মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অপচেষ্টা, রোজার আগেই পণ্যের দাম বাড়তি

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : বিগত বছরগুলোর দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায় প্রতিবার রোজা এলেই সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্ত এবার বাজারের চিত্র পুরোটাই উল্টো।  


বুদ্ধি করে রোজার বেশ আগে থেকেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গরুর মাংস তো অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ বয়লার মুরগি কিনে খাবে, তারও উপায় নেই। সবজির দামেও একই অবস্থা। বেশিরভাগ ক্রেতা বাজার থেকে এক পোয়া, আধা কেজি করে সবজি কিনছে।


এদিকে, মাছে-ভাতে বাঙালি এ প্রবাদটি এখন হয়তো আর বলার উপায় নেই। কারণ মাছের যে দাম তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে পাঙাশ, তেলাপিয়া ছাড়া অন্য মাছ কেনার উপায় নেই। ৪০০-৫০০ টাকা কেজির নিচে ভালো কোনো মাছ বাজার থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।


অপরদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ সিন্ডিকেট করে সবজির দাম বাড়ানো হচ্ছে। রোজার সময় যাতে নতুন করে দাম বাড়ার অভিযোগ না ওঠে, সে জন্য রোজার একমাস আগেই সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। বাজারে কার্যকরী মনিটরিং না থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা এই অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।


নগরীর দিগুবাবু বাজার, বউ বাজার, মাসদাইর বাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার, চিটাগাংরোড বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের তথ্যমতে, সবজি, মাছ, মাংসের ব্যাপক চড়া দামে প্রায় দুই মাস ধরে এক প্রকার অস্বস্তিতে রয়েছেন নগরীর ক্রেতা-বিক্রেতারা। এর সঙ্গে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে পন্যদ্রব্যসহ সবজির দাম নতুন করে বেড়েছে। 


তবে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারগুলোতে পাকিস্তানি কক ও লাল লেয়ার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বেশিরভাগ সবজির দাম। 
সেই সঙ্গে গরু, খাসি ও বয়লার মুরগির দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। আর আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে শীতের সবজি শেষ হয়ে আসা, অন্যদিকে রোজা কাছাকাছি আশায় সবজি দাম চড়া রয়েছে। 


বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা। লাল লেয়ার মুরগির কিছুটা কমে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। 


এদিকে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গত সপ্তাহে গরুর মাংসের কেজি পৌঁছে যায় সাড়ে ৫০০ টাকায়। এ সপ্তাহে গরুর মাংসের দাম নতুন করে বাড়েনি। আগের মতো বাজার ভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজিতে।


মাংসের দামের পাশাপাশি স্বস্তি দিচ্ছে না ডিমের দামও।  দেশি মুরগির ডিম প্রতিহালি ৭০ টাকা, হাসের ডিম প্রতিহালি ৬০ টাকা, বয়লার লাল মুরগির ডিম প্রতিহালি ৩৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। 


সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে।


এদিকে তিন সপ্তাহ ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম এখনও চড়াই রয়েছে। বরবটি গত সপ্তাহের মতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পটল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঢেঙস, কচুর লতি ও করলা। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস। আর ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মূলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।


বাজারে নতুন আসা সজনে ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহেও সবজির দাম এমন ছিল। 
দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজিগুলোর মধ্যে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসার কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে।


তবে দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকা রয়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ। বাজার ভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে। 


আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে দিগু বাবু বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন বাজারে যেসব সবজি বেশি পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগই নতুন এসেছে।

 

শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত কপি ফুরিয়ে গেছে। পাকা টমেটো শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। এ কারণে এখন সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। আমাদের ধারণা রোজার সময় নতুন করে সবজির দাম বাড়বে না। হয়তো বেগুন, শশা ও পেঁপের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।


পেঁয়াজ ব্যবসায়ী কালাম মিয়া বলেন, এবার পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তাই দাম তুলনামূলক বেশ কম। রোজার আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। 


তবে রোজার মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যেতে পারে। কারণ রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা তুলনামূলক অনেক বেশি থাকে।
 

এই বিভাগের আরো খবর