শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

শরতে শীতের আমেজ, নগরীর অলি গলিতে ‘পিঠা উৎসব’

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : মিষ্টি রোদ, ঝকঝকে সকাল। বর্ষার মেঘস্নাত পরিবেশ আর মুষল ধারের বৃষ্টিতে বন্যা নামে, নদীর দু-কূল ভাসিয়ে এক ফালি রোদ ও পেঁজা তুলোর মেঘ নিয়ে প্রকৃতিতে এখন শরতের উপস্থিতি।শীত আসতে এখনও অনেক দেরি।


তবে মধ্যরাতে গাঁ হিম করা উত্তরীয় হাওয়া, কুয়াশা ঢাকা ভোর শরতের প্রকৃতিতে এনে দিয়েছে শীতের আমেজ। শুধু তাই নয় শরতের প্রকৃতিতে শীতের আমেজ যোগাচ্ছে শহরের রাস্তায়, অলিতে-গলিতে নানা স্বাদের বাহারী পদের পিঠার। রাস্তায় তৈরি হওয়া এসব পিঠার মৌ মৌ গন্ধে থমকে দাঁড়াচ্ছে পথিক। খানিক দাঁড়িয়ে মুখ পুড়ে স্বাদ নিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ আবার পরিবারের সবাই একসঙ্গে মেতে উঠছেন পিঠা উৎসবে।


নগরীর রাস্তা,অলিগলিতে চিতই পিঠার কদর রয়েছে বারো মাস। কয়েক বছর ধরে এই পিঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভর্তার বৈচিত্রতা। যে দোকানে নানাপদের বিচিত্রময় ভর্তা পাওয়া যাচ্ছে সেই দোকানের বিক্রিও বেশি। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে ‘ভাপা পিঠা, ডিম চিতই, পাটি-সাপটা, পুলি পিঠাসহ নানান ধরণের পিঠা।


সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোয় সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। চলে রাত ১১ টা পর্যন্ত। আর অধিকাংশ দোকানেই পিঠা খেতে লেগে থাকে দীর্ঘ লাইন।পিঠা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অলি-গলিতে গড়ে ওঠা মৌসুমী পিঠা দোকানের ওপর নির্ভর  করে চলছে বহু পরিবার। এতে যোগ হয়েছে বাড়তি আয়ের পথ। কোন কোন দোকানের পিঠা বিক্রি ৫ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কমবেশি সব দোকানেই পিঠা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার। এক্ষেত্রেও আয় হচ্ছে অর্ধেকের বেশি।


নগরীর খানপুর, নবাব সলিমুল্লাহ্ রোড, খাজা সুপার মার্কেট, শহীদ মিনারের সামনে, কালির বাজার, ডিআইটিসহ সর্বত্রই মোড়ে মোড়ে এখন পিঠার ভাসমান দোকান। কেউ ভ্যানে করে পিঠা তৈরির সামগ্রী নিয়ে বসেছে কেউ আবার ফুটপাতে এক পাশে জায়গায় নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসেছে। সন্ধ্যা নামলেই এসব দোকানে অধিকাংশ সময় দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে পিঠা খেতে দেখা যাচ্ছে।


নগরবাসী মেতে উঠেছে পিঠা উৎসবে। এখানে কথা হয়  কলেজ পড়ুয়া  সবুজ হোসেন সাজু‘র সাথে। বিকেলে হালকা ক্ষুধা মেটাতে ভীড় জমিয়েছে পিঠার দোকানে। সাজু জানান ‘পিঠা আমাদের ঐত্যিহ্য। বিশেষত শীতকালে। তবে  শীতের আগে শীতের  পিঠে স্বাদ নেয়ার একটা অন্যরকম আমেজ আছে। এখন  আর শীতের দরকার হয় না। বারো মাসেই পিঠে পুলি পাওয়া যায়।  গরম ভাপা পিঠা খেতে খুবই ভাল লাগে, একই সঙ্গে অল্প টাকায় সারা যাচ্ছে সন্ধ্যার নাস্তাও।


নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে কয়েক বছর ধরে পিঠার দোকান চালাচ্ছেন এক দম্পতি। এই অস্থায়ী দোকানে চিতই পিঠা বিক্রি হয়। পিঠা খেতে দোকানটিতে সব সময় লেগে থাকছে দীর্ঘ লাইন। সন্ধ্যার পর পর পার্শ¦বর্তী অফিস,কারখানা, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এখানে পিঠার স্বাদ নেন মহানন্দে।


দোকানদার দম্পতি জানান, ‘দোকানে সব সময় ভিড় লেগে থাকে। যতক্ষণ ভর্তা থাকে ততক্ষণ বিক্রি হয়। বিকেলে পিঠার চাহিদাটা বাড়ে। সকালের পাঠ চুকিয়ে দুপুর থেকে শুরু করতে হয় রাতের আয়োজন। দিনপ্রতি  বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা।’ দোকানি জানান, তার দোকানের বিশেষত্ব ‘সরিষা ভর্তা’। তারা দোকানের ঝাঁঝালো এ ভর্তা  সকলের কাছেই প্রিয়। অনেকে শুধু ভর্তার স্বাদ নেয়ার জন্যই তার দোকানে পিঠে কিনতে আসে। এমনটাই জানালের পিঠা বিক্রেতা এ দম্পতি।


এদিকে  ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের পিঠে নিয়ে বসেছে শহরের মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। নগরীর  মোহামেডানের সামনে ছোট্ট ঠেলায় করে ভাপা পিঠা বিক্রি করছে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর। গরম গরম ধোয়া ওঠানো ভাপা পিঠার স্বাদ নিতে অনেকই ভীড় জমিয়েছে তার দোকানে। দম ফেলার ফুরসত নেই তার। ব্যস্ততার এক ফাঁকে পিঠার বিক্রির শুরুর কথা জানান কিশোর। ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ চুঁকিয়ে ১০ বছর বয়সেই উদরের টানে বাবার সাথে নেমে পড়তে হয়েছিলো তাকে। সে থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই চলছে। শুধু মৌসুম ভেদে বদলায় তার কাজ।


শহরের প্রায় প্রতিটি অলিতে গলিতে বসছে পিঠার দোকান। নগরীর কমবেশি সবাই দোকানে  তৈরি হওয়া শীতের পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন। কয়েকদিন ধরেই পিঠা খেয়ে সন্ধ্যার নাস্তা সারছেন বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফা। তিনি বলেন, প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পিঠা খেতে আসি। অল্প টাকায় নাস্তাও হয় আবার পিঠা খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন গ্রামে যাই না। ফলে পিঠার প্রতি ভেতরে যে চাহিদাটা রয়েছে তাও পূরণ হচ্ছে।


চাষাঢ়ার বাসিন্দা মধুমিতা সাহা বলেন, নানা পদের ভর্তা দিয়ে  চিতই পিঠাটা খেতে ভালো লাগে। কষ্ট করে বাসায় বানানো লাগে না। শীত ছাড়াই বারো মাস পিঠা খেতে পারি।


নবাব সিরাজদ্দৌলা রোডের পিঠার দোকানগুলোতে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত লেগে থাকছে ভিড়। এখানে অফিস ফেরত কর্মজীবীকেও লাইন ধরে পিঠা খেতে দেখা গেছে। দোকানিরা জানান, প্রতিটি দোকানেই বিক্রি অনেক বেশি। সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরো খবর