বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রক্তের বিনিময়েও হকারমুক্ত হয়নি বঙ্গবন্ধু সড়ক

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নগরীর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু  সড়কের ফুটপাতকে হকারবিহীন করতে কত ঘটনাই না ঘটেছে। প্রথমে পুলিশের সাথে হকারদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা, মেয়র আইভীর কাছে হকারদের স্মারকলিপি, হকারদের সাথে মেয়র আইভীর বৈঠক, মেয়রের কঠোর অবস্থান, হকারদের নারায়ণগঞ্জকে অচল করে দেয়ার হুশিয়ারী, নারায়ণগঞ্জ শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের সাথে হকারদের বৈঠক তারপর নারায়ণগঞ্জের হকারদের তালিকা প্রদানের সিদ্ধান্ত, জেলা প্রশাসকের কাছে হকারদের স্মারকলিপি ও অর্ধ তালিকা প্রদান, পরিশেষে গত ১৬ জানুয়ারি নগরীর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঘটনা কোন কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না হকাররা। কয়েকদিন ফুটপাতে হকার বসা বন্ধ হলেও আবারো দখল ফুটপাত। আগের মতোই বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাত দখল বজায় রেখেছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা। রক্তের বিনিময়েও বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় নি নগরবাসীর।

 

এখনও নগরীর এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে  হকারদের জাকিয়ে বসার কারণে পথচারীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটও। কিন্তু  এই হকার মুক্ত করতে সিটি করপোরেশন, পুলিশ অভিযান চালিয়েছে নানা সময়। এখনও চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অভিযান শেষ হতে না হতে ফুটপাতগুলো আবারও ফিরছে আগের চিত্রে।

 

গত বছর থেকে এ বছরের বিভিন্ন সময়ে হকার উচ্ছেদে অভিযান হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বারবার উচ্ছেদের পরও কেন সড়কে বসে আছেন- জানতে চাইলে  পোশাক ব্যবসায়ী আমিনুল্লাহ  যুগের চিন্তা ২৪ কে বলেন, ‘যতদিন না আমাগো বসার জায়গা দিব ততদিন  এইখানেই বসমু। মারবেন, ধরবেন, উপায় নাই। আমার পেট আছে, পুলা-মাইয়ার পেট আছে।

 

শনিবার (১১ আগষ্ট) বিকেলে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় চাষাঢ়া খাজা সুপার মার্কেট থেকে হকাররা সড়কে বসে তাদের পণ্য বিক্রির জন্য ডাকাডাকি করছেন। আবার অনেকে দোকান বসানোর তোড়জোড় চালাচ্ছে। একটু সামনে এগিয়ে আসতেই দেখা যায় রাস্তার দুইপাশ সহ হাঁটাচলার কিঞ্চিত জায়গা রেখে ফুটপাতের অধিকাংশ দখল হয়ে গিয়েছে। তাই অনেকে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে।

 

পথচারী মমিনুর রশীদ  জানান, কম তো করলো না। হকার উঠানোর জন্য। এখন তো আরো বেড়ে গেছে। বিকেল  হলেই হাঁটার জায়গা পর্যন্ত পাওয়া যায় না। তার ওপর সারাদিন তো আছেই। তাই বাধ্য হয়ে নিচে দিয়েই যাওয়া আসা করি।

 

পরিবার নিয়ে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে আসা ইব্রাহিম জানান, এত কিছুর পরেও কিভাবে ওদের এতো সাহস হয় যে আবারো ফুটপাতে বসার। কারো সহযোগীতা ছাড়া এমনটা সম্ভব না। মর্ডাণের সামনে দিয়ে আসলাম। হাঁটার জন্য এক হাত জায়গা রেখে বাকিটা ওদের দখলে।  ভীড় ঠেলে ওয়াইফ (স্ত্রী) আর দু ছেলেকে নিয়ে এ পর্যন্ত আসলাম।

 

আরেকজন পথচারী জানান, শুধু বঙ্গবন্ধু সড়ক প্রেস ক্লাবের গলিতে যান,পুরো নগরীতে যান একই অবস্থা। এই হকার উচ্ছেদের জন্য কত ঘটনা কত কিছু। রক্ত যুদ্ধ পর্যন্ত হইছে। কিন্তু সুষ্ঠু সমাধান কেউ দিতে পারেনি।

 

পুরো বঙ্গবন্ধু সড়কে ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে কাপড়, জুতা, ফলসহ নানা পণ্যের স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান। মর্ডানের সামনে এক জুতা ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে  তিনি জানান, ‘বেচাকেনার উপযুক্ত জায়গা পাই না। তাই বাধ্য হয়ে এখানে বসতে হয়।’

 

উচ্ছেদের পরপর বার বার বঙ্গবন্ধু সড়ক আবার দখল হয়ে যাওয়ার কারণ নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম এহতেশামূল হক জানান, আমাদের কিছু বলার নেই। সিটি করপোরেশনের অবস্থান সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জবাসীই ওয়াকিবহাল আছে।

 

উচ্ছেদের পরপর বার বার বঙ্গবন্ধু সড়ক আবার দখল হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সদর থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ফুটপাত হকারমুক্ত রাখার জন্য। তবে একটু সময় লাগবে।

এই বিভাগের আরো খবর