মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

শহর-বন্দরবাসীর স্বপ্ন ‘কদমরসুল সেতু’ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০১৯  

রাসেল আদিত্য (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসন সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ দুই থানার সীমানা ভাগ করে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। শুধু মাত্র এই শীতলক্ষ্যা নদী শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বন্দরকে। প্রায় ২৫ লাখ লোকের বসবাস শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে। 


প্রতিদিন লাখ লাখ বন্দরবাসিকে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্কুল কলেজ ও কর্মজীবী লাখ লাখ যাত্রীকে খেয়া পারাপার হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে আসতে হচ্ছে। জীবন জীবীকার প্রয়োজনে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খেয়া পারাপার হয়ে জেলা শহর নারায়ণগঞ্জে যেতে হচ্ছে।


শীতলক্ষ্যা নদীর সেন্ট্রাল ফেরীঘাট, ৫ নং খেয়াঘাট, স্কুলঘাট, নবীগঞ্জঘাট, মাছুয়া বাজারঘাট, বরফকল ঘাটসহ কয়েকটি ঘাট দিয়ে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি মতে শীতলক্ষ্যা নদীতে নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ অথবা টার্মিনাল ঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ হলে এলাকাবাসির দুর্ভোগ লাগব হতো। 


নির্বাচনী ইস্তেহারে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা ৩০ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর হাত ধরে দুর্ভোগ থেকে নিস্তার পাওয়ার সবচেয়ে বড় আশার আলো দেখতে পান দুইপাড়ের বাসিন্দারা।  


গত বছরের ৯ অক্টোবর একনেক সভায় বহুল প্রতীক্ষিত শীতলক্ষ্যা নদীর উপর কদমরসুল সেতু নির্মাণের ব্যাপারটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়। ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে দৈর্ঘ্যে ১৩৮৫ মিটার এবং প্রস্থে ১২ দশমিক ৫ মিটিার বিশিষ্ট সেতুটি নগরীর ৫নং ঘাটে নির্মিত হবে। 


সেতুটির নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজের পরামর্শক নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নাসিকের চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) ১৮২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। 


সেন্ট্রাল ফেরি ঘাটে যাত্রীরা বলেন, ঝড় বৃষ্টি হলে বাড়ি যাওয়া অনেক সমস্যা হয়ে যায়, নির্বাচনের সময় নেতারা বলে সেতু হবে, নির্বাচন গেলে আর খবর থাকে না। জরুরি অবস্থায় একটি রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার আমাদের কোন উপায়ন্তর নেই। এই কদম রসুল সেতুটি হলে আমারা অনেকটা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারব। 


এদিকে নদী পার হওয়ার এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইজারাদার ও নৌকা মাঝিদের মাধ্যমেও প্রতিদিন যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব হয়রানি থেকে রেহাই পেতে দ্রুত কদম রসুল সেতুর বাস্তবায়ন দাবি বন্দরবাসীর।


হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন,  ৩০-৪০ জন লোক না হলে ট্রলার ছাড়ে না, ঝড় বৃষ্টি হলে বাড়ি যাওয়া অনেক সমস্যা হয়ে যায়, একটি সেতু হলে আমাদের খুবই উপকার হয়। 


নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ‘চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ঘাট এলাকায় সেতুর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন ও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। কদম রসুল সেতুটি যাতে জনস্বার্থে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। হচ্ছে হচ্ছে করে যাতে এর কাজ কোন ক্রমেই বিলম্বিত না হয়।’  


শীতলক্ষ্যা সেতুর বর্তমান অবস্থা নিয়ে নারায়নগগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সদ্য সমাপ্ত বাজেট অনুষ্ঠানের ‘জনতার মুখোমুখি’ পর্বে বলেন, কদম রসুল সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে কদম রসুল সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 


যাত্রীদের খেয়া পারাপার নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিশ্রুতি মতে কদমরসুল সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এমনটাই দাবি নারায়ণগঞ্জবাসীর। 

এই বিভাগের আরো খবর