বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রূপগঞ্জে মৎস চাষীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : এবার রূপগঞ্জে এক মৎস চাষীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। ওই মৎস চাষীর চাষ করা মৎস খামার জবরদখল করে মাছ লুট করে উল্টো চুরির অপবাদ দিয়ে ফজরের নামাজের সময় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালায় তারা।


শুধু তাই নয়, নির্যাতনকারীরা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে, একটি মামলা করলে মৎস চাষীকে দশটি মামলা দেয়া হবে, বেশি বারাবারি করলে এলাকা ছাড়া করা হবে, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি তাদের পকেটে রয়েছে। বিষয়টি পুলিশের কাছে সহযোগীতা না পেয়ে সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত ওই ভুক্তভোগী। নির্যাতিত মৎস চাষীর নাম মজনু চৌধুরী। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলার আতলাপুর গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে। 


মজনু চৌধুরী কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে জানান, তিনি একজন গরীব মানুষ। মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রিত হয়ে কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি কাজ, মাছ চাষ  ও তরিতরকারি চাষ করেন।


 বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান ও স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মারা যাওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মাহাবুর, মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে আকবর মিয়া, আইয়ুব মিয়া, ইয়ানুছ মিয়ার ছেলে মাজাহারুল ও নাজমুলসহ তাদের নিয়োজিত সন্ত্রাসী বাহিনী বাড়িঘর জবরদখল করতে মজনু চৌধুরীকে নানা ভাবে হয়রানি ও নির্যাতন চালিয়ে আসছে। 


মজনু মিয়া বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহন করে বাদশা সরকারদের কাছ থেকে ৪ বিঘার পুকুর, মামুন ভুইয়ার এক বিঘার পুকুর ও আরিফ সরকারের এক বিঘার পুুকুর বর্গা নিয়ে মৎস চাষ করে আসছেন। এসব মৎস পুকুরে রুই, কাতলা, মির্কা, ব্রিগেট, গ্রাস কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। 


পুকুরের চারপাশের পাড়ে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন তিনি। গত ৩ মাস পুর্বে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা এক বিঘার একটি পুকুর জবরদখল করে নিয়ে যায়। বাকি দুইটি পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে দেয়। পুকুর পাড়ে চাষ করা লাউসহ সবজি গাছ কেটে ফেলে। পুকুরে গেলেই মজনু চৌধুরীকে হত্যা ও হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। এসব ব্যপারে একাধীকবার ভোলাব তদন্ত কেন্দ্র পুলিশ অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।


এদিকে, গত এক মাস আগে অপর এক জনের একটি পুকুরে মাছ চুরির দায়ে চারিতালুক এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে মাছসহ জাল গলায় পেচিঁয়ে বেধে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায় উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা।


পরে মোশারফকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। পুর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা ফজরের নামাজরত অবস্থায় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে এসে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মজনু চৌধুরীকেও চুরির অপবাধ দিয়ে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। পরে পাশবিক নির্যাতন চালায় নির্যাতনকারীরা। 


এক পর্যায়ে নির্যাতনকারীরা হুমকি দিয়ে বলে, একটি মামলা করলে মৎস চাষীকে দশটি মামলা দেয়া হবে, বেশি বারাবারি করলে এলাকা ছাড়া করা হবে, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি তাদের পকেটে রয়েছে। পরে পরিবারের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় মজনু চৌধুরীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 


এদিকে, চুরির দায়ে মামলা না দিয়ে পুলিশ দিয়ে নির্যাতিত মোশারফ হোসেনকে  বিশ লিটার চোলাই মদ দিয়ে একটি মাদকের মামলা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এক মাস চিকিৎসার পর বাড়িতে এসে নির্যাতনের বিচার ও ঋণ নিয়ে চাষ করা মাছের পুকুর ফেরত এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মজনু চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগমের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় ইউএনও মমতাজ বেগম এর সঠিক বিচার ও চাষ করা পুকুর ফেরতের আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। 


এ ব্যপারে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকলে অব্যশই কঠোর ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ব্যপারে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 


ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, অভিযোগটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ব্যবস্থা না নিলে সড়েজমিনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্যাতন জুলুমবাজ ও দখলবাজদের কোন ছাড় দেয়া হবেনা বলেও হুশিয়ারী দেন ইউএনও।  
 

এই বিভাগের আরো খবর