শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

র‌্যাব-১’র অভিযানে ৯ ডাকাত গ্রেফতার : আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : রাজধানীর তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকায় র‌্যাব-১’র একটি আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, ২ টি  চাপাতি, ১ টি ছোরা, ২ টি পাইপ, ১ টি কাঠের তৈরী লাঠি, ৩ টি রশি, ১৭টি সীম কার্ড, ১০টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৩শত ৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো-  মোঃ আসলাম আলম স্বাধীন (২৫), মোঃ আশরাফুল ইসলাম সনি @ বিশু (২৬), মোঃ রবিন (২৫), শামীম ইসলাম @ শামীম (২২), নাজমুল হাসান (২১), নিজাম উদ্দিন অপু (২৫), মোঃ মিজানুর রহমান (২৩), মোঃ তাইমুল ইসলাম (১৯), মোঃ মামুন (১৯)। সোমবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় র‌্যাব-১’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ সারওয়ার-বিন-কাশেমের স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।  


সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকায় কতিপয় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়। তারা দিনের বেলায় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ভয়ংকর হয়ে উঠে।

দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে আসা সাধারণ লোকজন এবং ঐ পথে যাতায়াতকারী গাড়ির আরোহীদের এই চক্রের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বিভিন্নভাবে ভীতি প্রদর্শন করে ও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে তাদের নিকটে থাকা মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রীসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। এই চক্রের ফাঁদে পরে অনেকেই শারিরীকভাবে লাঞ্ছনার স্বীকার হয়েছে বলে জানা যায়। 


বিষয়টি র‌্যাবের দৃষ্টিগোচর হলে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। বেশ কিছুদিন অনুসন্ধানের পর র‌্যাব-১ এর গোয়েন্দা দল দিয়াবাড়ি এলাকায় ডাকাতির সাথে জড়িত ভয়ঙ্কর একটি চক্রকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। 


এরই ধারাবাহিকতায় ৩ মার্চ  (সোমবার) দিবাগত রাতে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তুরাগ থানাধীন সেক্টর নং- ১৫/ডি, প্লট নং-৩৯, রোড নং- ১/এ (সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া, অবসরপ্রাপ্ত সচিব এর প্লটের দক্ষিণ দিকে) অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের সক্রিয় ওই ৯ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ২ রাউন্ড কার্তুজ, ২ টি  চাপাতি, ১ টি ছোরা, ২ টি পাইপ, ১ টি কাঠের তৈরী লাঠি, ৩ টি রশি, ১৭টি সীম কার্ড, ১০টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৩শত ৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।


গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করে। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকায় বেড়াতে আসা সাধারণ লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রীসহ সর্বস্ব ডাকাতি করে নিয়ে যায়। দিয়াবাড়ি এলাকায় ঘুরতে আসা মানুষ ছাড়াও এই পথে উত্তরা হতে মিরপুর যাতায়াতকারী প্রাইভেট গাড়িও তাদের অন্যতম একটি টার্গেট। 

এই চক্রের সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে ওৎ পেতে থাকে এবং রাস্তায় গাড়ি দেখা মাত্রই তাদের গতি রোধ করে সামনে রাস্তার কাজ চলছে বলে বিকল্প নির্জন কোন পথ দেখিয়ে যেতে বলে যেখানে চক্রটির অন্যান্য সদস্যরা আগে থেকেই ডাকাতির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত থাকে। তারা চলন্ত গাড়ি থামানোর জন্য রশি ও রোড ব্লকার ব্যবহার করে থাকে বলে জানায়। এছাড়াও তারা চলন্ত গাড়িতে পিছন থেকে পাথর দিয়ে ঢিল ছুড়ে যাতে চালক গাড়ি থামায়। 

আবার কখনো রাস্তার উপর দামি মোবাইল ফোন ফেলে রেখে চালককে গাড়ি থামাতে প্রলুব্ধ করে। এরপরও গাড়ি থামাতে ব্যর্থ হলে তারা গাড়ির উইন্ডশীল্ড লক্ষ্য করে ডিম ছুড়তে থাকে, এতে করে গাড়ি উইন্ডশিল্ডে ডিমের আবরণ পড়ে গেলে চালক গাড়ি থামাতে বাধ্য হয় এবং সেই সুযোগে তারা আরোহীদের উপর হামলা করে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়, শারিরীক নির্যাতন করে, বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।

এই চক্রের প্রত্যেকটি সদস্যের বিরুদ্ধে তুরাগ ও উত্তরা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। এই ভয়ংকর সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে। 

 গ্রেফতারকৃত আসামী আসলাম আলম স্বাধীন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ২০১০ সালে মুন্নু টেক্সটাইল মিল হাই স্কুল হতে এসএসসি পাশ করার পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। রাজধানীর উত্তরখানের বালুরমাঠ এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান আছে।

সে বিগত ০৪ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে সে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধকর্ম করে আসছে। তার দলে ১৪/১৫ জনের মত সদস্য রয়েছে এবং সকলে দিয়াবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে আসছে। 

