বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রূপগঞ্জের প্রায় ৬০ ভাগ মা জন্মের পরপরই তার শিশুকে তোলা খাওয়ান

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৯  

রূপগঞ্জ (যুগের চিন্তা ২৪) : সদর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রাম। দিনমজুর ফোরকান মিয়ার স্ত্রী ইয়ারুন নেসা। বয়স ১৯। দুই সন্তানের মা। ছোট সন্তান ইব্রাহিমের সবে দুই মাস। এক সপ্তাহ ধরে সে পাতলা পায়খানায় ভুগছে। পেটের পীড়ায় হাউমাউ করে কাঁদছে। 


গত বুধবার ছেলেকে নিয়ে তিনি এসেছিলেন মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ইয়ারুন নেসা বলেন, বুকে দুধ না আসায় ছেলেকে তোলা (বুকের দুধ বাদে অন্য খাবার) খাওয়াচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অবশ্য মায়েদের অপ্সাতাকেই দায়ী করছেন। 


তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জের প্রায় ৬০ভাগ মা জন্মের পরপরই তার শিশুকে তোলা খাওয়ান। এর ফলে অনেক শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, মায়েরা কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে সঠিক নিয়মে দুধ খাওয়ান না। ফলে অনেক শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে পরিবার পরিকল্পনার কর্মীরা কালেভদ্রেও জাননা। ঐসব এলাকার মায়েরা বুকের দুধের পুষ্টির ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। পরিবার পরিকল্পনার কর্মীরা ছাড়া শিক্ষক, এনজিও কর্মী কিংবা কোন সমাজকর্মী তাদের এ ব্যাপারে সচেতন করেননি। 


সরেজমিনে উপজেলার পিংনাল, চানমারী, বৈলদা, জিন্দাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুওে দেখা গেছে, অধিকাংশ মা জন্মের পরপরই তার কোলের শিশুকে তোলা খাওয়াচ্ছেন। তারা মনে করছেন তোলা খাবারে বাচ্চার উপকার বেশি। কথা হয় গুচ্ছগ্রামের পিয়ারা বেগমের সঙ্গে। তার কোলে ৩ বছরের মেয়ে ঝুমা। হাড্ডি কঙ্কাল সাড়। শরীর শুকিয়ে চামড়ার সঙ্গে মিশে গেছে। 


গত মাসে ডাক্তার দেখানোর পর তাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ঝুমার পিঠাপিঠি এক বছর বয়সী বোন সোমা। সারাক্ষণ পেটের পীড়ায় ভোগে। পাতলা পায়খানা, আমাশয় লেগেই থাকে।

 

পিয়ারা বেগম বলেন, শুকিয়ে যাওয়া ঝুমার দুই মাস বয়স থেকেই তিনি বুকের দুধের সঙ্গে তোলা (ভাত, জাউ, চালের গুঁড়া, মাড়) খাইয়েছেন। তাঁর ছোট মেয়ে সোমা তিন মাসের বেশি বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি। তার দু’মেয়েই এখন স্বাস্থ্যহীন, রোগা পাতলা। তারা ঘনঘন পেটের পীড়া, দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্টে ভোগে। 


কথা হয় বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন মায়ের সঙ্গে। তারা বলেন, জন্মের ছয় মাস আগেই তাদের সন্তানদের  বুকের দুধের সঙ্গে জাউ, পানি, ভাতের মাড় খাইয়েছেন। বুকের দুধের সঙ্গে এসব খাওয়ালে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হবে, এাঁ জানতেন না তারা। বরং সন্তানের বৃদ্ধির কথা ভেবেই তারা এসব খাইয়েছেন। 


এসব খাওয়ালে সন্তানের অনিষ্ট হয় এমন কথা তারা কোনদিন শোনেননি। নিজেরা সন্তানের দুগ্ধদানকালে বাড়তি ও পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এই মায়েদেরই দাবী, বুকে দুধ না আসায় তারা সন্তানকে তোলা খাওয়ান। 


মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাক্তাররা বলেন, মায়ের বুকে দুধ আসে না, বাচ্চা খেতে পায় না, এটা ঠিক নয়। বাচ্চাকে বেশি বেশি স্তন চুষতে দিলে দুধ আসবে।


 তা ছাড়া দুগ্ধপানকারী মাকে এ সময় অতিরিক্ত খাবারের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। মায়ের পুষ্টি ঘাটতি কম থাকলে শিশু দুধ কম পাবে। খাবারদাবারে মায়ের পুষ্টি ঘাটতির প্রভাব শিশুর ওপড়ও পড়ে। 


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ বলেন,  মায়ের দুধের কোন তুলনা হয়না। প্রতিটি শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো ভালো। 
 

এই বিভাগের আরো খবর