শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মীরজুমলা সড়ক মুক্ত হবে কবে?

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০১৯  

বিশেষ প্রতিনিধি : মীরজুমলা সড়কে আবারো গজিয়েছে দোকান-পাট। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বার বার উচ্ছেদ করেছে  দোকান-পাট, ময়লা আবর্জনাও স্তুপ করে রাখা হত। তবুও এই সড়কটি মুক্ত রাখা  গেলনা। দ্বিগুবাবু বাজারের দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসেছে সড়কটির দু’পাশে।

 

মাঝখানে কিছুদিন যানবাহন চলাচল করলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ সড়ক ধরে কোন গাড়ি ঢুকলে তরকারি বিক্রেতাদের  দোকানের জন্য আর এগোতে পারেনা। কেউ ভুল করে ঢুকে পড়লেও গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ফলে বঙ্গবন্ধু সড়ক টু নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে সংযোগ সড়কটি এখন নেহায়েত দ্বিগুবাবুর বাজারের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। যেমনটা ছিল অতীতে।

 

বাজারে রূপ নেয়ায় চাঁদাবাজ চক্র মীরজুমলা সড়কটিকে আবারো ‘টাকার খনি’ বানিয়ে নিয়েছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল। ব্যাপক অনুসন্ধানেও মীরজুমলা সড়কে চাঁদাবাজির কদর্য চিত্র  বেরিয়ে এসেছে। তিনটি পক্ষ চাঁদা তুলছে বলে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে  বাজারের হকার ও  দোকানদারদের সাথে আলাপকালে। প্রথম পক্ষ পুলিশ, দ্বিতীয় এনসিসি ও তৃতীয় হাজী সাহেব।

 

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের কথা বলে একটি গ্রুপ তিন বেলা চাঁদা তোলে। আরেকটি গ্রুপ চাঁদা তোলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কথা বলে। চাঁদাবাজিতে এগিয়ে আছে হাজী সাহেব এর পক্ষের গ্যাং। জানতে চাইলে মীরজুমলা সড়ক বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ,এফ,এম এহতেশামূল হক যুগের চিন্তাকে বলেন, অলস কোন জিনিস কার্যকর রাখা যায়না। মীরজুমলা সড়ক আমরা বার বার দখল মুক্ত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

 

আমরা সড়ক উদ্ধার করার পর তা অলস পড়ে থাকে। অলস পড়ে থাকে বলতে এ সড়কে যানবাহন চলেনা, তাই সড়কটি দখল করে নেয় হকাররা। এই সড়কে যদি বাস রানিং থাকতো তাহলে হকার বসার বা দখলে নেয়ার প্রশ্নই থাকতোনা। মীরজুমলা সড়ক বাঁচাতে হলে বাস রানিং রাখতে হবে।

 

প্রশাসন ইচ্ছে করলে ২নং রেলগেট এর বদলে মীরজুমলা সড়কে বাস ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তবেই সমস্যা সমাধান হবে।  মেয়র মহোদয় উন্নয়ন ও একটা ভিশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ হয়তো সিটি কর্পোরেশনের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম (চাঁদাবাজি) করে। সুনির্দিষ্ট  কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  


মীরজুমলা সড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো: আসাদুজ্জামান বলেন, চাঁদাবাজির প্রশ্নই উঠেনা। পুলিশের কথা বলে কারা চাঁদাবাজি করছে নাম বলুন। অবশ্যই এ্যাকশন নেয়া হবে। 


একাধিক সূত্রে জানাগেছে, মীরজুমলা সড়ককে ঘিরে বঙ্গবন্ধু সড়কের কিছু অংশজুড়ে (নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও নয়ন সুপার মার্কেটের সামনের অংশ) সারারাত কাঁচামাল আসে  দেশের বিভিন্ন জেলা  থেকে। কাঁচামালের ট্রাকগুলো প্রথমে মীরজুমলার মোড়ে থামে। ট্রাক থামা মাত্রই শুরু হয় চাঁদাবাজি। ভোর রাতে চাঁদাবাজি হয় ট্রাক প্রতি।

 

