বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শামীম ওসমানকে মেয়র আইভী : চালাকি বাদ দেন

প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আপনার (শামীম ওসমান) কাছে আরো একটি অনুরোধ রইলো তিনবারের এমপি হয়েছেন আপনি। তাহলে আপনার এলাকা কেন ইউনিয়ন পরিষদের থাকবে? প্রচন্ড আয়ের একটা জায়গা। এখানে প্রচুর মিল ফ্যাক্টরী আছে তাহলে আপনি কেন আপনার জনগণকে বঞ্চিত করছেন। কেন আপনার এখানে রাস্তাঘাট অপরিকল্পিত থাকবে। প্রচুর জায়গা থাকা সত্ত্বেও আপনার এখানে কেনো দুইটা তিনটা পার্ক হবে না। আপনি কেন সুন্দর করে ঘাটগুলো বাধিয়ে দেবেন না। আপানকে তো জনগণ পছন্দ করেছে। তাহলে কেন আপনি কেন এ কাজগুলো করবেন না। ফতুল্লা পৌরসভাকে পৌরসভা ঘোষণা দিয়ে কেন ফতুল্লা কুতুবপুরকে পৌরসভার মান মর্যাদা দিবেন না। কেন তারা ইউনিয়নের পরিষদের মধ্যে থাকবে। কাদের সুবিধা দেয়ার জন্য, কিসের উদ্দেশ্যে কি কারণে এখান থেকে কোটি কোটি টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে! কেন জনগণ সুবিধা পাবে না। এটা কি আপনার চালাকি? এই চালাকি বাদ দেন।

 

শনিবার (১৫ জুন)  বিকেলে আলীগঞ্জ মাঠ রক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যেগে আয়োজিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বরেন। দেশের সেরা সাবেক তারকা ফুটবল খেলোয়াররা প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। 

 

শামীম ওসমানকে ফাঁকা বুলি না আওড়ানোর পরামর্শ দিয়ে মেয়র আইভী বলেন, আপনি অনেক বড় বড় কথা বলেন। দুই মিনিটে নারায়ণগঞ্জকে তছনছ করে দিবেন। পাঁচ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনম্যানকে দখল করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করেন। সেগুলো কি তবে শুধু আপনার মুখের বুলি? তাহলে  আপনার এলাকার মাঠ কেন দখল হয়ে যাবে? রাজনীতির মাঠে আপনি এসেছেন জনগণকে কথা দিয়েছেন। আর জনগণকে কথা দিলে কথা রক্ষা করতে হয়। সেই কথা আপনি রক্ষা করুন। আপনি আপনার এলাকার মাঠ না রক্ষা করে আপনি নারায়ণগঞ্জের মধ্যে স্টেডিয়াম দখল করে বাবার নাম দিয়েছেন। কেন কি কারণে?  পৌরসভা ওসমান স্টেডিয়ামকে ৯ একর জায়গা দিয়েছে। আপনি সেখানে ৪ একর জায়গা দখল করেছেন। কেন দখল করেছেন? আপনার জায়গা লাগলে আপনি বলতেন, আমি দিতাম। আমি তো মুক্তিযোদ্ধা একে এম শামসুজ্জোহার নামে স্টেডিয়াম করে দিতাম। আমি তো আপনার বাবার নামে সড়ক করে দিয়েছি। কোনো কার্পণ্যে তো করি নাই। আপনি চান, আপনাকে দেব। আপনি দখল করবেন কেন? দখল করার স্বভাবটা আপনি বন্ধ করুন। নারায়ণগঞ্জ তো দখল করতে পারেন নাই আর পারবেনও না। 

 

শামীম ওসমানকে আহবান জানিয়ে মেয়র আইভী বলেন, আলীগঞ্জে আসুন যে কথা আপনি জনগণকে দিয়েছেন সে কথা রাখুন। আপনাকে তারা নির্বাচিত করেছে জনগণের পাশে থাকুন। তাদের হৃদয়ের স্পন্দনের কথা শুনুন। আপনি তিন তিন বারের এমপি তাহলে কেন আপনার এলাকার এমন একটি মাঠ চলে যাবে। কেন এখানে সরকারী ভবন হবে? সরকারী ভবন হওয়ার জন্য অনেক জায়গা আছে আপনি জানেন। আপনি এখানে আসুন জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করুন। একাত্মতা ঘোষণা করে খেলার মাঠটি রক্ষা করুন এটা আপনার কাছে আমার অনুরোধ রইল।

