বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসবে পূণ্যার্থীদের মন্ত্রে মুখর ব্রহ্মপুত্র তীর

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : কঠোর নিরাপত্তা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লাঙ্গলবন্দে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দু’দিনব্যাপী অষ্টমী স্নানোৎসব। শনিবার (২৪ মার্চ) সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে শুরু হওয়া উৎসব শেষ হবে রোববার (২৫ মার্চ) সকাল ৭টা ৫২ মিনিটে।

এবছর ১৮টি ঘাটে স্নান করছেন পূর্ণার্থীরা। সম্ভাব্য দূর্ঘটনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ও আয়োজক কমিটি। শনিবার সকালে স্নানের প্রথম লগ্ন থেকেই ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র! তুমি শান্তনু মুনির কুলতিলক, তুমি অমোঘা দেবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছ। হে লৌহিত্য, তুমি আমার পাপ হরণ কর।’

এই মন্ত্রে মুখরিত লাঙ্গলবন্দের স্নান ঘাটগুলো। স্নানের সময় পিতৃকুলের উদ্দেশ্যে নদের জলে ফুল, তুলশি পাতা, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরিতকি, ডাব, আম পাতা ইত্যাদি অর্পণ করছেন পূণ্যার্থীরা। স্নানোৎসবের প্রথম দিনেই পূণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। এ বছর দেশ-বিদেশের প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ পুণ্যার্থী স্নানে অংশ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা ।

বাংলাদেশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল থেকেও প্রচুর দর্শনার্থী স্নানোৎসবে অংশগ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন স্নান উদযাপন পরিষদ। কুমিল্লার দেবীদ্বার থেকে আসা তীর্থযাত্রী জতীন্দ্র (৫৫) ও তার পত্নী রীতা সাহা (৪৮) যুগের চিন্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে পাপ মোচন হয়, ব্রহ্মার কৃপা লাভ করা যায়। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তারা স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন।

সঙ্গে রয়েছে পুত্র, পুত্রবধূসহ দুই নাতনী। তারা বিশ্বাস করেন, এই উৎসবে যোগ দিতে পারাটা তাদের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। অতীতের দূর্ঘটনা ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে স্নানোৎসবকে ঘিরে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

নিরাপত্তার স্বার্থে স্নান ঘাটের ৫ কিলোমিটার আগে থেকেই সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, চালানো হচ্ছে বিশেষ তল্লাশি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূণ্যার্থীদের জন্য খোলা হয়েছে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র। রাজঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধি (শশ্মান) ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, মনি ঋষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্ম মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, কালীগঞ্জ পঞ্চপাণ্ডব ঘাট ও সাবদী কালীবাড়ি ঘাটসহ ১৮ টি ঘাটে স্নান করছেন পূণ্যার্থীরা। প্রতিটি ঘাটেই ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বিশেষ টহলসহ মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাতার না জানা ব্যক্তিদের সতর্ক করা হচ্ছে যেন গভীর জলে না নামেন। স্নান উপলক্ষ্যে প্রায় ৩৩টি সংগঠন পূণ্যার্থীদের সেবা দিতে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এসব ক্যাম্প থেকে পূণ্যার্থীদের রান্না করা খাবার ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।

স্নান ঘাটগুলোতে কাপড় পাল্টানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ। পূণ্যার্থীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ১০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালসহ ৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা আছে। পাপ মোচনের আশায় পূণ্যার্থীরা আদি ব্রহ্মপুত্র নদে দুই দিন ব্যাপী এই অষ্টমী স্নানোৎসব পালন করে।

মহাভারতের বর্ণনা মতে পরশুরাম মুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের যে স্থানের জলে স্নান করেছিলেন তা লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এসময় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পূণ্যের। এ স্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। এ বিশ্বাস নিয়ে সুদীর্ঘকাল ধরে এ স্নানে অংশ নেয়ার জন্য উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ অসেন লাখ লাখ পূণ্যার্থী।