ট্রাক থেকে বেপারীরা মাল কেনার পর  কেজিপ্রতি ১টাকা কয়ালি দিতে হয় বাজারের লোকদের। মীরজুমলা সড়কে  ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি কয়েক দফায় ৪০০  দোকান বসে।  ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত চাঁদা তোলে নন্দীপাড়ার কাসেম। নয়ন সুপার মার্কেটের সামনে থেকে ইনস্টিটিউট রোডের মাথা পর্যন্ত চাঁদা তোলে  গোপাল।  কেজি প্রতি ১ টাকা নেয় বাবুল। ময়লার যায়গা থেকে মুরগীপট্টি পর্যন্ত ২০০  দোকানের চাঁদা নেয় কাসেম। 


একাধিক সূত্র জানায়, মীরজুমলা সড়ক  যেন টাকার খনি ! এমনটাই মনে করে বাজারের টোল আদায়কারী চক্র ও চাঁদাবাজ চক্রের লোকজন। মীরজুমলা সড়কে ছোট বড় মিলিয়ে দোকান ছিল ৩০০টি এখন তা ৪০০ হয়েছে। প্রতিটি দোকানের বিক্রেতার কাছ চাঁদা উঠানো হত ৩ টি শিফটে। ভোর থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত এক শিফট। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২টা  পর্যন্ত দ্বিতীয় শিফট এবং বিকাল ৪ টা থেকে রাত পর্যন্ত আরেক শিফট- এভাবে প্রতিটি দোকান থেকে ৩ শিফটে চাঁদা উঠানো হত। তিন শিফটে প্রতিদিন দেড়লক্ষ টাকা চাঁদা উঠতো।  

 

গত পাঁচ বছরে রুবেল ও মোল্লা গ্রুপ মীরজুমলা সড়ক থেকে কামিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। তবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা রুবেল ও মোল্লা দু’জনের পক্ষে একা হজম করা সম্ভব ছিলনা। এর  পেছনে ছিল বিরাট চক্র। দ্বিগুবাবুর বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজ চক্রের দুই হোতাকে  গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ছিল। যদিও চাঁদাবাজচক্রের দুই হোতা আপাতত লাপাত্তা। বর্তমানে নতুন চক্র চাঁদা তুলছে। এসপি’র অভিযানের পর থেকে ওরা চলে গিয়েছিল অন্তরালে।

 

এসপি’র বদলীর পর ওরা ফিরে এসেছে। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে এ সড়কে পেঁয়াজ, মরিচ, মাছ, মুরগী, ডিম, গরুর গোশত, তরিতরকারি, কাঁচামাল, মুদিসহ বিভিন্ন ধরনের পন্য বিক্রি করতে হয় বিক্রেতাদের। এখন সড়কটি পূণরায় বাজারের অংশ হয়ে গেছে। 


সূত্র জানায়, এই সড়কটিতে প্রভাবশালী মহলের লোকজন চৌকি বিছিয়ে দোকান প্রতি অগ্রিম, দৈনিক, মাসিক বিভিন্ন হারে টাকা হাতিয়ে নেয়। আর দোকানিরাও ব্যবসা করতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অস্থায়ীভাবে দোকান চালিয়ে আসেন। তবে উচ্ছেদের কারণে দোকান বন্ধ হয়ে গেলে প্রভাবশালী মহলের কঁপালে হাত পড়ে। কারণ দোকান বসতে না পারলে দৈনিকহারে মোটা অংকের টাকা জোটে না। 


পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সেক্টরে এখন চলছে পরিবর্তনের খেলা। পুলিশ সুপারের বদলীর খবরে আড়ালে-আবডালে থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ডের লোকজন  বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তারই একটা প্রভাব পড়েছে দ্বিগুবাবুর বাজার এলাকায়। মীরজুমলা সড়কে আবারো  দোকানপাট বসিয়ে চলছে তুমুল চাঁদাবাজি। বিভিন্ন পক্ষের কথা বলে চাঁদাবাজচক্র অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। শহরবাসী মীরজুমলা সড়কটি  দোকানপাট মুক্ত দেখতে চায়। 
 

এই বিভাগের আরো খবর