মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

লকডাউনের পর থমথমে বন্দরের রসুলবাগ 

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২০  

বন্দর (যুগের চিন্তা ২৪) : বন্দরের রসুলবাগ এলাকা লকডাউনের পর সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্তব্দ হয়ে গেছে জীবন যাত্রা। করোনা আক্রান্ত হয়ে নিহত নারীর পরিবারের ৭ সদস্যসহ সেখানকার ১০০ পরিবারকে বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছেনা।


উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় হয়নি মহল্লার তিনটি মসজিদে। মোট কথা সেখানে এক ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। 


এ দিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নারীর সংস্পর্শে থাকা এক চিকিৎসক ও নার্সসহ ৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর কাছে থাকা একজন ওয়ার্ডবয়কে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

 
এ ব্যাপারে জেলা করোনা ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে সেবা প্রদানকারী একজন ডাক্তার, নার্স , অ্যাম্বুলেন্স চালক, প্রাইভেট ল্যাবের ল্যাব টেকনিশিয়ান, এক্সরে অপারেটর, আয়া ও চেম্বার অ্যাসিস্ট্যান্টকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। একজন ওয়ার্ড বয়কে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। 


সূত্র জানায়, অসুস্থ হওয়ার পর ওই নারীকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে আনা হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু পরিবারের লোকজন কুর্মিটোলা হাসপাতালে না নিয়ে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।পরদিন আবারও অসুস্থ হলে ৩১ মার্চ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করে। 


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিপোর্টে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। এরপর ওইদিন রাত ১০ টায় নাসিক ২৩ নং ওয়ার্ডের বন্দরের রসুলবাগ এলাকা লকডাউন করা হয়। লকডাউন ঘোষণাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহম্মেদ, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার, করোনা ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম, আইইডিসিআর এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 


ডা. জাহিদুল ইসলাম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই নারীর মৃত্যু হলে আইইডিসিআর তার নমুনা সংগ্রহ করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই রিপোর্টটি পজেটিভ আসে।


এলাকাবাসী জানান, ৩১ মার্চ কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর ওই নারীকে ওইদিনই তার নিজ বাড়ি বন্দরের রসুলবাগে নিয়ে আসা হয় এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাফন করা হয়। হাসপাতালে আনা-নেয়া এবং দাফন-কাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্থানীয় অনেক লোকের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওই নারীর সংর্স্পশে থাকা লোকেরাও অনেক মানুষের সংর্স্পশে এসেছেন। দাফনের পর লকডাউন পর্যন্ত পরিবারের লোকেরা অবাধে চলাফেরা করেছেন। তারা এখন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 


এলাকাবাসী আরও জানান, করোনা আক্রান্ত নারী কখনো দেশের বাইরে যাননি। তাদের বাড়ির কেউ বিদেশ ফেরত নন। তিনি কীভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি ওই নারী ইতালী ফেরত এক আত্মীয়কে (ভাইয়ের স্ত্রী) দেখতে ঢাকায় যান। সেখানে তিনি কয়েকদিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে ফেরার কয়েকদিন পর তিনি অসুস্থ হন। 


বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুল্কা সরকার বলেন, ২৩ নং ওয়ার্ডের রসূলবাগে ৫০ বছর বয়সী এক নারী ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালেগত ৩১ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে করোনাভাইরাস সন্দেহ হলে তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর।

বৃহস্পতিবার তার রিপোর্টে পজেটিভ আসে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এর নির্দেশনা অনুযায়ী রসূলবাগ এলাকাকে লকডাউন করা হয়েছে। 


শুক্লা সরকার জানান, ওই নারীর বাড়িসহ আশপাশের ১০০ পরিবারকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। রসুল বাগ এলাকায় প্রবেশের তিনটি রাস্তার দুটি রাস্তা টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত বাড়িতে প্রবেশ পথের গলির মুখে ৫ সদস্যের একটি পুলিশ টিমের পাহারা বসানো হয়েছে। চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 


শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের দেয়া ১০ কেজি করে চাল প্রত্যেক পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার আইইডিসিআর থেকে ওই নারীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন এবং কয়েকজন প্রতিবেশীর নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল। তবে শনিবার আইইডিসিআর থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য আসবেন বলে শুক্লা সরকার জানান।

এই বিভাগের আরো খবর