বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

মার্ক্সের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে মাত্র ১১জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০১৯  

রাসেল আদিত্য (যুগের চিন্তা ২৪) : কার্ল মার্ক্স বিগত দেড়শত বছরেরও বেশি কাল পৃথিবীর সর্বাধিক আলোচিত ব্যক্তিত্ব। শোষণ, বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে যারা এই পৃথিবীর বুকে স্বর্গ রচনার সংগ্রামে নিয়োজিত তাদের শিক্ষক, পথপ্রদর্শক, অনুপ্রেরণা উৎস হলেন কার্ল মার্কস। বিপরীতে, দুনিয়ার সমস্ত শোষকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু কার্ল মার্কস ও মার্কসবাদ ।

 

একজন জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজ বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন মার্ক্স। মার্ক্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে তিন খণ্ডে রচিত পুঁজি এবং ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের সাথে যৌথভাবে রচিত কমিউনিস্ট ইশতেহার (১৮৪৮)।

 

তার পুরো নাম কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স হলেও তিনি কার্ল মার্ক্স নামে সর্বাধিক পরিচিত। কার্ল মার্ক্স প্রুশিয়া সাম্রাজ্যের নিম্ন রাইন প্রদেশের অন্তর্গত ট্রিয়ের নামক স্থানে ১৮১৮ সালের ৫ই মে, এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। বাবা হাইনরিশ মার্ক্স এমন এক বংশের লোক যে বংশের পূর্বপুরুষেরা রাব্বি ছিলেন। অবশ্য তাদের মধ্যে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ এবং আলোকময়তার যুগের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাদের অনেকেই ভলতেয়ার ও রুসোর মত দার্শনিকদের প্রশংসা করতেন।

 

কার্ল মাক্সের্র অধ্যয়নের বিষয়বস্তু ছিল আইনশাস্ত্র, ইতিহাস ও দর্শন। তিনি ডক্টরেট ডিগ্রিও লাভ করেন। তাঁর জ্ঞানের আকাঙ্খা ছিল ব্যাপক। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, গণিত প্রভৃতির গভীর অনুশীলন ও অধ্যয়ন তিনি করেছিলেন।

 

তাঁর আজীবন সহযোগী ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-র সাথে তিনি মার্কসীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। এই মতবাদই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মতবাদ হিসাবে পরিচিত। এই মতবাদ শূন্য থেকে সৃষ্ট নয়। মানব সভ্যতার অগ্রগতির যে রাজপথ সেই রাজপথ থেকেই উদ্ভূত হলো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মতবাদ।

 

১৮৮১ সালের ডিসেম্বরে মার্ক্সের স্ত্রী জেনি মারা যাওয়ার পর এক ধরণের catarrh-এ আক্রান্ত হন। এই রোগ তাকে জীবনের শেষ ১৫ মাস অসুস্থ করে রাখে। এই রোগ পরবর্তীতে ব্রঙ্কাইটিস ও সব শেষে pleurisy তে পরিণত হয়। এই pleurisy-র কারণেই ১৮৮৩ সালের ১৪ই মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।

 

মৃত্যুর সময় মার্ক্সের কোন জাতীয়তা তথা দেশ ছিল না, তাকে ১৭ই মার্চ লন্ডনের হাইগেট সেমিটারি-তে সমাহিত করা হয়। তার সমাধিফলকে দুটি বাক্য লেখা আছে। প্রথমে লেখা, কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর শেষ লাইন ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ (Workers of all land unite)এরপরে লেখা ১১তম থিসিস অন ফয়ারবাখ-এর এঙ্গেলীয় সংস্করণের বিখ্যাত উক্তি, "এতোদিন দার্শনিকেরা কেবল বিশ্বকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যাই করে গেছেন, কিন্তু আসল কাজ হল তা পরিবর্তন করা।" ( The Philowophers have only interpreted the world in various ways - The point however is to change it)

 

১৯৫৪ সালে গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি কার্ল মার্ক্সের সমাধিতে একটি সৌধ স্থাপন করে যার শীর্ষে আছে মার্ক্সের মুখমন্ডলের ভাস্কর্য। লরেন্স ব্র্যাডশ এই মুখাবয়বটির স্থপতি।

 

মার্ক্সের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে মাত্র ১১ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এ সম্পর্কে এঙ্গেল্স লিখেন, ১৪ই মার্চ বিকেল পৌনে তিনটায়  জীবিতদের মাঝে সেরা চিন্তাবিদ তার চিন্তার পরিসমাপ্তি ঘটান। মাত্র দুই মিনিটের জন্য আমরা তাকে রেখে বাইরে গিয়েছিলাম, ফিরে এসে তাকে তার আর্মচেয়ারে বসা অবস্থায় পেলাম, তিনি ততক্ষণে শান্তিতে নিদ্রায় গিয়েছেন- চিরদিনের জন্য।

 

এঙ্গেল্স ছাড়া শেষকৃত্যে উপস্থিত অন্যান্যরা হলেন, মেয়ে এলিনর (সমাজবাদী ও বাবার সম্পাদনা সহযোগী), মেয়েদের ফরাসি সমাজবাদী স্বামী Charles Longuet  Paul Lafrague, Liebknecht  (জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা), Longuet  (ফরাসি শ্রমজীবী রাজনীতির বিখ্যাত ব্যক্তি),  Friedrich Lessner  (১৮৫২ সালে Cologne-এ সাম্যবাদীদের বিচারের পর তিন বছর কারাদ- ভোগ করেছিলেন), G. Lochner    (কমিউনিস্ট লিগের অন্যতম প্রবীণ সদস্য), Carl Schorlemmer (ম্যান্চেস্টারে রসায়নে অধ্যাপক, রয়েল সোসাইটির সদস্য এবং কমরেড), Lankester, স্যার জন নো এবং লিওনার্ড চার্চ।

 

ফরাসি ও স্পেনীয় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আসা দুটি চিঠি পড়ে শোনানো হয়, এর সাথে এঙ্গেল্স বক্তৃতা দেন, এ-ই ছিল শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা। ১৯৭০ সালে সমাধি ডাকাতেরা ঘরে তৈরি বোমার মাধ্যমে তার কবর ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা করে।

তথ্য সূত্র : বাংলা উইকিপিডিয়া