শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মসজিদের ইমামকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ঘাতক বন্ধুর স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০১৯  

ষ্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ে মসজিদের  ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ঘাতক বন্ধু অহিদুর জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।

 

গত ২২ আগস্ট সোনারগাঁ মল্লিকপাড়া গ্রামের নারায়ণদিয়া বায়তুল জালাল জামে মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নিহত দিদারুল খুলনার তেরখাদা থানার রাজাপুর এলাকার আফতাব ফরাজির ছেলে।

 

এর আগে গত ২৬ জুলাই তিনি মল্লিকপাড়া গ্রামের ওই মসজিদটিতে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। হত্যাকান্ডের পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে একমাত্র আসামিকে শনাক্ত করে গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাতে মাদারীপুরের শিবচর থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

এই হত্যাকান্ডের মূলহোতা অহিদুর রহমান (৩১) খুলনার নড়াইলের কলাবাড়ীয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (টুকু) শেখের ছেলে। অহিদুর রহমান নিজেও মাদারীপুরের শিবচর এলাকার স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। নিহত দিদারুল ও আসামি অহিদুরের মধ্যে ব্যবসায়ীক অর্থ নিয়ে লেনদেনের জের ধরেই এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল, ইমাম দিদারুল ইসলাম হিযবুত তাওহীদের সদস্য। সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছে। তাই আমরা তাকে মেরে ফেলেছি।

 

আসলে খুনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করে ঘটনাটি কোন জঙ্গি সংগঠন ঘটিয়েছে এমনটা প্রমাণ করতে ওই চিরকুট লিখেছিল। পরে তদন্তে নেমে এই ঘটনার একমাত্র আসামি অহিদুর জামানকে মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে গ্রেফতার করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।

 

এসপি জানান, ইমাম দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে সোনার বার কেনার কথা বলে কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয় ঘাতক অহিদুর জামান (২৮)। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দিলে ঘাতক অহিদুর দিদারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

 

সেই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার আগের রাতে দিদারুলের সঙ্গে মসজিদে দেখা করে এবং বলে, আগামীকাল (২১ আগস্ট) রাতে এশার নামাজের পর তাকে তার টাকা ফেরত দেবে।

 

হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘাতক অহিদুর শিবচরের পাঁচচর এলাকা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, সোনারগাঁ মুড়াপাড়া থেকে ঘুমের ঔষধ ও কোকাকোলার বোতল কিনে রাখে। পরে হত্যার দিন প্রথমে কোকাকোলার সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিলিয়ে ইমাম দিদারুলকে অচেতন করে। পরে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, চাপাতি দিয়ে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করে।

 

তিনি আরো জানান, পরবর্তীতে নিহতের খাতায় হিযবুত তাওহীদের সদস্য, সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসছে তাই আমরা তাকে মেরে ফেলেছি এমন আরো কিছু কথা লিখে রাখে। এবং মসজিদের ওজু খানায় গোসল করে রক্ত মাখা লুঙ্গি পার্শ্বস্থ কচুরি পানায় ফেলে রেখে ঢাকা মিরপুর হয়ে মাদারীপুর চলে যায়।

 

মূলত ঘাতক অহিদুর পাওনা টাকা ফেরত না দেয়ার জন্যই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যাকান্ডটি ঘটায়। উক্ত হত্যাকান্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাওহিদের নাম ব্যবহার করে।

 

এই বিভাগের আরো খবর