মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

রিক্সার চাক্কা না ঘুরলে কি আর সংসারের চাক্কা ঘুরবো!

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : করোনা ভাইরাসের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে সতর্কতায় সরকার ঘোষিত ছুটি ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশে শহরে গণপরিবহন শূন্য ফাঁকা রাস্তায়ও দেখা যাচ্ছে সিএনজি, ইজিবাইকসহ রিক্সার চলাচল। 

 

শহরে লোকসমাগম কম থাকায় যাত্রী’র অপেক্ষায় বেশীরভাগ চালককেই পার করতে হচ্ছে অলস সময়। নুন্যতম আয়টুকু করতে না পারলে মহাজনের জমার টাকা দিয়ে থাকবেনা পরিবারের মুখে ডাল ভাতের পয়সা। এমন অবস্থায় রিক্সা নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয় ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ হাশেম মিয়াকেও। করোনার এমন সতর্কতাও ঘর বন্দি করে রাখতে পারেনি তাকে। অপেক্ষা করে থাকতে হয় যাত্রীর জন্য। একরাশ কষ্ট বুকে চেঁপে রেখে তাকেও বলতে হয়, ‘রিক্সার চাক্কা না ঘুরলে কি আর সংসারের চাক্কা ঘুরবো ? ডরাইলেতো আর পেট চলবেনা।’
 

দুপুর গড়িয়ে তখন বিকেল। চাষাঢ়া খাজা সুপার মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার উপর দেখা গেল রিক্সা’র উপর বসে চিন্তামগ্ন অবস্থায় বসে আছেন ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। কয়েকবার ডাকার পর হকচকিয়ে ফিরে এলেন বাস্তব জগতে। যেন সদ্য জেগে উঠলেন ঘুম থেকে। জিঞ্জেসে করলেন, আমারে কিছু কইলেন চাচা ?
 

এই বয়সে দেশের এমন সতর্কাবস্থায় আপনি কেন রিক্সা নিয়ে বের হলেন জিজ্ঞেস করতেই ছলছল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তিনি। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, তার নাম হাশেম মিয়া। গ্রামের বাড়ি শেরপুর। দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে সবারই বিয়ে সাদী হয়ে আলাদা সংসার। ছেলে তার পরিবার নিয়ে এখানেই আলাদা হয়ে যায়। ছেলের উপার্জনে তার সংসার চালাতেই সমস্যা তাই হাশেম মিয়া ও তার স্ত্রী’র রোজগারের দায়িত্ব এখন তার রোজগারের উপরই নির্ভর করে। তার ছেলে সারাদিন কাজ করে না। তাই এই রিক্সাটা এক বেলা ছেলে চালায় আরেক বেলা চালান তিনি। অর্থাৎ দুইজনে আধবেলা করে একই রিক্সা চালায়।
 

এই আধবেলা কাজ করে কত টাকা উপার্জন হয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এর আগে দেশের অবস্থা যখন স্বাভাবিক ছিল। তখন আধবেলা রিক্সা চালালে জমার টাকা দিয়েও তার মোটামুটি আড়াইশো তিনশো টাকা থাকতো। কিন্তু এখন চিত্র সম্পুর্ণ ভিন্ন। রাস্তায় বসে থাকতে থাকতে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে, তারপরও বসে থাকতে হয় কিছু উপার্জনের আশায়। কারন হিসেবে তিনি জানান, রিক্সার চাকা না ঘুরলে তার সংসারের চাকাও ঘুরে না। চাল ডাল কেনার পয়সাও থাকেনা। তাই এইসব ডরাইলে, রিক্সা নিয়ে না বের হলেতো আর তাদের পেট চলবেনা। আধবেলা শেষে মহাজনের টাকা জমা দিয়ে দেড়শো টাকা উপার্জন করাও অনেক কষ্ট হয়ে পড়ে। তাই এই করোনার পরিস্থিতি থেকে আল্লাহ যতো দ্রুত মুক্তি দিবে তাদের কষ্টও তত দ্রুত লাঘব হবে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর