বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রূপগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি পারাপার, ভোগান্তি চরমে

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৯  

রূপগঞ্জ (যুগের চিন্তা ২৪) : রূপগঞ্জে মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করছে যাত্রী সাধারনসহ যানবাহন গুলো। গত কয়েক দিনে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে ফেরি ঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে গেছে, জরাজীর্ণ পল্টুনে পানি ঢুকে পড়েছে। 


ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। হাটু থেকে কোমড় পর্যন্ত পানি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে কয়েকটি যানবাহন পানিতে আটক পড়ে গেছে। 


ঘাটের দুটি ফেরি রয়েছে। আর দুটি ফেরিতে দুটি করে চারটি ইঞ্জিন রয়েছে কিন্তু চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটি ইঞ্জিন প্রায় সময়ই বিকল থাকে। 


এ জন্য ঘাটে ফেরি ভিরাতে গিয়ে প্রচন্ড বেগে ধাক্কা লেগে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। শুধু তাই নয়, পল্টুন ও গ্যাংওয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। 


জরাজীর্ণ গ্যাংওয়ে ও পল্টুন দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের পা কেটে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইঞ্জিন বিকলের কারনে প্রায় সময়ই ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় যাত্রী সাধারনের। প্রতিদিন দেশের প্রায় ১৭টি জেলা থেকে আগত যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর এ ফেরি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। 


জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক যোগে আসা প্রায় ১৭টি জেলার সাধারন যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে পারাপার হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করছে । 


বিশেষ করে কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনি, চট্রগাম, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মৌলিবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জের যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলাচলের কারনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে ফেরি পথ ব্যবহার করছে অনেক যানবাহন। 


অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশ পথ হিসেবে যাত্রীসাধারন শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানাবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারনেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দুটি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।


ওই দুটি ফেরি প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বর্তমানে ফেরির দায়িত্বে রয়েছেন সুমন এন্টার প্রাইজের মালিক সমর আলী সরদার। 


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পারের রাস্তাটি প্রশস্থ অনেকটা কম। এ সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায়। 


সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সব সময়ই এসব ভাঙ্গা গর্তে পানি জমে থাকে। গর্তে পড়ে প্রায় সময়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা।


বিভিন্ন সমস্যার কারনে ফেরি দুটি দিয়ে এসব যানবাহন সময় মতো পারাপার করতে না পারায় বেশির ভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর দুই পারের ফেরি লাগানো গ্যাংঅয়ে ও পল্টুনের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ষ্টীলের সিট গুলো খসে খসে পড়ছে। 


পল্টুনের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। অনেক সময় সেলু মেশিন দিয়ে সেচেও পানি কমাতে হচ্ছে। ফেরির উপরের পিচ উঠে গিয়ে স্টীলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহন গুলো স্লিপ করে। 


ফেরিঘাটের দুই পাড়ই অতিরিক্ত ঢালও হওয়ায় অনেক সময় গাড়ি উঠতে বা নামতে গিয়ে দুর্ঘটনা বা বিকল হয়ে পড়ে।  দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। 


ইঞ্জিন ও ফেরির বডি মেরামত করে এখন পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি। এসব সমস্যা নিয়ে ইজারাদাররা কর্তৃপক্ষকে জানালে তেমন কোন কাজ হয়না। জ¦ালাই মেশিন ও রেকার আনলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০  হাজার টাকা গুনতে হয়।

 

যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময় মতো ওই পার না পৌছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল ¯্রােতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পড়ে অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে টেনে আনতে হয়। 


বিশেষ করে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে গ্যাংওয়ে ডুবে গেছে, পানি ঢুকে পল্টুনও ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীতে প্রচন্ড ¯্রুত রয়েছে। আর এ অবস্থায় ফেরিঘাট দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই যানবাহন চলাচল করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। 


সুমন এন্টার প্রাইজের মালিক সমর আলী সরদার বলেন, আমরা এসব সমস্যার ব্যপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানালে তারা এসে কাজ করে দিয়ে যায় কিন্তু ফের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। 


বর্তমানে ফেরির ইঞ্জিন সচল থাকলেও গ্যাংওয়ে ডুবে যাওয়ায় বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। গ্যাংওয়ে উপরে উঠিয়ে দিলে ভোগান্তিটা কমে যাবে। এছাড়া ফেরির অন্যান্য সমস্যা গুলো সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে। 


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদের বিভাগের এসডি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফেরির সমস্যা হলে সমাধানও করা হয়। এখন যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধান করা হবে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর