বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনা ও আম্পানকে উপেক্ষা 

মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২০  

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে যখন মুখর নগরী তখন শহরের মার্কেটগুলোতে রাজ্যের ব্যস্ততা। কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত কেউ বিক্রিতে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে নারায়ণগঞ্জে জমে উঠছে ঈদ মার্কেট । করোনা আর আম্পানকে উপেক্ষা করেই মার্কেটগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা।

 

বুধবার (২০ মে) শহরের বিভিন্ন মার্কেট,শপিং মলগুলো ঘুরে দেখা যায় , পরিবার পরিজন নিয়ে মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটা সারতে এসেছেন অনেকে।  কোনো প্রকার নিরাপদ দূরত্ব ছাড়াই ভিড় জমাচ্ছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আশপাশের এলাকার লোকজন গাড়ি থেকে নেমে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করে ঘরে ফিরছেন।

 

এদিকে করোনা ঝুঁকির সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ঘুর্ণিঝড় আম্পান। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করেই  বুধবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত  সকাল থেকেই পোশাক ,জুতা ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়।


এবার মার্কেটগুলোতে শাড়ী, থ্রি-পিস, সালোয়ার, কামিজ, জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট প্রভৃতি কাপড়ের আইটেমসহ রকমারি জুতা-স্যান্ডেলের সমাহার হয়েছে। বাচ্চাদের কাপড়ের মধ্যে গত বছরের আকর্ষণীয় ডিজাইন ও বাহারি কাপড়ের সমাহার যেমন রয়েছে তেমনি নিত্য-নতুন নামেও এবার রয়েছে বাচ্চাদের অনেক আইটেমের কাপড়। এবারে পোশাকগুলোর নির্দিষ্ট নাম না থাকলেও লং ড্রেস ও জামদানী সেলোয়ার কামিজের চাহিদা রয়েছে।  

 

এই সকল পোশাক  ২ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ১ বছরের শিশু থেকে ১২/১৪ বছরের বাচ্চাদের ১ সেট পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।


শহরের অভিজাত মার্কেট মার্ক টাওয়ারের কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের খুশিতে পোশাকে একটু ভিন্নতা সব শ্রেণীর ক্রেতাকেই আকৃষ্ট করে, আর তাই সুন্দর, রুচিসম্মত কাপড় পেলে ক্রেতারা কখনও বাজেটের চিন্তা করেন না। তারপরেও সবশ্রেণীর গ্রাহকের কথা চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন মূল্যের বাহারি ডিজাইনের কাপড় ক্রেতাদের জন্য রেখেছি। ক্রেতা তার বাজেট অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারবেন।


পাঞ্জাবীর দোকানগুলোতে পাঞ্জাবীর পাশাপাশি ট্রাউজার , চুড়িদার পায়জামা,কাবলি সেট বিক্রি হচ্ছে বেশি। এবার পাঞ্জাবীর বাজারে সুতি পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় ফ্যাশন পাঞ্জাবি ও রেডিমেট ফ্যাশন পোশাকের বিক্রি কম হচ্ছে। এবার পাঞ্জাবির দোকানগুলো ডিজাইন ও কাপড়ভেদে সর্বনিম্ন ৭শ’ থেকে উপরে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঞ্জাবি বিক্রি করছে।


অন্যদিকে  নগরীর জুতার দোকানগুলোতে রয়েছে উপচে পড়া ভীড়। নতুন পোশাকের সাথে এক জোড়া নতুন জুতা কিনতে ভুলছে না কেউ। সাধ সাধ আর সাধ্যের মধ্যেই  পছন্দসই জুতা কিনতে ব্যস্ত  ক্রেতারা। পাশাপাশি প্রসাধনী দোকানগুলোতে  রমনীদের ভীড় রয়েছে। পোশাক আর জুতার সাথে মিল রেখে কেনা হচ্ছে পছন্দসই কানের দুল,চুড়ি ও প্রসাধনী সামগ্রী।


মায়ের সাথে কেনাকাটা করতে এসেছে নন্দীপাড়া এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা। তিনি জানান, ঈদে তেমন কোনো কেনাকাটা এখনও হয় নি। তাই একটু বের হলাম। বের হয়ে দেখি বৃষ্টি। অন্য দিনগুলোতে তো রৌদের তাপে বের হওয়া কষ্ট সাধ্য। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই কেনাকাটা  সারছি।


চার বছরের বাচ্চা ও স্ত্রী নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন ব্যবসায়ী মুকুল হোসেন। মুকুল হোসেন বলেন, আজকেই প্রথম বের হলাম ঈদের কেনাকাটা করতে। করোনার কারণে বের হওয়া হয়নি এতদিন। কিন্তু বের হয়ে দেখি এ অবস্থা। একটু নিরাপদ দুরত্ব নিয়ে যে হাঁটবো তার কোনো ব্যবস্থা নেই। যে যার মত গাঁ ঘেষাঘেষি করে চলাফেরা করছে। আমরা সচেতন  না হলে তো  ঝুঁকি বাড়বেই।


এদিকে সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে শেষ মুহূর্তে স্বল্প বাজেটের ক্রেতারা ছুটছেন কমদামী নিলামী মার্কেট ও ফুটপাত গুলোতে। মৌলভীবাজারের বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মী হিরা। কাজের সুবাদে পরিজন নিয়ে থাকেন নারায়ণগঞ্জে। এবার ঈদের বাড়ি যাওয়া হবে না। তাই এখানেই কেনাকাটা করছেন। হীরা বলেন, সবসময় বাপ মারে নিয়া মৌলভীবাজারেই মার্কেট করি। এবার তো আর বাড়িত যেতে পারমু না। তাই এখান থেকেই ছোট মেয়েটাকে একটা ফ্রক কিনে দিলাম।


অল্প আয়ের মানুষগুলোও যেন ঈদের খুশির কমতি না থাকে পরিবার পরিজনকে নিয়ে নতুন জামা-কাপড় আর নতুন প্রসাধনী কিনে পরিবারের ঈদ আনন্দকে উপভোগ করার এ যেন চিরায়ত বন্ধন।


উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে রমজানের শুরুর দিকে মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ মে থেকে সকল মার্কেটগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা করা হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে একে একে খুলে দেয়া হয় মার্কেট ,বিপনী বিতানগুলো।
 

এই বিভাগের আরো খবর