 

এসপি হারুন অর রশীদকে অনুরোধ জানিয়ে মেয়র আইভী বলেন,  নারায়ণগঞ্জে আসার পর আপনি অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন। নারায়ণগঞ্জে জনগণকে হাঁটার জন্য উন্মুক্ত জায়গা করে দিয়েছেন। আমি শুধু আপনাকে অনুরোধ করবো, এই আলীগঞ্জ মাঠ রক্ষার্থে আপনি ওই রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আপনি অবশ্যই সাধারণ জনগণের পাশে থাকবেন।

 

মেয়র বলেন, যে নেতাই হোক। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ইতিহাস নাই যে মানুষের নৈতিক অধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে জয়ী হতে পেরেছে। পরাজিত সে হবেই হবে। জন¯্রােতের বিপক্ষে যেতে নাই। পুলিশ সুপারকে আমি অনুরোধ করবো আপনার পুলিশ বাহিনী দিয়ে নিরীহ জনগণকে, শিক্ষার্থীদের, শ্রমিকভাইদের মারধর করবেন না। আপনি তাদের পাশে থাকবেন। মাঠ রক্ষা আন্দোলনে আপনারও ভূমিকাও থাকতে হবে। শত শত মানুষের পক্ষে থাকবেন মানুষও আপনার পক্ষে থাকবে।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জায়গায় মাঠ,ঘাট পার্ক করা নিদের্শনা দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র আইভী বলেন, বেশ কযেক বছর যাবৎ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে ভুমিকম্প থেকে রক্ষা করতে জায়গায় খোলা মাঠ রাখার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া কোরবানীর সময় পশু কোরবানী সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করতেও খোলা মাঠ রাখার প্রয়োজন। তার জন্য প্রতিটি  ওয়ার্ডে মাঠের প্রয়োজন।  আমরা উন্নত বিশ্বগুলোতে গেলে দেখবো সেখানে থাকার জায়গার চেয়ে খোলা জায়গা রাখা হয়। আমি পলাশকে অভয় দিয়ে বলতে চাই। ঘাবড়াবার কিছু নাই ভয় পাবার কিছু নাই। এতগুলো মানুষ যার সাথে আছে তার সাথে আল্লাহও থাকে।

 

মেয়র বলেন, জিমখানায় মাঠ দরকার তা সকলেই জানেন। সেখানে যে ১৮ একর জায়গা আমি ১৭ বছর যাবৎ চেষ্টা করছি। এ পর্যন্ত ৬০ টি চিঠি দিয়েছি এবং মন্ত্রী মিনিষ্টারের পেছনে দৌড়িয়েও যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন  কিন্তু আমি ওখানে টে›ডারে দিয়ে দেই। তারা চেয়েছিলো জায়গাটাকে প্লট আকারে বিক্রি করে দিতে। সে জায়গার মধ্যেই কিন্তু এখন একটি খুব সুন্দর পার্ক হয়েছে। যার নাম শেখ রাসেল পার্ক। পার্কের মধ্যে রয়েছে একটি ৬ একরের পুকুর। যা বাধিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেতরে খেলার মাঠ আছে। চারুকলার একটি বিল্ডিং আছে। আমরা চাইছি তা ঠিক করে দিতে। এছাড়া সুইমিং পুল আছে, সাইকলে শেখানোর জন্য জায়গা রাখা হবে।  খেলার জন্য বড় মাঠ করে দিচ্ছে। মাঠটি তৈরী হয়ে গেলেই সোনালী অতীতকে সংগঠনকে দিয়ে মাঠটি উদ্বোধন করাবো।

 

আলীগঞ্জ মাঠ রক্ষার দাবিতে নাড়ীর টানে এই অনুষ্ঠানে এসেছেন জানিয়ে মেয়র আইভী বলেন, আজকে আমি এখানে নাড়ীর টানে চলে এসেছি। এখানে এসে দেখতে পেলাম নারায়ণগঞ্জ ঢাকা থেকে অনেক খেলোয়াড়রা এসেছে। তারা আমাদের আনন্দ দেয়ার জন্যই মূলত  মাঠে লড়াই করে। আর মাঠে বসে এলাকা দেখার  যে আনন্দ তা পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। নারায়ণগঞ্জবাসীর সাথে একত্মতা প্রকাশ করে আজ সকলে এখানে একত্রিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যে হলেও সত্য যে খেলার মাঠ রক্ষার জন্য আজ আন্দোলন করতে হচ্ছে। যেখানে সরকারই আমাদের নিশ্চয়তা দেবে মাঠ,ঘাট,পুকুর রক্ষার জন্য। সেখানে আমাদের আন্দোলন করতে হয়।

