শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভাই-বোনকে ৮ বছর পর জমি উদ্ধার করে দিলো এসপি হারুন

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : নগরীর ৩৪নং উত্তর চাষাঢ়ায় বাস করেন এমএ সালামের মেয়ে সামিনা (৩৭) ও তার ভাই শাফকাত সালাম (৩৯)। নারয়ণগঞ্জের সৈয়দপুর এলাকার কাঠপট্টি গুদারাঘাট এলাকায় ৯ বিঘা জমিসহ রেইনবো ডাইং ফ্যাক্টরীর মালিক থাকা অবস্থাতেই ২০০৪ সালে মারা যান তাদের বাবা এমএ সালাম। তবে এসব জানা ছিলোনা তার ছেলেমেয়ের।  

 

সম্পত্তিটি ব্যাংকের ঋণ নেয়ার আওতাধীন ছিলো। সেগুলো পরিশোধ করা নিজেদের জন্য দুঃসাধ্য হওয়ায় এমএ সালামের ছেলে-মেয়ে মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনুর বন্ধু হিসেবে পরিচিত জসিমের সাথে চুক্তি হয় ব্যাংকের ঋণ ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ব্যাপারে। তবে এই সিদ্ধান্তই কাল হয় তাদের।

 

সাজনুর লোক জসিম ও হাশেম মিলে তাদের মিলের বিদ্যুৎবিলসহ যাবতীয় ঋণ ব্যাংক লোনের এক্সিট পলিসি শেষ করবার জন্য সবধরণের ব্যবস্থা নিবে। ২০১১ সালে এই চুক্তি হয়। তবে জসিম ও হাশেম এমএ সালামের ছেলেমেয়েকে এই আশা দিয়ে ফ্যাক্টরির যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি করে ২ কোটি টাকা আত্মসাত করে।

 

কিন্তু ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কোন অগ্রগতিই দেখাতে পারেনি তারা। গত ৮ বছর যাবত তারা ব্যাংকের লোনের কোন কিছুই শোধ না করায় ঋণের বোঝা চাপতে থাকে এমএ সালামের ছেলে মেয়ের কাঁধে। ঋণের বোঝায় তারা জর্জরিত হতে থাকেন।

 

সম্প্রতি পুলিশ সুপারের সুনাম শুনে এমএ সালামের মেয়ে সামিনা ও তার ভাই শাফকাত সালাম দ্বারস্ত হন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কাছে। তারা জমি উদ্ধারের ব্যাপারে পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক এনামুলের উপর তদন্ত ভার দেন এসপি। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ২১ জুলাই ইন্সপেক্টর এনামুলের নেতৃত্বে ওই জমি উদ্ধার করে এমএ সালামের মেয়ে সামিনা ও তার ভাই শাফকাত সালামকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

 

এমএ সালামের মেয়ে সামিনা বলেন, ২০১১ সালে জসিম নামে এক ব্যক্তির সাথে বায়নাপত্রে চুক্তি করেন তারা। কথা ছিলো তারা ব্যাঙ্কের লোন পরিশোধ করে জমির বাকী টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু সে আর তারা করছিলেন না। উল্টো মিলটির সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারিদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে পুরো মিলটিই দখলে নিয়ে নেন।

 

সামিনার দাবি, তারা যখন দখলবাজদের কাছ থেকে মিলটি ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছিলেন তখন জসিমের পক্ষে এসে দাঁড়ান মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু। মূলত তিনিই গত আট বছর ধরে নানা ধরণের টালবাহানা করছিলেন।

 

আমাদের সম্পত্তিতে আমরা কেউ যেতে পারছিলাম না। যতবারই আমরা আমাদের সম্পত্তি ফিরে পেতে চাইলাম ততবারই আমাদেরকে নানা ভাবে থামিয়ে দিলেন সাজনু। তিনি আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেন।

 

সামিনা বলেন, জসিম বিভিন্ন জায়গায় ছড়াচ্ছেন তিনি আমাদেরকে দুই কোটি টাকা দিয়েছেন এবং ব্যাঙ্কেও দুই কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ব্যাঙ্কে কোনো টাকা দেননি। দিয়ে থাকলে সে প্রমাণপত্র তিনি দেখাক। তাছাড়া আমাদেরকে সে দুই কোটি টাকা দেয়নি। প্রথমে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। পরে ৫ বছরে আরও ৮০ লাখ টাকা দিয়েছে।

 

আমরা এই টাকাটাও তাকে ফেরৎ দিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো কিছুই করতে রাজি ছিলেন না। শুধু শুধু কালক্ষেপন করছিলেন সাজনুর মাধ্যমে। সাজনুই ছিলেন এর নেপথ্যে।

 

তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে যখন জমিটি উদ্ধার করতে পারছিলাম না তখন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিই। তিনি কাগজপত্র সব দেখে ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর এনামুলকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে বুধবার তারা দখলবাজদের কাছ থেকে আমাদের সম্পত্তি উদ্ধার করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন। পুলিশ সুপারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

 

এই প্রসঙ্গে জানতে মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু বলেন, ‘এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন অভিযোগ। জসিম আমার বন্ধু । সে দুই কোটি টাকা দিয়ে পাওয়ার নিয়েছেন।

 

এরপরই সামিনাদের চাচা মামলা করাতে সে ওখানে যেতে পারেনি। জসিমের নামে কোনো ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়নি। হয়ে থাকলে জামিনে আছে। আর জমি বেদখল ছিলো সেটি কীভাবে বলেন। ২ কোটি টাকা দিয়ে  জসিম রেজিস্ট্রি পাওয়ার নিয়েছিলো।”

 

পুলিশ সুপারের বরাত দিয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-২) সাজ্জাদ রোমন বলেন, ‘যে যত বড় ভাইয়ের লোক হোকে অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

 

এ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে আমার বৈধ দখলকৃত জমিতে প্রবেশ করে আমার লোকজনদের মারধর করে বের করে দিয়েছেন। আমি এ ব্যাপারে লিগ্যাল অ্যাকশনে যাবো। উকিলের সাথে কথা বলে বাকী ব্যবস্থা নেব।

 

২০১০ সালে আমি দুই কোটি টাকা দিয়ে তাদের সাথে বায়না করেছি। পরে তারা আমাকে পাওয়ারনামা দিয়েছেন। ব্যাঙ্কেও দুই কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। 

এই বিভাগের আরো খবর