শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাংসখেকো গাছ !

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯  

রাসেল আদিত্য (যুগের চিন্তা ২৪) : পৃথিবীতে একমাত্র গাছপালাই নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে। এদের খাবার তৈরির সেই বিশেষ পদ্ধতির নাম সালোক সংশ্লেষণ। এ পদ্ধতিতে মাটি থেকে পানি, খনিজ, বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে গাছ। এ দুইয়ের সঙ্গে নিজের পাতার ক্লোরোফিল মিশিয়ে সূর্যের আলোতে রান্না করে গ্লুকোজ তৈরি করে গাছেরা। এভাবেই খাবার তৈরির কারণে বিশ্বের সব প্রাণি বেঁচে আছে। তাই খাবারের জন্য সব প্রাণিই কোনো না কোনোভাবে গাছেদের কাছে ঋণী।


তবে কিছু গাছ আছে, যারা আবার এত সব ঝামেলা একেবারেই পছন্দ করে না। তার চেয়ে একটু আমিষ মানে মাংস খেতেই ভালো লাগে ওদের। এদেরই বলে মাংসখেকো গাছ। হলিউডি চলচ্চিত্রে আপনারা নিশ্চয় মানুষখেকো গাছ দেখেছেন। মানুষখেকো সিনেমার কারণে অনেকের ধারণা মানুষখেকো গাছ আছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের গাছ দেখা না গেলেও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকা কিছু গাছ খুঁজে পাওয়া গেছে। এরাই মাংসখেকো গাছ (মানুষখেকো নয়)।


আজ আমরা জানব এরকম কিছু গাছের কথা। ওরা দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু ভয়ের কথা হল ওরা আর সব সাধারণ গাছের মতো সূর্যের আলো, বাতাস আর পানি খেয়ে বেঁচে থাকে না। বেঁচে থাকার জন্য ওরা খায় মাংস। সে মাংস হতে পারে ছোট পোকামাকড়ের অথবা জীবজন্তুর। পৃথিবীতে এমন গাছ আছে মোট ৬৩০ রকমের। আসুন আজ আমরা জেনে নেই তাদেরই মধ্যে ৫টি মাংসখেকো গাছের কথা।


১. সারাসেনিয়া : উত্তর আমেরিকার এই মাংসখেকো গাছগুলোকে টেক্সাস, কানাডাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এরা দেখতে অনেকটা ফানেলের মতন। আর এই ফানেলের মধ্যেই এরা লুকিয়ে রাখে শিকারের মোক্ষম অস্ত্র এক ধরনের তরল পদার্থ। এই তরল পদার্থের মাধ্যমেই নিজেদের সব শিকারকে হজম করে সারাসানিয়া। এদের লম্বামতন মুখটার বাইরের দিকে রয়েছে একটা লম্বা ঢাকনি। বৃষ্টির পানি থেকে নিজেদের ভেতরের তরল পদার্থকে বাঁচাতেই এই ঢাকনি ব্যবহার করে ওরা।


সারাসানিয়ারা দেখতে বেশ সুন্দর হয়। ওদের গন্ধটাও খুব ভালো। আর তাই রং ও গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে খুব সহজেই পোকারা ওদের গায়ে এসে বসে। আর একবার বসলেই হল। ওদের গায়ে লেগে থাকা পিচ্ছিল পদার্থে পা ফসকে পোকাগুলো সোজা চলে যায় সারাসানিয়ার পেটের ভেতরে। তারপরে আর কী ! শিকারের কাজ শেষে বেশ আরাম করে নিজেদের ধরা পোকাগুলো হজম করে নেয় ওরা।


২. নেপেনথেস : মাংসখেকো এই গাছটিকে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশে। ওদের আরেকটা নাম হচ্ছে মাঙ্কি কাপ বা বাঁদরপাত্র। প্রায় সময়ই বাঁদররা এসে ওদের ভেতরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি খেয়ে যায়। আর তাই ওদের এই নাম।


নেপেনথেসরা খানিকটা লম্বা আর ঢাকনাওয়ালা হয়। আর ওদের এই ঢাকনার ভেতরে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে তলোয়ারের মতন দেখতে লালচে কিছু পাতা। খুব সুন্দর দেখতে এই গাছগুলোর ভেতরে থাকে খাবার হজম করার জন্য এক ধরনের তরল। শুধু পোকামাকড়ই না, নিজেদের শরীরে জমে থাকা এই তরলের মাধ্যমে নেপেনথেস হজম করে ফেলতে পারে ইঁদুরের মতন ছোট ছোট প্রাণীও। মাঝখানে মানুষখেকো হিসেবেও বেশ নাম কুড়িয়েছিল এরা। তবে কথাটা কতটা সত্যি সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।

 

৩. জেনলিসা : আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মােেনা এই মাংসোখেকো সবুজ গাছগুলোর কোনো শিকড় থাকে না। ওদের শরীরে থাকে দুই ধরনের পাতা। তাদের মধ্যে কিছু পাতা শিকারকে আকর্ষণ করে আর কিছু গাছের শিকড়ের কাজগুলো করে। পানিতে জন্ম নেওয়া এই গাছগুলোর শরীরের নিচের দিকে থাকে কতগুলো টিউব। আর ঢেউএর সঙ্গে ভেসে কোনো সামুদ্রিক প্রাণি যদি এসে পড়ে ওই টিউবের ভেতরে, তবে সেগুলোকে আটকে ফেলে জেনলিসা আর পরিণত করে খাবারে।


৪. ডার্লিংটোনিয়া ক্যালিফোর্নিকা : ক্যালিফোর্নিয়া ও ওরিগনে জন্ম নেওয়া এই গাছগুলো বাস করে ঠান্ডা ও ময়লাপূর্ণ পানিতে। এদের আরেক নাম কোবরা লিলি। অন্যান্য মাংসখেকো গাছের মতন এতে কোনো চোরা গর্ত থাকে না। বরং এর ভেতরে থাকে চোখ ধাঁধানো আলো। কোনো পোকা এর ভেতরে গেলে গাছটির নিজস্ব তৈরি উজ্জ্বল আলোর কারণে প্রথমে দিশেহারা হয়ে পড়ে। আর তারপর সামনে এগিয়ে খুঁজে পায় কিছু চুলের মতন পদার্থ। আর সেটা ধরে একবার ভেতরে গেলেই আর ফেরার পথ খুঁজে পায় না প্রাণিরা। ফেরার রাস্তা খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে একসময় ওরা পরিণত হয় মাংৃসখেকো গাছের খাবারে।


৫. ইউট্রিকুলারিয়া : হলুদ দেখতে এই গাছগুলো জন্মায় পরিষ্কার পানি আর ভেজা মাটিতে। ওদের মূল বাসস্থান তাই অ্যান্টার্কটিকায়। এদের শিকারের জায়গা অন্যসব মাংসখেকো গাছের চাইতে কম হওয়ায় খুব ছোট ছোট প্রাণিই খেতে পারে এই গাছেরা। তবে ইচ্ছেমতন নিজেদের শিকারের ঢাকনা উঁচু-নিচু করতে পারে ইউট্রিকুলারিয়া।

এই বিভাগের আরো খবর