বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ভালো নেই না’গঞ্জের কামার শিল্পের কারিগররা  

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

শাহজাহান দোলন (যুগের চিন্তা ২৪) : ভালো নেই নারায়ণগঞ্জে কামার শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা। সাধারণত বহু আগে থেকেই কামাররা ভালোবাসা ও শক্ত হাতের কারুকাজের মাধ্যমে লোহা দিয়ে দা, বটি, কাস্তে, খুন্তি, চাকুসহ নানান গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি তৈরি করে জীবীকা নির্বাহ করে আসছিল। তবে সময়ে সাথে সাথে তাদের ভালোবাসার এই জীবীকা ফিকে হতে চলেছে।


কারণ যুগের পরিবর্তন ও অধুনিকতার ছোঁয়ায় একটু একটু করে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে হাতে তৈরি লোহার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। নতুন করে স্থান করে নিচ্ছে চায়না ও ভারত থেকে আসা অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের যন্ত্রপাতি। দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়াতে ক্রেতারা ক্রয় করছেন স্টিলের চাকু, খুন্তি, কাস্তেসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ফলে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের যন্ত্রপাতির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কামার শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই এখন এই পেশা পরিবর্তন করে ফেলছেন।


কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় শুধু ব্যবসায়ীক খ্যাতিসম্পন্ন শহরের নিতাইগঞ্জ, কালীর বাজার, চাষাঢ়া বালুরমাঠ ও খানপুরে প্রায় ১০০টি কামারের দোকান ছিলো। এসব দোকানে অতীতে কামারদের কাজ কর্মের প্রচুর গতিশীলতা থাকলেও এখন বাজারে মেশিনে তৈরি স্টিলের যন্ত্রপাতির উপস্থিতিতে হাতে তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির অর্ডার কমে যাচ্ছে, একপ্রকার নিশ্চল হয়ে যাচ্ছে সেই কাজের গতি।


এছাড়া কয়লা ও লোহার মূল্য বৃদ্ধির মতো বেশ কয়েকটি জটিলতার কারণে সবদিক থেকে এই পেশার সাথে জড়িত থেকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই এখন বড় কষ্টকর বলে জানিয়েছেন কামার শিল্পীরা। তাই দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে শহরের বিভিন্ন কামারের দোকানগুলো। 


কালীরবাজার চারারগোপে মানিক কর্মকার নামে এক কামার শিল্পী বলেন, বাজারে স্টিলের যন্ত্রপাতির কারণে এখন আমাদের কাছে বেশি কাজের অর্ডার আসেনা। আগে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসতো নারায়ণগঞ্জে জিনিসপত্র ক্রয় করতে, সেসব জিনিসের মধ্যে আমাদের হাতে তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির একটা ভালো চাহিদা ছিলো।


তখন স্টিলের যন্ত্রপাতি ছিলোনা আর থাকলেও খুব কম ছিলো কিন্তু এখন স্টিলের যন্ত্রপাতি বৃদ্ধি পাওয়াতে হাতে তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি কেউ ক্রয় করেনা। সাধারণত ধান কাটার একটা কাস্তে এটাও এখন স্টিল দিয়ে তৈরি হয়।


রঞ্জণ সরকার নামে অন্য এক কামার শিল্পী বলেন, এই কাজ করে এখন প্রতিদিনের দোকান ভাড়া ও খাবারের খরচ বের করাটাই সম্ভব হচ্ছেনা। দুই তিন বছর আগেও এক বস্তা কয়লার দাম ছিলো ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা কিন্তু এখন সেই এক বস্তা কয়লার দাম হয়েছে ৩ হাজার ৫’শ টাকা।


লোহার দামও কেজিতে বহুটাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসা ও এই কাজ তাহলে করবো কীভাবে করবো বলুন? আমার নিজের অনেক অত্মীয় এই কাজের সাথে জড়িত ছিলো কিন্তু এখন আর নাই। সাবাই অন্য পেশায় চলে গেছে।


অন্যদিকে বটি, খুন্তি ও কাস্তেসহ অন্যান্য হাতে তৈরি লোহার যন্ত্রপাতির পাইকারি বিক্রেতা কালীর বাজারের হাফিজ মিয়া বলেন, একসময় গ্রাম কিংবা শহর অঞ্চলে মেলা হলে সেখানে কামার শিল্পীদের লোহার গৃহস্থালির যন্ত্রপাতির অনেক চাহিদা ছিলো।কিন্তু এখন মেলাগুলোতে স্টিলের যন্ত্রপাতির চাহিদা বেশি তাই কামারদের মালের অর্ডার কমে যাচ্ছে। এবং শহরের বিভিন্ন হোটেল রেঁস্তরাগুলোতেও এখন লোহার তৈরি জিনিসের চাহিদা নেই সকলেই ব্যবহার করছে স্টিলের যন্ত্রপাতি।

এই বিভাগের আরো খবর