শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

লোকবল সংকটে হোঁচট খাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ’র কার্যক্রম

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের ১৩টি পদের বিপরীতে সহকারী পরিচালকসহ ৫টি পদই শুন্য। শুধু মাত্র আটটি পদের জনবল দিয়ে খুড়িয়ে কাজ চলছে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসে। ফলে শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 

রাজধানীর পাশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হলেও এখানে নেই পরীক্ষাগার (ল্যাব)। ফলে দূষণের নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয় ঢাকা অফিসের পরীক্ষাগারে। ফলে পরীক্ষার ফলাফল পেতে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিল্প উদ্যোক্তাদের। জনবল না থাকায় পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে কাজ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের।

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয় শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের পাশে ফতুল্লার পূর্ব লামাপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘মা আমেনা স্বপ্ন টাওয়ার’ আট তলা ভবনের চারতলায় ভাড়া অফিসে পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের জন্য উপ-পরিচালক একজন, পরিদর্শক-১ পদে একজন, পরিদর্শক-২ পদে একজন, হিসাব রক্ষক পদে একজন, ল্যাব সহকারী পদে একজন, নমুনা সংগ্রহকারী-১, নমুনা সংগ্রহকারী-২, গাড়ির চালক পদে কর্মরত আছেন। 

 

সহকারী পরিচালক, সিনিয়র কেমিস্ট, পরিদর্শক-৩, ডাটা এনট্রি অপারেটর, ল্যাব এটেন্ডেন্ট পদে কোন জনবল নেই। ফলে জনবল সংকটে শিল্প বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জের কাজের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযান পরিচালনা করাও সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ল্যাবের জন্য জনবল থাকলেও নেই ল্যাব। ফলে দূষণের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। ফলে কাজে সময় লাগছে বেশি।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় ডাইং কারখানা রয়েছে সাড়ে তিন শতাধিকেরও বেশি। যার অধিকাংশের নেই ইটিপি প্ল্যাট। এসব ডাইং কারখানার দূষিত বর্জ্য পানি নিষ্কাশনের খালের মাধ্যমে নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে দূষিত হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী। আর যেসব প্রতিষ্ঠানের ইটিপি প্ল্যান্ট রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না। ব্যবহার করা হচ্ছে না কেমিক্যাল। পরিবেশ দূষণরোধ এবং রক্ষার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করেন কী-না সেগুলো নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। 

 

এছাড়া ইটভাটা রয়েছে ৫ শতাধিকের বেশি। ইটভাটাগুলোতে সনাতন পদ্ধতিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বাজারে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। ফলে এ বিষয়ে পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরকে সজাগ ও সর্তক দৃষ্টি রাখতে হয়। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হয়।

 

কিন্তু জনবল সংকট থাকায় জেলার পাঁচটি উপজেলার সাতটি থানা এলাকায় কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে পরিবেশ রক্ষার তারা জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। জনবলের অভাবে শিল্প কলকারখানা যেমন মনিটর হচ্ছে না, তেমননি অবৈধ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, উদ্যোক্তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা ল্যাব থেকে এসে নমুনা সংগ্রহকারীরা এসে নমুনা সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে ওই নমুনা ল্যাবে পরীক্ষার পর প্রাপ্ত ফলাফল পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালার ১৯৯৭ অনুযায়ী যদি প্যারামিটারের বাইরে পাওয়া যায় তাহলে এনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে দুষণের দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আরোপ করা হয়। 

 

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ অফিস থেকেও নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় ল্যাবে পাঠানো হয়। কিন্তু নমুনা সংগ্রহের পরীক্ষার ফলাফল পেতে বিড়ম্বার শিকার হতে হয়। জেলা অফিসে নিজস্ব ল্যাব থাকলে নমুনা পরীক্ষা করা হলে উদ্যোক্তারা দ্রুত ও কম সময়ে পরীক্ষার ফলাফল পেতো। 

 

এছাড়া পরিবেশ আদালত আইন ২০১০ অনুসারে প্রতি জেলায় পরিবেশ আদালতের জন্য স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থাকার কথা। কিন্তু এখানে তা নেই। ফলে পরিবেশ আদালতের মামলাগুলো এখানে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও পর্যাপ্ত মামলা করা যাচ্ছে না। এবং মামলা করা হলেও সেটি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে। 

 

উদ্যোক্তারা পরিবেশ অধিপ্তরের নোটিশ ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে থাকেন। সেই রিট নিষ্পত্তি না হওয়ায় পর্যন্ত উদ্যোক্তারা অবৈধ কার্যক্রম ও দূষণের সুযোগ নিয়ে থাকেন। কিন্তু অধিদপ্তরের জনবল কম থাকায় রিটের জবাব দিতে দীর্ঘ মেয়াদী দূষণের সুযোগ পান। 

 

পরিবেশ আন্দোলন বাপার জেলা কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে ব্যাপকভাবে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। শিল্প ও ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ছে আমাদের নদী-নালা খাল বিল। জনবল সংকট থাকলে পরিবেশ রক্ষা কাজ করা সম্ভব নয়। 

 

তিনি আরও বলেন, জনবল বাড়াতে হবে। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে জনবল বাড়ানো এবং ল্যাব থাকা জরুরি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট থাকা জরুরি। পরিবেশ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।


এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার জানান, শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের কাজের চাপ অন্য যেকোন জেলা থেকে অনেক বেশি। প্রতি মাসে আমাদের ৪০ থেকে ৬০ লাখ জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু জনবল সংকটে আমাদের কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও আমরা সীমিত জনবল দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। 

 

তিনি আরও জানান, দূষণরোধ ও পরিবেশ রক্ষায় আমাদের নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলার গুরুত্ব অনুযায়ী এই অফিসের জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

(তথ্যসূত্র : প্রথম আলো)

এই বিভাগের আরো খবর