 

নিজেকে একজন রাজনীতিক এবং খেলোয়ারের সন্তান পরিচয় দিয়ে মেয়র আইভী বলেন, এই এলাকাটি কিন্তু আমার সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা। তবুও আমি এখানে এসেছি সত্যের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য এবং মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। আলী আহম্মদ চুনকা ছিলেন একজন শ্রমিক নেতা। সেই সাথে আরো একটা পরিচয় ছিলো। সে একজন কাবাডি ও ফুটবল খেলোয়াড় ছিলো। আর ফুটবল খেলা দিয়েই তিনি নারায়ণগঞ্জে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। সে ফতুল্লায় এসেও খেলতেন। তাই একজন শ্রমিক নেতার সন্তান হিসেবে একজন খেলোয়াড়ের সন্তান হিসেবে আজকে আমি এখানে এসেছি। আমাকে অনেকেই ফোন করেছে অনেকেই  বলেছে কেন পলাশের এখানে যাচ্ছেন? কি করতে যাবেন? শামীম ওসমানকেই তো পরাশ এখানে দশবার নিয়ে এসেছে। তখন কথা দিয়েছিলো যে এ মাঠ রক্ষা করবে। অথচ আজকে সে মাঠ রক্ষা করতে চাইছে না। তাহলে কেন আইভী সেখানে যাচ্ছে? আসলে আমি পলাশের জন্য যাচ্ছি না আমি সাধারণ মানুষের জন্য যাচ্ছি। সাধারণ মানুষকে নেতৃত্ব দিচ্ছে পলাশ সুতরাং আমার সেখানে যেতেই হবে। আমার সাথে তাদের সেই ১৯৯৪ থেকে পরিচয়। তারা ছাত্রলীগ করে। আমি সবেমাত্র রাশিয়া থেকে ডাক্তার হয়ে ফিরেছি। তখন এক ঘটনায় নীতিগত আদর্শের দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে পলাশ আমার পক্ষ অবলম্বন করেছিলো। পরবর্তীতে যে কোনো একটা কারণে হোক কারাবরণ করতে হয়েছে এ পলাশকে। ডান্ডা বেড়ি পায়ে দিয়ে তাকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে কাজ করতে বেরিয়েছে।  সে তখন থেকেই জেল খাটা অবস্থায় পরবর্তীর্তে যেকোনো কারণে রাজনৈতিক পালা পরিবর্তনের কারণে তাকে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করতে হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি সে তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় নাই। সকলের সাথে মিলে মিশে কাজ করেছে। আমরাও সকলে মিলে মিশে কাজ করতে চাই।

 

মেয়র বলেন, আমরাও মাননীয় সংসদের সাথে মিলে কাজ করতে চাই। তাই জনপ্রতিনিধি যারা হয়েছেন  তারা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন। তারা জনগণের পক্ষেই কাজ করবে এটাই বাস্তবতা। এটাই বৈশিষ্ট্য এটাই বাংলাদেশের রীতি। মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনা সব কিছু হারিয়ে এ বাংলাকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাঙালীদের একত্রিত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে লালন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশ গড়ার জন্য তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। কিন্তু কে তাকে ভুল বোঝাচ্ছে?

 

মেয়র বলেন, ১৯৯৬ সালে তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রথমবারের মত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইসিসি ওর্য়াল্ড কাপ জিতেছিলো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে তিন তিনবার নেতৃত্ব দিয়েছিলো। আর তিনি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে। সে সময়গুলোতে খেলাধুলায় জয় জয়কার হয়েছে। সেটা ফুটবলে হোক ক্রিকেটে হোক যেকোনো খেলায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহ্ ভাগ্যে এমনভাবে দিয়েছে যার ফলে খেলা জগতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। নারীরা খেলছে শিশুরা খেলছে,বড়রা খেলছে। মাদকমুক্ত দেশ গড়ার জন্য খেলাধূলা এবং সংস্কৃতি চর্চাও কোনো বিকল্প নাই। আমরা যতই চাই না কেন দেশকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে,মৌলবাদিও হাত থেকে রক্ষা করতে  কিছুতেই পারবো না । যদি না আমার সাংস্কৃতিকে ছড়িয়ে না দেই খেলাধুলাকে সমাদৃত না করি। তাই খেলাধুলাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফুটবল দিয়ে মাঠ কাঁপিয়ে দেয়ার জন্য আমাদেও চাই এ খেলার মাঠ। এ মাঠ রক্ষা করার জন্য খেলোয়াড়রা পাশে এসে দাড়িয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা রেখে আমি বলতে চাই আলীগঞ্জের খেলার মাঠ যাতে হারিয়ে না যায়।

 

তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক তথ্যটা যায় নি। এই যে মাঠটি তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা। এমন মাঠ বাংলাদেশে খুব কমই রয়েছে। একদিকে স্কুল-কলেজ চারদিকে রাস্তা। তারপাশে সরকারী ভবন হবে তাহলে খেলার মাঠটার প্রতি নজর কার? কার এমন অশুভ দৃষ্টি হল যে সবুজ-শ্যামল সুন্দও মাঠটির বুক চিড়ে ভবন গড়ার চিন্তা এসেছে। এ সাহস সে হায়নাদেরই হয় যারা টাকাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
শরীরে যদি নারায়ণগঞ্জের মাটি থাকে এবং বুকে যদি বাংলাদেশের লাল সবুজের চেতনা ধারণ করে থাকে তাহলে কেউ এ সুন্দর সবুজ মাঠের বুক িিচড়ে নয় তলা ১৫ তলা বিল্ডিং গড়তে পারে না। নয় সে মানুষ নামধারী পশু এবং টাকা খাওয়ার যে নর পিচাশ সৃষ্টি হয়েছে এদেশে সেই নরপিচাশরাই পারে এ জঘন্য কাজ করতে।

 

আমি মাননীয় মন্ত্রী শ ম রেজা সাহেবকে আমি অনুরোধ করবো উনি একজন ভালো মানুষ সৎজন মানুষ অত্যন্ত নামকরা আইনজীবি ছিলেন। নেত্রী উনাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করে এ বিভাগটি তাকে দিয়েছে। উনি যদি স্বচক্ষে মাঠটি দেখে যান। উনি যদি এ বুড়িগঙ্গার হাওয়া উপভোগ করেন তাহলে নিশ্চয়ই উনি এ মাঠের মধ্যে বিল্ডিং করতে দিবে না এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

 

মেয়র বলেন, অবশ্যই বিল্ডিং হবে। সরকারি কাজে আমরা বাধা দিতে পারি না। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা আমাদেরই ভাই বোন মা আমাদেরই স্বজন। আমরা চাই তারা সবাই ভালো থাকুক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের সুযোগ সুবিধা দিয়েছে এ রকম সুযোগ সুবিধা তাদের কেউ দেয় নাই। কারণ তারা আমাদের দেশের সেবা করছে জনগণের সেবা করছে। কিন্তু এ ভবন করার জন্য তা আলীগঞ্জে পর্যাপ্ত আরো জায়গা রয়েছে। এ ফতুল্লায়,শ্যামপুরে আছে তাহলে সেখানে নয় কেন? ভবন গড়ার জায়গা আমার নগরীর  ভেতরেই আছে। তা ভূমিদস্যুদের দখলে। নদীর ওপারে পাঁচটি সিমেন্ট কারখানা হয়েছে কিন্তু ঘনবসতি এলাকায় কোনো সিমেন্ট কারখানা থাকতে পারে না। নদীর ওপারে মুন্সিগঞ্জে আরো রয়েছে ছয় থেকে সাতটা। এগুলোকে কে অনুমতি দিয়েছে। শত শত সরকারী খাস জমি দখল করে খাচ্ছে। সেগুলো দেখার জন্য তো কেউ নাই। 

 

জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মেয়র আইভী বলেন, এই যে তিন-চার বছর যাবৎ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া ছিলো। তিনি বহুবার এখানে এসেছিলেন। তার কি নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে না এ মাঠটি রক্ষা করার জন্য। উনি মাইকে এসে খুব সুন্দর করে কথা বলেন, ভালো ভালো কথা বলে। কিন্তু এ মাঠটি রক্ষা করার জন্য তিনি এ পর্যন্ত কি দায়িত্ব পালন করেছে। এ মাঠটি নিয়ে কি উনি একটি রিপোর্ট করতে পারেন নাই? বলতে পারে নাই যে সরকারী খাসের প্রচুর জায়গা আছে আমি আপনাদেও ভবন করার জন্য জায়গা দিব।

 

মেয়র বলেন, সরকারী জায়গা গোপনে বিক্রি হয়ে যায় মিল মালিকদের কাছে, কেন? আমাদের জনগণের অধিকার না রেখে আমাদের কথা না ভেবে  খেলার মাঠ না করে গোপনে বিক্রি করে দেয়া হয় তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমার সিটি করপোরেশনের ভিতরেই। আমি সেই মামলা লড়ছি। আমি চিত্তরঞ্জন ঘাট, মাঠ দখলমুক্ত করতে মামলা করেছি। মামলায় আমি জিতেছি এবং ঘাট মাঠ এখন আমার দখলে। আদমজী মাঠ রক্ষায় আমি সে সময় পাই নাই। ২০০৩ সালে আমি সবেমাত্র দেশে আসছি। উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলনের অভাবে আদমজী মাঠ দখলমুক্ত করা সম্ভব হয় নি।

 

মেয়র আইভী আক্ষেপ করে বলেন,  আমাকে দিনে পর দিন আন্দোলন করতে হয়েছে। আমি যখন টেন্ডার দিলাম পুলিশ ঠিকাদারকে ধরে থানায় আটকে রাখলো। আমি সাথে সাথেই সেখানে গিয়েছিলাম। মামলা যেহেতু হয়েছে সে আসামী। আসামী ছাড়িয়ে আনা আমার কাজ না। কিন্তু অন্যায়ভাবে মামলা দেয়ায় আমি সেদিন প্রতিবাদ করেছিলাম।আমি সারারাত থানায় বসে রইলাম। একজন দুজন করতে করতে সেখানে নারায়ণগঞ্জের অনেক মানুষ হয়ে গিয়েছিলো। সকাল ৬টা পর্যন্ত থেকে ঠিকাদারকে চালান দিয়ে তারপর আমি বাড়িতে আসি। সেদিন আমি প্রশাসনকে আমি বলেছিলাম যাদের কথায় যাদের নির্দেশে আপনি আমার লোক ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু জনগণের শক্তির কাছে টিকতে পারেন নাই। আর এ শেখ রাসেল পার্কটি হলো জনগণের শক্তির উদাহরণ। এখন আপনারা চিন্তা করেন এ মাঠটি আপনারা কার নামে দিবেন। এই নারায়ণগঞ্জে যতগুলো কাজ করেছি তা আমি বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে উৎসর্গ করেছি। আমি শেখ হাসিনা বিজ্ঞান কমপ্লেক্স করতে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর নামে রোডও করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কবরস্থানের জন্য ১০ শতাংশ করে জায়গা রেখেছি, দোকান রেখেছি। আমি সবকিছু করেছি বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও বাঙলার দামাল সন্তানদের জন্য।

 

তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্যালুট করি যে সব হারিয়েও বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আমার মনে হয় সে জানেই না এখানে এত সুন্দর মাঠ আছে। তাকে জানানোর দায়িত্ব আমাদের। পরিশেষে একটা কথাই বলবো কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় নয় নারায়ণগঞ্জ নারায়ণগঞ্জই থাকবে। আমরাই আমাদের শহরকে গড়বো। কোথায় কি হবে এটা নির্ধারণ করবে নারায়ণগঞ্জের মানুষ। জনপ্রতিনিধিরা পাশে আসলে আসবেন না আসলে নাই। জনতার ¯্রােত সবসময় থাকবে। নেতারা ভুল করে জনগণ ভুল করে না।

 

আলীগঞ্জ মাঠ রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও আলীগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি কাউসার আহমাদ পলাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের অন্যতম সদস্য ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, আলীগঞ্জ কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মফিদুল ইসলাম, কুতুবপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জজ, আলীগঞ্জ কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর