শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রাজনীতি : আর্কষণীয় না লোভনীয়?

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০১৯  

নচিকেতা নামক একজন প্রতিবাদী কণ্ঠশিল্পী গানে গানে বলেন “মন্ত্রীরা সব হারামজাদা” বলে রাজনীতিকে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার সাথে তুলনা করে বলেছেন যে, রাজনীতিতে ডান বামের কোন আদর্শ নাই, আজকে যে ডানে কালকে সে বামে, সুবিধামত এক জায়গায় বসতে পারলেই হলো। 


প্রকৃত পক্ষে রাজনীতি হলো একটি আর্দশিক বিষয় যা খুবই একটি আকর্ষণীয়, কিন্তু বর্তমানে রাজনীতিকদের কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাজনীতি একটি লোভনীয় বিষয়। লোভের বশবর্তী হয়ে জনতার চোখে প্রখ্যাত গায়ক নচিকেতার ভাষায় “হারামজাদা” হতেও কোন আপত্তি বা বিপত্তি নাই। লোভনীয় পদে অধিষ্ঠিত হতে রাজনীতিকদের চক্ষু লজ্জা তো উঠেই গেছে বরং তাদের মানসিক ভারসাম্য এমন জায়গায় ঠেকেছে যে তারা জনগণকে “ছদগার ছাগল” মনে করে, কারণ জনগণকে যে ভাবেই হউক জবাই করতে পারলেই হলো (!)

 

জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সিলেট জনসভায় আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের সবচেয়ে বেশী সমালোচনা করেছেন সুলতান মুনসুর। তিনি ছিলেন ১/১১ সরকারের অন্যতম দোসর। তিনি বিএনপি’র নির্বাচনী মার্কা “ধানের শীষ” নিয়ে আওয়ামী ঐক্য জোটের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কর্মকান্ডের, সরকার পরিবর্তনের জন্য জনগণকে আশার আলো দেখিয়েছেন।


তিনিই ২২/৩/২০১৯ ইং তারিখে বলেছেন যে, “আমি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কার করেনি বা আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাইনি। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত হয়েও আমি শপথ নিয়েছি।” জনগণ বিবেচনা করবেন সুলতান মুনসুর আদর্শিক কথা বলছেন, না লোভের বশবর্তী হয়ে ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করলেন ? 


তবে তিনি যে জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন তা কি তিনি খন্ডাতে পারবেন? তার বক্তব্য মতে তিনি যদি আওয়ামী লীগেই থেকে থাকেন তবে গণ ফোরামে যোগ দিয়ে আওয়ামী বিপরীত মার্কা “ধানের শীষে” প্রার্থী হয়ে জনগণের ভোট প্রার্থনা করলেন কেন? একই সাথে দু’টি সামাজিক সংগঠন করা যায় কিন্তু একই সাথে কী দুইটি তথা সরকারি এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল করা যায় ? 

 

সুলতান মুনসুর যদি আওয়ামী লীগই থেকে থাকেন তবে কি শুধু মাত্র নমিনেশনের আশায় গণফোরাম যোগ দিয়ে ছিলেন ? সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোট দান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে কোন নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।” 

 

সংসদ থেকে তার সদস্য পদ যাতে বাতিল না হয় শুধুমাত্র একারণেই নিঃলজ্জের মত সুলতান মুনসুর বলেছেন যে, তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন নাই ? জাতীয় সংসদই এ মর্মে কি সিদ্ধান্ত নিবে তাহাও এখন দেখার বিষয়। জাতীয় সংসদ যেহেতু এখন আওয়ামী লীগের দখলে (সংসদ বিরোধী দলসহ) যেহেতু স্পীকারও বিষয়টিতে চুপ থাকতে পারেন। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর খেয়াল খুশীর উপর। 


বাংলাদেশের রাজনীতি কী এতোই সস্তা হয়ে গেলো যে, মুখভরা ফাঁকা বুলি দিয়ে জনগণকে পটানো যায় (!) জেলা পর্যায়ে দেখা যায় যে, বিএনপি’র বড় বড় পদে থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মঞ্চে বক্তৃতা করছে। অথচ বিএনপি থেকে এ মর্মে কোন প্রকার সাংগঠনিক ব্যবস্থা নাই। সাংগঠনিক নিয়ম শৃঙ্খলা যেখানে মানা হয় না সেখানেই ঘুনে ধরে যা সহজে উপলব্দি করা যায়, তবে যখন ঘুনে ধরা “আবাসে” ধস নামে তখন প্রতিকারের আর সুযোগ থাকে না।


 দলীয় নেতাদের প্রতি উচ্চ পর্যায়ের নেতারা সংগঠনিক এ্যাকশন থেকে বিরত থাকার কারণ উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও দলীয় গ্রুপিংএ জড়িত নতুবা লোভ তাদের পিছু ছাড়ছেন না, বিএনপি কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ সম্পর্কে কি জবাব দিবেন ? জবাবদিহিতা না থাকার ফলে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মনে যে রক্ত ক্ষরণ হয় তার প্রতিকার না করাটা কী দলের জন্য শুভকর হচ্ছে ? 


   
এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার 


লেখক : কলামিষ্ট ও আইনজীবি (এ্যাপিলেট ডিভিশন)   
মোবাঃ ০১৭১১-৫৬১৪৫৬
E-mail: [email protected]   

এই বিভাগের আরো খবর