বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শান্তিকমিটির তালিকায় গোলাম রব্বানী, তোলপাড়

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখক মুনতাসীর মামুন এর ‘শান্তিকমিটি ১৯৭১’ নামক বইয়ের ২২৫নং পৃষ্ঠায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের বাবা গোলাম রব্বানীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ আছে গোলাম রব্বানী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চাষাঢ়া ইউনিয়ন শান্তিকমিটির অন্যতম নেতা ছিলেন। নতুন করে বিষয়টি নগরজুড়ে নানা আলোচনায় এসেছে। এনিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে নগরীতে। আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিবর্গও এবিষয়ে নানা কথা বলেছেন।  

বিষয়টি নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমিও ওই বইয়ে দেখছি। রব্বানী শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। সে মুসলীম লীগও করতো। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারে ছেলে নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের দায়িত্বে এটি নিয়ে কি আর মন্তব্য চলে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের বিরুদ্ধে শান্তিবাহিনীর ছেলে স্মারকলিপি দিছে এটিও দেখতে হয়েছে। আমরাও দেখছি, জনগণও দেখছে। 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, ‘আমি বইটি পড়িনি। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছে এ বিষয়ে মন্তব্যই করতে চাইনা। বর্তমানে এখানে মন্তব্য না করাই ভালো। শুধু দেখছি। নারায়ণগঞ্জের সবাই সবকিছুই জানে।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘কাজলের বাবা গোলাম রব্বানী শান্তিকমিটির সাথে জড়িত ছিলো, রাজাকার ছিলো এটি আমরা আগে থেকেই জানি। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান হলেও কাজলকে ওসমান পরিবার চেম্বারের দায়িত্বে বসিয়েছে। সে রাজাকার হোক আর অন্যকিছু হোক তাতে কিছু আসে যায়না। সে তাদের অনুগত তাই কাজলের এসব দোষত্রুটি দেখা হয়না। স্বাধীনতা বিরোধীদের দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে অপদস্ত করার ঘটনা নতুন নয়। জামাতের আমীর অডিও ফাঁসও শামীম ওসমানের খেলা। আমরা সবাই জানি মঈনুদ্দিনটা কে? তাঁর আগে নারায়ণগঞ্জে জামাতে আমীর ছিলো এড.নজরুল। মঈনুদ্দীন নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস বলা শুরু করে তাঁর এতো বড় দুঃশাহস, সে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস কি জানে, কবে সে নারায়ণগঞ্জে এসেছে? এসমস্ত কথাগুলো তারা বলায়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ এসব অপরাজনীতি সম্পর্কে সব বোঝে। কোনটি ষড়যন্ত্র এটি তারা খুব ভালো করেই জানে। সুতরাং এসব নিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষ খুব একটা মাথা ঘামায়না, ইতিহাস এতো সহজে বদলে যায়না।’ 

নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এড.এবি সিদ্দিকী বলেন, ‘কাজলের বাবা রব্বানীর সাথে আমার পরিচয় ছিলো তবে ঘনিষ্টতা ছিলো। রব্বানী করতো মুসলীম লীগ, আমরা করতাম ছাত্র ইউনিয়ন। রব্বানী শান্তি কমিটিতে ছিলো এটির সাথে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান চেম্বারের সভাপতি এটি অবশ্যই একটি বিতর্কিত বিষয়।’  

জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, ‘মুনতাসীর মামুনের বইয়ে গোলাম রব্বানীর নাম উল্লেখ করা আছে এটি আমি দেখেছি। যে মুহুর্ত্বে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সে জায়গাগুলো পরিস্কার করছেন। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান চেম্বারের সভাপতি এটি অবশ্যই নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর নজরে যাবে। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির ব্যাপারে, হাইব্রীড আওয়ামী লীগারদের ব্যাপারে দল অনেক সচেতন। দল অবশ্যই এব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে এটি মেনে নেবার মতো নয়। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আলী আহম্মদ চুনকার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি দুর্দিনে হাজার হাজার মানুষকে একত্রিত করেছেন। বাংলাদেশে একটাই আলী আহম্মদ চুনকা। তাঁর অবদান সম্পর্কে খাটো করে দেখানোর সুযোগ নেই।  আর সেলিনা হায়াৎ আইভী যে সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন সে সময়ে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের খরা চলছিলো। অনেকে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। দলের দুঃসময়ে আইভীর পৌর মেয়র হওয়াটা সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতাদের উজ্জ্বীবিত করেছিলো। আইভীর তুলনা আইভী নিজেই। দেশ-বিদেশে তার অবস্থান অনেক উচুঁতে। আমি আমার ফোরামে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান চেম্বারের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।’

এব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেন, ‘আমি এটা সম্পর্কে জানিনা।’


 

এই বিভাগের আরো খবর