বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মেঘনা নদীতে ফের সক্রিয় চোরা তেল কারবারী

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

সোনারগাঁ (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে তেল চোরা কারবারীরা। প্রতিদিন বিভিন্ন জাহাজ থেকে কোটি কোটি টাকার তেল চুরি  করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব চুরি হওয়া তেল স্থানীয় বাজার ও নদীর ঘাটে দোকান খুলে বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত নৌযানে বিক্রি হচ্ছে।এসব সিন্ডিকেটের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে নদীতে চলাচলরত জাহাজ শ্রমিক ও কর্মচারীরা। 

 

এ সিন্ডিকের সাথে পিরোজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০-২৫জন জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের প্রভাবের কারণে স্থানীয় প্রশাসনও অসহায় হয়ে পড়েছে। তবে কিছু তেল চোর সিন্ডিকেটের সাথে সোনারগাঁ থানা পুলিশের অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে জানা যায়। 

 

র‌্যাব-১১ একটি দল সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে তেল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতা রফিকুল ইসলাম সরকারসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে। পরে ৯ দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে এসে রফিকুল ইসলাম তার চক্র নিয়ে সক্রিয়ভাবে তেল চুরি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।


জানা যায়, উপজেলার ছয়হিস্যা গ্রামের মৃত কাশেম সরকারের ছেলে রফিকুল ইসলাম সরকার, মেঘনা প্রতাবের চর গ্রামের ছমিরউদ্দিন প্রধানের ছেলে সাহাবুদ্দিন, সেলিম রেজা, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন, লুৎফর রহমান, নজরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম ও শ্যামলসহ ২০-২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট মেঘনা নদীতে বিভিন্ন জাহাজ থেকে সয়াবিন, পামওয়েল, ডিজেল ও কেরোসিন তেল চুরি করে নিয়ে আসে। চুরি করা এসব তেল স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে ও মেঘনা নদীর তীরে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে ডিজেল ও কেরোসিন তেল বিক্রি করে থাকে। চুরির তেলের ব্যবসা করে এ সিন্ডিকেট অল্প দিনেই কোটিপতি বনে গেছেন। 


এসব সিন্ডিকেটকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সেল্টার দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। এছাড়াও তাদের এসব অবৈধ ব্যবসায়ের টাকার ভাগ সোনারগাঁ থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি থানা প্রশাসন।

 

সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে ১০ ব্যারেল চোরাই তেলসহ মেঘনা ঘাট এলাকা থেকে সেলিম রেজা নামের এ সিন্ডিকেটের সদস্য  গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর তাদের সিন্ডিকেটের নাম একে একে বেরিয়ে আসে। সেলিম রেজাকে র‌্যাবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে সিন্ডিকেটের প্রধান রফিকুল ইসলাম সরকার ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে গিয়ে টাকাসহ গ্রেফতার হয়। তার স্বীকারোক্তিতে র‌্যাব তার বাড়ির ঘাট থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকার চোরাই তেলসহ তিনটি স্টিলের বোর্ড জব্দ করে। এ ঘটনায় ৯ দিন হাজত বাস করার পর জামিনে এসে রফিকুল ইসলাম ও সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে ওই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

 
এদিকে এবছরের ১৫ জুলাই রফিকুলের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে মাদক ও চোরাই তেল ব্যবসা বন্ধের দাবিতে ছয়হিস্যা ও কান্দারগাঁও গ্রামের বাসিন্দাদের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কাছে দেওয়া হয়। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছয়হিস্যা গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে রফিকুল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই মামলা হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। অবৈধ সকল অপকর্ম করে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছে রফিকুল। তাকে রাজনৈতিক ব্যাক্তি, সোনারগাঁ থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় দু’তিন জন গনমাধ্যম কর্মী সেল্টার দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। 


এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও জাপা নেতা আলমগীর হোসেন ও রহম আলীর ছেলে লুৎফর রহমানের বাড়ির পাশে চেল চুরি করে এ সিন্ডিকেট তেল ভর্তি ট্রলার ভিড়িয়ে রাখে। আলমগীর মেম্বারের শেল্টারেও রফিকুল ইসলাম ফ্লিমি স্টাইলে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে মেঘনা নদী দিয়ে এ তেল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে দেয় এ সিন্ডিকেট।


অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সোনারগাঁ থানা পুলিশ তদন্ত করছে।


সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, তেল চোর সিন্ডিকেট চক্রকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে। পুলিশের কোন সদস্য জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরো খবর