বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মৃত্যুর আগে ঝলসে যাওয়া সুমন জবানবন্দিতে যাদের নাম বললেন (ভিডিও)

প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪): একটি হাসপাতালের বেডে পোড়া শরীর নিয়ে কাৎরাচ্ছেন সুমন। কেউ একজন তাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। একটি পুরুষ কন্ঠ সুমনকে কান্নাজড়িত কন্ঠে জিজ্ঞেস করছে অ ভাইয়া একটু কষ্ট কইরা আরেকবার কও ভাইয়া তোমার এই কামডা ভাই কে কে করলো ভাইয়া?

প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, বিপ্ল­বে, শায়লায়, সোহেল মন্ডল, খানকার মোড়ের হোটেল মাসুদ। তখন তার বোন রীতা জানতে চান, ভাই এসিড দিছে শরীরে? কী দিছে ভাই? কী দিয়া আগুন দিছে ভাই?

রীতার প্রশ্নের জবাবে সুমন বলেন, এসিড দিসে মনে হয়। তারপরেই গোঙ্গাতে থাকেন সুমন। মৃত্যুর পূর্বে সুমনের দেয়া ১ মিনিট দশ সেকেন্ডের জবানবন্দীমূলক ভিডিওতে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।

সুমনের দেয়া জবানবন্দী ও কার পরিবারের দেয়া অভিযোগ মতে, পাওনা টাকা চাওয়ায় সুমন (৩৫) নামের এই ঝুট ব্যবসায়ীকে পুড়িয়ে হত্যা করে তারই চার প্রতিবেশী। নিহত সুমন ফতুল্লার মাসদাইর পাক্কার পুল এলাকার আব্দুল জলিলের সন্তান।

খবরটি প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত ( সাড়ে ১২ টা) সুমনের লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা আছে। এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা করা হয়নি বলে জানিয়েছে সুমনের পরিবার।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিপ্লবের প্রতিবেশী এক যুবক যুগের চিন্তা ২৪’কে বলেন, সুমনের চিৎকার শুনে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গিয়ে দেখি সুমনের সারা শরীরে অগুন জ্বলছে। তখন আমি ঘর থেকে একটি কাথা এনে তার শরীরের আগুন নিভাই।

এসময় ‘বাঁচা আমারে ভাই’ বলে চিৎকার করে সুমন আমাকে জড়িয়ে ধরলে তার শরীরের পোড়া চামড়া আমার শরীরে লেগে যায়। তারপর লোকজন এগিয়ে আসলে সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।    

সুমনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নয় বছর বয়সী এক সন্তানের জনক সুমন। তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তসত্ত্বা। ঘটনা সম্পর্কে বলেন,  প্রতিবেশী সোহেল মন্ডল ও বিপ্লবের কাছে সত্তর হাজার করে টাকা পাওনা ছিলো নিহত সুমন। পাওনা পরিশোধে সুমনের চাপের মুখে কোরবানি ঈদের সময় পাওনা পরিশোধে এক সপ্তাহ সময় চায় বিপ্লব ও সোহেল।

শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টায় একটি ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সুমন। যাওয়ার সময় তার মাকে জানিয়ে যায় পাওনা টাকা আনতে বিপ্লবের কাছে যাচ্ছে সে। তার কিছুক্ষণ পরেই সুমনের পরিবার জানতে পারে সুমনের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে কে বা কারা।

পরবর্তীতে তারা দেখতে পায় স্থানীয় হাবিব মিয়ার বাড়ি (অভিযুক্ত বিপ্লবের শ্বশুর বাড়ি) সেখান থেকে সুমনকে উদ্ধার করে খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মিডকেল কলেজে পাঠিয়ে দিলে শনিবার (১লা সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে চারটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সুমনের বোন রীতা যুগের চিন্তা ২৪ কে জানান, সুমন তার পাওনা টাকা আনতে গেলে শায়লা, মাসুদ ও সুমন তাকে আটকে ফেলে এবং বিপ্লব সুমনের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। ঘটনার পর থেকেই এই চারজন পলাতক রয়েছে বলেও জানায় রীতা।

ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের যুগের চিন্তা ২৪’কে বলেন, এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি, মামলাও হয়নি।

এই বিভাগের আরো খবর