিনা। আমি ওর খালাতো বোন। ওর ভাই আসতাছে। 

 

চাষাঢ়ার আশেপাশে শিশু দিয়ে এরূপ ভিক্ষাব্যবসার ঘটনা অহরহ দেখতে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, একদল সংঘবদ্ধ চক্র এই কাজগুলো করছে। বিকলাঙ্গ শিশুদের সামনে এনে, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে, অসুস্থ শিশু দেখিয়ে ভিক্ষা ব্যবসা চলে। 

 

সরাসরি শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করায়  আবার কখনো শিশুর মা-বাবা সেজে অপরাধী চক্র ভিক্ষা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিশু ভাড়া করে অর্থ উপার্জন করে। প্রতিবন্ধী শিশুদের ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দেয়। শীতের রাতে ঠান্ডার মাঝে শিশুদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে চলে তাদের ব্যবসা। 

 

নাম প্রকাশে কয়েকজন ভিক্ষুকের সাথে এই বিষয়ে কথা বললে তারা জানান, বাচ্চা নিয়ে বের হলে মানুষের নজর পড়ে। এইজন্য তারা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য শিশুকে সাথে নিয়ে নেয়।

 

নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক এই বিষয়ে বলেন, বহুদিন যাবৎ একটা চক্র ভিক্ষুক বেশে সাধারন মানুষের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ভিক্ষা ব্যবসা করছে। এইসকল চক্র শিশুদের ব্যবহার করে ভিক্ষা করে। এই ক্ষেত্রে সাধারন মানুষের সচেতন হতে হবে। এছাড়াও আমাদের প্রশাসনকে এই সকল চক্রের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

 

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ঢাকা বিভাগ দক্ষিণের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, নগরের বিভিন্ন জায়গায় শিশুরা ভিক্ষা করছে। শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করানো পুরোপুরি বেআইনী। 


একই সাথে শিশু ভিক্ষাবৃত্তিতে শিশুদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এই জন্য নগরে ভিক্ষার ব্যবসায়  যে চক্রটা রয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।
 

এই বিভাগের আরো খবর