শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মায়ের মামলায় চার মেয়ে স্বামী-সন্তানসহ কারাভোগ, এরপরেও হয়রানি 

প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : কখনো আপন ভাইয়ের ম্যানেজারের মামলা, কখনো ভাইয়ের আবার নিজ মায়ের করা মামলায় জর্জরিত হয়ে জীবন নরকে পরিণত হয়েছে চার বোনের। শুধুই তারাই নন মামলায় কারাভোগ করতে হয়েছে স্বামীসন্তানদেরসহ। এরপরেও হয়রানি থামেনি, মামলা আর জেলে যাওয়ার গ্লানির প্রভাব পড়েছে ছোট ছোট ছেলেমেয়ের উপর, লজ্জায় আর ভয়ে স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী ওই চার-পরিবারের সদস্যরা। পরিত্রাণ পেতে ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচার ও সকল মামলা সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে মামলার নিষ্পত্তিসহ সঠিক ও ন্যায়সংগত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। একসময়ের নারায়ণগঞ্জ শহরের নামকরা সুতা ব্যবসায়ী মরহুম আব্দুর রউফের চার মেয়ের কপালেই জুটেছে এই করুণ পরণতি।  

 

রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হামিদ খান মিলনায়তনে স্বামী-সন্তানসহ সংবাদ সম্মেলন করেন চার নারী। 

 

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী চারবোনের পক্ষে অভিযোগপত্র পড়ে শোনান দ্বিতীয় বোনের স্বামী আল মামুন মাকসুদ। তিনি বলেন, চাষাঢ়ার লুৎফা টাওয়ারের মালিক মরহুম আব্দুল রউফের এক ছেলে লুৎফর রহমান সুমন (৪২) এবং চার কন্যা আসমা আক্তার সুইটি (৩৬), মাহমুদা মাকসুদ সোনিয়া (৩৪), তানিয়া রউফ অথী (২৮) এবং সাদিয়া রহমান (২৭)। আব্দুল রউফ জীবদ্দশায় বিশাল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রেখে গেছেন। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় কিছু সম্পত্তি তার স্ত্রী লুৎফা বেগম (৫৯) ও সন্তানদের বিলি বন্টন করেন।

 

আব্দুল রউফ শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকাবস্থায় তার ছেলে সুকৌশলে বাবার সমস্ত সম্পত্তি আয় ও উপার্জন ও জমির দলিলপত্রসহ ব্যাংকে গচ্ছিত সকল অর্থ আয়ত্তে নেয়ার পায়তেরা করতে থাকে। ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি আব্দুল রউফ মারা যান। এর কয়েকমাস পর ভাই ও মায়ের কাছে বিশাল সম্পত্তি নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে গেলে চারমেয়েকে লাঞ্ছিত করে। এবং এবিষয়য়ে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মহলের সহযোগিতায় দফায় দফায় জিডি করে। পারিবারিক সম্পত্তির বিরোধের বিষয়টি দুই থানাতেই অবহিত আছে। কিন্তু ভাই লুৎফর রহমান সুমন পেশী শক্তি ও অর্থ বলে চারবোনের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। এরমধ্যে মা ও ভাই সৈয়দপুরের একটি জায়গা চারবোনকে না জানিয়ে  বিক্রি করে দেয়। একথা জানতে পেরে তারা বাবার সম্পত্তির ন্যায্য অংশ দাবি করেন। এরপরেই মা লুৎফা বেগম ও ভাই লুৎফর রহমান সুমন; চার বোন ও তাদের স্বামীর উপর ক্ষিপ্ত হন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লুৎফা টাওয়ারের ম্যানেজারের মাধ্যমে একটি চাঁদাবাজি, দ্বিতীয় দফায় ৫ মে ভাই লুৎফর রহমান চাঁদাবাজির এবং ৮ মে  মা লুৎফা বেগম বাদী হয়ে ছিনতাইয়ের তিনটি মামলা দায়ের করেন।

 

একের পর এক মামলায় মেয়ে আসমা আক্তার সুইটি, তাঁর  স্বামী ব্যবসায়ী আজিজুল হক শুভ, তাদের তিন বছরের কন্যা আরিয়ান, দ্বিতীয় মেয়ে মাহমুদা মাকসুদ সোনিয়া, তাঁর চাকুরীজীবী স্বামী আল মামুন মাকসুদ, তৃতীয় মেয়ে তানিয়া রউফ অথী, তার স্বামী মোবাইল ব্যবসায়ী ই¯্রাফিল খান মানিক, চতুর্থ মেয়ে সাদিয়া রহমান এবং তার স্বামী গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান চারবোনের ন্যায্য হিস্যা দাবি করায় ভাই লুৎফর রহমানের করা মামলায় ২২ দিন জেল খাটে। জেলা থাকা অবস্থাতেই লুৎফা টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে থাকা বোনের মালামাল বাইরে ফেলে দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে। ভাইয়ের পেশী শক্তির কারণেই অত্যন্ত সম্মানিত রউফ সাহেবের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে নিজ নিজ বাসা থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।  এখনও তার ভাই ও মা তাদের অনেক কর্মচারী ও অপরিচিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। এই অবস্থায় মা ও ভাইয়ের এমন কার্যকলাপে চারবোনের পরিবারই চরমভাবে বিপর্যস্ত ও পারিবারিক, সামাজিক ও মানুষিকভাবে চরম ক্ষতির শিকার।

 

অবস্থা এমন পর্যায়ে সোনিয়ার ছেলে সাকিব (৭), সোহানী (১১), অথির ছেলে আলিফ (১১) এবং সাদিয়ার ছেলে রাইয়ান (১০) এবং মাহিয়ান (৭) স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এঅবস্থায় চারবোন দেশবাসীসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক ন্যায় ও সুষ্ঠুবিচার ও সকল মামলার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সকল মামলার নিষ্পত্তিসহ সঠিক ও ন্যায় সংগত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।   

তবে এব্যাপারে কথা বলতে মরহুম আব্দুর রউফের ছেলে এবং অভিযোগ করা চারবোনের ভাই লুৎফর রহমান  সুমনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।  
 

এই বিভাগের আরো খবর