বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শান্তি ও স্বস্তির পথে নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : গেলো সাড়ে তিনমাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার তৎপরতা শান্তি ও স্বস্তিদায়ক নারায়ণগঞ্জের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। তাদের মতে, মাদক চোরাকারবারি, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুতাসহ রাজনৈতিক পরিচয় ও বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার নাম বিক্রি করে যেসব অপকর্ম নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত হতো তা গত কয়েকমাসে অনেক হ্রাস পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আশার আলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার চাপ থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও বর্তমান সরকারের উপর মহল নারায়ণগঞ্জবাসীর মতো পুলিশ বিভাগের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এব্যাপারে পুলিশ বিভাগকে সমর্থন জানিয়েছেন সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে। 

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ দেখার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধ ও এর পেছনের কলকাঠি নাড়ানো ব্যক্তিদের নিয়ে পুলিশের দেয়া  অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে অভিযোগগুলো পেয়েছি। এখন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বর্তমান সরকার সব সময়ই ন্যায়ের পক্ষে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার নিজের কাজ করছে, করবে। এ ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে আমরা মেনে নেব না। যারা অন্যায় করবে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করবে, চাঁদাবাজি করবে, মাদকের ব্যবসা করবে তাদের আইনের আওতায় এনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই পুলিশকে বলব তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে, কারও হুমকি-ধমকিতে থেমে যাওয়া চলবে না।’

স্বরাষ্টমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জবাসীও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসনের চলমান অভিযান নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসী জনপদের তকমা মুখে দিবে। বতর্মান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ সেই পথেই হাঁটছে বলে মনে করেন তারা। নারায়ণগঞ্জ জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জবাসীর এমন আস্থা কখনোই আর আদায় করে নিতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।  

গত সাড়ে তিনমাসে প্রভাবশালী সকল সিন্ডিকেটকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সমর্থ্য হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে ষাড়াশী অভিযান চলছে প্রতিনিয়ত। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদবাজরাও পুলিশের অভিযানে ধরা পড়চ্ছেন। পুলিশের অভিযানে অপরাধীদের নাভীশ্বাস উঠে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ২০ এপ্রিল ফতুল্লা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী এলাকাবাসীর ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ মোফাজ্জল হোসেন চুন্নু (৪৪)সহ ২৩  জনকে গ্রেফতার করে। এ সময় চুন্নুর কাছ থেকে ৫ শতাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

এরআগে ১৮ এপ্রিল চাঁদাবাজিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠা নাসিক ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিসবাবুকে পাইকপাড়া থেকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বন্দরের এক ডিস ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই ফাঁস হতে থাকে চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠা ডিসবাবুর চাঁদাবাজির নানা তথ্য।

গ্রেপ্তারের দুদিনের মধ্যেই ফতুল্লা ও পুলিশ লাইনস এলাকার দুই ডিশব্যবসায়ীও ডিশবাবুর বিরুদ্ধে আরো দুুটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। তবে চাঁদাবাজ ডিসবাবুকে ছাড়াতে এক প্রভাবশালী এমপি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়েছেন বলে এমন কথা চাউর হয়। তবে সেটি কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি পুলিশের চলমান অভিযানে।  

এরআগেও গত ১ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত মেরি অ্যান্ডারশনে ভাসমান জাহাজে পুলিশের অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৭০ জনকে গ্রেপ্তার এবং পুলিশের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুর নাম আসায় একটি শ্রেণি ক্ষুদ্ধ হন পুলিশের উপর। এসব ঘটনার জেরে ওই গোষ্ঠি বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে পুলিশ প্রশাসনের সমালোচনা শুরু করেন। তবে তা পুলিশের অভিযানে কোন প্রভাব ফেলেনি।

ওই অভিযানের মাত্র তিনদিন আগে গত ২৭ মার্চ ফতুল্লার জামতলা এলাকায় জনৈক ভিকিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আজিজুল গাফফার খানের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে মামলা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজহারভুক্ত আসামি জাহিদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

১১ মার্চ ফতুল্লার লঞ্চঘাট এলাকায় চোরাই জ্বালানি তেলের আস্তানায় পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ চোরাই জ্বালানিসহ মূল হোতা ইকবাল হোসেন তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ প্রশাসন। নগরের ৫ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিআইডাব্লিউটিএ এলাকায় জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে ৪১ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে  জুয়াড়ি স্থানীয় জনৈক সাংবাদিক রাজু আহম্মেদের নাম আসাতেও অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ওয়াকিবহাল করেন পুলিশ প্রশাসন।  

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি শাহ আলম গাজী ওরফে টেনু গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  ২০ জানুয়ারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় পাগলার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মীর হোসেন মীরু। পুলিশের এসব অভিযান নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিপূর্ণ ও স্বস্তিদায়ক নারায়ণগঞ্জের।  

এই বিভাগের আরো খবর