শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

শামীম ওসমানের কর্মীসভায় এসপিকে গালাগালি (ভিডিও)

প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার  (যুগের চিন্তা ২৪) : শামীম ওসমানের কর্মীসভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে গালাগালি করেছেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।  শনিবার (৬ এপ্রিল) ইসদাইরের অক্টো অফিস এলাকায় বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে শামীম ওসমানের ডাকা জরুরী কর্মীসভায় এঘটনা ঘটে। পরে শামীম ওসমান থামতে বললে তাঁর নেতাকর্মীরা থামেন।  

এরপর বক্তব্য শুরু করেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, আমার নেতাকর্মীরা উত্তেজিত। ঠিকই আছে। আপনাদের মতো বয়সে আমারও এরকম স্ফুলিঙ্গ হওয়ার কথা ছিলো। আল্লাহর রহমত যে আমি ২০১১’র শামীম না। এটা ২০১৯ সাল। বয়সও বাড়ে, ধৈর্য্যও বাড়ে। আমারও বেড়েছে। 

পর্দার অন্তরালে কিছু খেলা থাকে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, যা দেখতাছেন তা না। পর্দার অন্তরালে খেলা থাকে। সেই খেলায় কেউ ভুল করে পাড়া দেয়। যারা নারায়ণগঞ্জে এসেছেন হঠাৎ করে বিদেশী মেহমান। হয়তো ভুল করে কারো খেলাতে পা লাগিয়ে দিয়েছেন। খেলাটা কার। কখন থেকে এ খেলা শুরু হলো। আমি কারো নাম বলবোনা। বাইরের মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। দোষ তো ঘরের ভেতরে।

শামীম ওসমান বলেন, আমি দেখে অবাক হই, সন্ত্রাসের কারণে যাকে আমি দুইবার মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচাইয়া নিয়া আসলাম, দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে চাঁদাবাজির কারণে সরকারের নির্দেশে কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হলো, এইবারও নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারের নির্দেশ ছিলো। আমি বলেছি, গ্রেপ্তার কইরেননা, অন্য কোথাও সরায় দেন। এরাও এখন দেখি সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি করে, আমার হাসি আসে, লজ্জা লাগে। ঠিক আছে, ভালো কথা।

নারায়ণগঞ্জে আরেকজন মহিলা আছে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, উনি বলেন মামলা করবেন! মামলা করোনা কেন? জলদি করো। কেউ যদি মনে করে, কাউকে ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ অবস্থা নষ্ট করবে, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা করে শতকরা নব্বই ভাগ লোক লোকাল। আমাদের ভাই-বেরাদার, আমাদের আত্মীয়। আমাদের লোকদেরকে ফোন করে বলবেন, দেখা কইরেন। আমি বলবো দেখা করার সময় শেষ।

‘এতো উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই’  নেতাকর্মীদের এমন পরামর্শ দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, একটা জিনিস মাথায় রাইখেন। মশা মারতে কামান দাগানোর দরকার নাই। এটা কোন ব্যাপার হইলো। খন্দকার মোশতাকরা ভেতর থেকে খেলাচ্ছেন। কেন? কারণ খন্দকার মোশতাকরা ধরা পড়ে গেছে। তাই আওয়ামী লীগ পরিবার ভাঙ। ভাঙতে হলে কি করতে হবে? শাহ নিজামের নামে জিডি কর! শাহ নিজামের নামে জিডি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থরথর করে কাঁপতাছে! আমরা ভীতু কাপুরুষ! মীরুর নামে মামলা হয়ে গেছে আল্লাহ আমরা অনেক ভয় পাইয়া গেছি! সজলের নামে বক্তব্য দেন, সবাই ভয় পাইয়া গেছে। আমি, বাদল, চন্দন আমরাও তরুণ এখনো বুড়া হই নাই। আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জে খেইলেননা। সাংবাদিক কাউকে প্রশ্ন করবে, প্রশ্ন করার আগে তাকে জুয়ার মামলার আসামী করে দিবেন, কইরেননা। আমার আত্মীয়-স্বজনদের মদের সাপ্লাইয়ার বানাইবেন, মনে করবেন আমি ভয় পেয়ে যাবো এগুলো করে আমাকে কাবু করাটা মসিবত, পারবেনা।

‘সমস্যা একটা, হাঁত-পা বাঁধা’ উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের খোঁজ খবর প্রধানমন্ত্রী রাখেন। তিনি খোঁজ রাখেন কি রাখেন না তা আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে টের পাবেন। বাইরের মানুষকে দোষ দিতে নাই। আমি না বুঝে কিছু বলছিনা। তবে আমাদের মধ্যে যদি কেউ খারাপ হয় তবে তাকে ছাড় দেবোনা। আমাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা করে ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা করে তাহলে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাড়া নাঁচায়ে দেবো। এক সেকেন্ড ছাড় দেয়া হবেনা। এক সেকেন্ডও না।

সবাইকে টেনশনমুক্ত থাকার আশ্বাস দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, এরপরেও যদি কোন খেলার চেষ্টা করা হয়। তখন কর্মসূচি দেবো। রথি-মহারথি কতো দেখছি! খোঁচা দিয়েননা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচ্ছু-বিচ্ছু খেলা খেইলা অভ্যস্ত। এবং এরশাদের সময় সেনাবাহিনী শুদ্ধাও পানিত নামছে কিন্তু! নারায়ণগঞ্জে রাত সাড়ে ৩টার সময়ও একলাখ লোকের মশাল মিছিল বের হয়েছিলো। সবাইকে অনুরোধ করবো বাইরের মানুষকে দোষারোপ করবেননা। 
পরিশেষে শামীম ওসমান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এরপরেও যদি খেলা হয়, ৬ ঘন্টার কর্মসূচি দেবো। সবাই প্রস্তুত থাকবেন। তবে খেলা হবেনা। খেলা হইছে বহুত আগে। কোন টেনশন নিয়েননা। খেলা-খেলির দরকার নাই। খেলার আগে খেলা শেষ হয়ে যাবে। 

সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. শামসুল ইসলাম ভূইয়ার সভাপতিত্বে সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা,  সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. ওয়াজেদ আলী খোকন, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রফেসর শিরিন বেগম, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, মহানগর যুব মহিলা লীগের আহবায়ক এড. সুইটি ইয়াসমিন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর