শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভবন ধসে নিহত ওয়াজিদের জন্মদিনে কি চায় তার বাবা!

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : আজ ওয়াজিদের জন্মদিন। উৎসব আর আনন্দমুখর একটি দিন হলেও ওয়াজিদের পরিবারে আজ শোকের মাতম। নানান আয়োজনে যে মা দিনটিকে সুন্দর করে করে তুলবেন ভেবে ছিলেন আজ তার হৃদয়ে কেবল ছেলের হারানোর কষ্ট। চোখ দিয়ে ঝরছে অঝোর ধারায় পানি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ওয়াজিদের বাবার বুকের ভিতর আজ শুধুই হাহাকার। যার মনে এখন তার অনেক প্রশ্ন। প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতেই অপেক্ষা করছেন ওয়াজিদের পরিবার।


গত ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের ১নং বাবুরাইল এলাকাতে খালের উপর নির্মিত এইচএম ম্যানশন নামের ভবনটি ধসে পড়ে।  এই ভবনের নিচে আটকে পড়ে ইফতেকার আহমেদ ওয়াজিদ (১২)। সে বাবা আব্দুল রুবেল ও মা কাকলী বেগমের প্রথম সন্তান। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ত। ছোট বেলা থেকেই আরবি শেখায় ছিল তার প্রবল আগ্রহ। 


প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত এইচএম ম্যানশনের নিচতলায় একটি কক্ষে আরবি পড়ত। প্রতিদিনের মতোই মা কাকলী বেগম পৌনে ৪ টায় তাকে আরবি পড়তে পাঠায়। কিন্তু সেদিন আর ফিরেনি ওয়াজিদ। এক বুক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন মা কাকলী বেগম। ধসে পড়া ভবন থেকে ৪৬ ঘন্টা পর ফিরে পেয়েছিলেন ওয়াজিদকে কিন্তু জীবিত নয় নিথরভাবে একটি লাশ ফিরে পেয়েছিলেন।


ভবন ধসের এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রেহেনা আকতারকে আহ্বয়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। ৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ৪ নভেম্বর রাতে নিহত স্কুলছাত্র শোয়াবের মামা রিপন হোসেন বাদী হয়ে বাড়ির মালিক ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এই ঘটনার ১৩ দিন পার হয়ে গেলেও এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো অগ্রগতির সংবাদ পাওয়া যায় নি।


কিন্তু এইদিকে ওয়াজিদের বাবা আব্দুল রুবেল ও তার পরিবার এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেন। ওয়াজিদের বাবা আব্দুল রুবেল এই বিষয়ে প্রতিবেদককে বলেন, আজ ওয়াজিদের জন্মদিন। কিন্তু আমাগো ওয়াজিদ আজকে আমাগো কাছে নাই। ওয়াজিদের মৃত্যু আমাদের পরিবারের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। 


আমাদের পরিবারে কারো চোখের পানি এখনো শুকায় নাই। মামলা হইছে কিন্তু এতদিন পরেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। বিচার কি পাবো আমরা? আমরা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছি। অপেক্ষা করছি দেখি প্রশাসন কি ব্যবস্থা গ্রহন করে। ওয়াজিদের মায় সারাদিনই কাঁদে। এই রকম অনাকাঙ্খিত ঘটনায় চাই না আর কোন মায়ের বুক খালি হোক।


নিঁখোজের পরদিন ওয়াজিদের মা আহাজারি করে বলেতে থাকেন, আমার ছেলেরে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখছি। এই মাসের ১৬ তারিখে জন্মদিন আমার মানিকের। আমারে কয়েকদিন যাবৎ বার বার বলতাছিল, ‘ওমা ওমা আমার কিন্তু জন্মদিন কিন্তু আইসা পড়তাছে’। সবাই গিয়ে আমার মানিকরে একটু আইনা দেও না!


ওয়াজিদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রশাসনের কাছে বিল্ডিং তৈরীতে বিল্ডিং কোড মানার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও ওয়াজিদ সহ একই ঘটনায় তার খালাতো তাই শোয়েবের মৃত্যুর বিচারের আহ্বান জানান।  


এবিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেহানা আক্তার জানান, তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সময় বাড়ানো হয়েছে। তবে এ সময়টা ঠিক কতদিন বাড়ানো হয়েছে এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেহানা আক্তার কিছু জানানি।


ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন এই বিষয়ে জানান, এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায় নি। ঘটনার দিন থেকে তারা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। বাড়ির মালিকের মধ্যে দুই জন  মালোশিয়ায় অবস্থান করছে। আসামীরা যেখানেই থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।


প্রসঙ্গত, ৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় ১নং বাবুরাইল এলাকাতে খালের উপর নির্মিত এইচএম ম্যানশন নামের ভবন ধসে নিহত হয় শোয়েব (১২) ও ইফতেখার আহমেদ ওয়াজেদ (১২) ও ৭ জন আহত হন। এই ভবনের মালিক বাবুরাইল এলাকার মৃত মো. রফিকের স্ত্রী জয়বুন্নেছা ও তার চার সন্তান। তার চার ছেলেমেয়েসহ তাদের ৩টি পরিবার থাকত। নিচতলায় শুধু ভাড়াটিয়া ছিলো। ভবনটি সেদিন হেলে পড়ার সময়ে বাড়ির মালিকদের কেউই ছিলেন না।
 

এই বিভাগের আরো খবর