এই ডাকাত দলের প্রধান আসলাম আলম স্বাধীন নিজে এবং তার নেতৃত্বে দলের অন্যান্যরা ডাকাতি কার্যক্রম করে থাকে। সে ২০১৮ সালের জুন মাসে র‌্যাব-১ কর্তৃক ইয়াবা ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার হয় এবং ৪৭ দিন কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে মাত্র ১৩ দিনের মাথায় ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তুরাগ থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় বিভিন্ন মেয়াদের কারাভোগ করেছে। 

ধৃত আসামী আশরাফুল ইসলাম সনি @ বিশু’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে উত্তরা স্কুল এন্ড কলেজে ৯ম শ্রেণীর পর পড়াশোনা ছেড়ে দেয় এবং ২০১০ সালে একটি উত্তরার একটি বায়িং হাউজে চাকুরী নেয়। সাত মাস চাকুরী করার পর সে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় স্বাধীন, সাজু, রবিন, অপু, কাউছারদের সহযোগীতায় ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। একই সাথে তারা উত্তরা ও দিয়াবাড়ি এলাকায় ডাকাতি শুরু করে। 

ধৃত আসামী মোঃ রবিন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রের সাথে জড়িত। ইতিপূর্বে সে একটি বায়িং হাউজে চাকুরী করত। মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাত দলের মূল হোতা স্বাধীনের সাথে পরিচয়ের পর সে এই চক্রের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পরে এবং নিয়মিত ডাকাতি শুরু করে। সে ২০১৭ সালে তুরাগ থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয় এবং কারাভোগ করে বলে জানা যায়।

ধৃত আসামী শামীম ইসলাম @ শামীম’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে রাজউক উত্তরা আইডিয়াল স্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে। সে স্বাধীনের মাধ্যমে এই চক্রে জড়িত হয় এবং ইয়াবা ব্যবসাসহ নিয়মিত ডাকাতি শুরু করে। এই চক্রের মূল হোতা স্বাধীনের নেতৃত্বে তারা প্রত্যেকে উত্তরা ও তুরাগ এলাকায় ডাকাতি করে বলে ধৃত আসামী স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় একাধিক মামলা আছে এবং সে একাধিকবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বলে জানা যায়। 


ধৃত আসামী নাজমুল হাসান’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে স্বাধীনের সহযোগীতায় দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে। সে নিজেও ইয়াবা আসক্ত বলে জানায়। ইয়াবা ব্যবসার সূত্র ধরে সে এই ডাকাত দলের সাথে জড়িত হয় এবং স্বাধীন ও তার দলের সাথে তুরাগ ও উত্তরা এলাকায় নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং সে একাধিকবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। 

ধৃত আসামী নিজাম উদ্দিন অপু’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ২০১৩ সালে উত্তরা স্কুল এন্ড কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে এবং ফার্মগেইট এলাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নেয়। গত ০৬ মাস পূর্বে সে চাকুরী ছেড়ে দেয় এবং ইয়াবা ব্যবসা শুরু করে। সে নিজেও ইয়াবা আসক্ত বলে জানায়। ইয়াবা ট্যাবলেট ব্যবসার সূত্র ধরে স্বাধীন ও তার গ্র“পের সাথে তার পরিচয় হয়।

সেই থেকে তারা ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি দিয়াবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে। ধৃত আসামী ইতিপূর্বে একবার উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয় এবং ০১ মাস কারাভোগ করে বলে জানা যায়। 

ধৃত আসামী মিজানুর রহমান’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ২০১৬ সালে ঢাকায় আসে এবং ধৃত অপর আসামী রবিনের সাথে পরিচয় হয়। পরর্তীতে রবিন তাকে স্বাধীনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদের দলে কাজ করার জন্য বলে। এরপর থেকে সে এই চক্রের সাথে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছে। সে ২০১৮ সালে তুরাগ থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয় এবং কারাভোগ করে বলে জানা যায়।

ধৃত আসামী তাইমুল ইসলাম’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে পেশায় একজন লেগুনা চালক। লেগুনা চালানোর পূর্বে সে উত্তরার শান্তা মারিয়াম ক্যান্টিনে চাকুরী করার সময় স্বাধীন, রাকিবদের সাথে পরিচয় হয় এবং তাদের সাথে  ডাকাতি কাজে জড়িত হয়। সে তুরাগ থানা পুলিশ কর্তৃক ধৃত হয় এবং কারাভোগ করে বলে জানা যায়।

ধৃত আসামী মোঃ মামুন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে উত্তরায় একটি বায়িং হাউজে চাকুরী করে। তার শ্বশুর বাড়ি তুরাগের পাকুরিয়া এলাকায় হওয়ায় স্বাধীন ও রাকিবদের সাথে পরিচয় হয় এবং তাদের মাধ্যমে ডাকাতি কাজে জড়িত হয়। সে এ যাবত দিয়াবাড়ি ও উত্তরা এলাকায় অসংখ্য বার ডাকাতি করেছে বলে স্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একাধিক মামলা রয়েছে এবং সে একাধিকবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে বলে জানা যায়। 

উদ্বারকৃত আলামত ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
 

এই বিভাগের আরো খবর