বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বিদ্যুৎ বিলের জন্য অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি (ভিডিও)

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা রিপোর্ট : নতুন যে কেউ ফতুল্লার লালপুর এলাকায় এলে ভিমড়ি খেয়ে পড়তে পারেন। ভাবতে পারেন, বাধ ভেঙে কিংবা জলোচ্ছ্বাসে হয়তো তলিয়ে গেছে পুরো এলাকা। কিন্তু পরক্ষণে যখন মনে পড়বে  শুকনো মৌসুম, নেই বৃষ্টি, তবু কেন এই জলাবদ্ধতা ? এর কারণ অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে ভিন্ন বিষয়।

 

মূলত দীর্ঘদিন দিন ধরে পানি অপসারণ করে আসা তিনটি পাম্পের বিদ্যুৎ বিলের ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই সংযোগ কেটে দেয়ায় জলাবদ্ধতায় গোটা এলাকার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকান, প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে অদৃষ্টের আশীর্বাদ কামনা ছাড়া কারো যেন কিছুই করার নেই। অথচ এই এলাকাতে তিন তিনজন ইউপি চেয়ারম্যানের বসবাস। 

 

ফতুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন, বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী, কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান নানাদিকে দৌঁড়ঝাপ করেও কোন কূলকিনারা করতে পারছেননা বলে জানান তারা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ড্রেনের পানি নিষ্কাাশন না হওয়ায় ফতুল্লা ইউনিয়নের লালপুর, পৌষার পুকুরপাড়, টাগারপাড়, গাবতলিসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। কোন কোন এলাকায় পানি উপচে রাস্তা ও বাসা বাড়িতে ঢুকে গেছে। ড্রেনের নোংরা পানি ও মলমূত্রের সাথে যোগ হয়েছে শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি।

 

অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে নোংরা ও ডাইং কলখারখানার গরম পানিতে। রাতে রাস্তা খুঁজে পাওয়াও কঠিন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, দোকানীসহ পানিবন্দি প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। এ পানি মাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ফলে চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অনেকে বাধ্য হয়েই কয়েক মিনিটের রাস্তা পার হচ্ছে ১৫-২০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে।

 

বকুলতলী এলাকার দোকানী রমিজ মিয়া বলেন, পানি সরে যাবার ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। আর বৃষ্টি হলেতো সাথে সাথে পুরো রাস্তা খালে পরিণত হয়। পানিতে মলমূত্র ভাসছে ও প্রচণ্ড গরম হওয়ার ফলে পানিতে পা রাখা যায় না। মসজিদে যেতে মুসল্লীদেরও নানা সমস্যা হচ্ছে। দোকানীরা তাদের ব্যবসা বন্ধ করারও চিস্তা করছেন। 

 

গৃহিনী মিতুল আক্তার জানান, পানির সাথে মলমূত্র ও শিল্প-কারখানার কেমিক্যালযুক্ত বিষাক্ত পানি মিশে চরম দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। ময়লা পানি বাসা বাড়ি রান্না ঘরে ঢুকে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। রান্নাসহ নানা কাজ কর্মে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে এলাকার সকলের সিদ্ধান্তে ৯০ হর্স পাওয়ারের তিনটি মটরের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন চলতো। মূলত আজাদ, রনি ডাইং এবং প্রধান টাওয়ারের ডাইংটি মিলে তিনটি ডাইং ফ্যাক্টরির এই ময়লা পানির জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। তিনবছরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়ে পড়েছে ৫০ লাখ টাকা। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৬ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিষদ করেছি কিন্তু এখনো ৪৪ লাখ টাকা বিল বাকি। 

 

তিনি আরও বলেন, মূলত এই মটরগুলো চালানোর জন্য দুইজনকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা দেয়া হতো। এ টাকা এলাকার মানুষের কাছ থেকে বছরের ৫০০ টাকা করে আড়াইলাখ টাকা তোলা হয় পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে। কিন্তু সেটি দিয়ে বিদ্যুৎ বিল দেয়া সম্ভব হয়নি। বকেয়া থাকায় ডিপিডিসি বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানির পাম্প ছাড়া উপায় নেই, কারণ এলাকা নিচু হওয়ায় ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। 

 

অভিযোগ করে লুৎফর রহমান স্বপন বলেন,  জলাবদ্ধাতার জন্য দায়ী ডাংই ফ্যাক্টরি মালিকদের বার বার নিষেধ করার পরও তারা ক্যামিকেলযুক্ত পানি এলাকায় ছাড়ছে। উপায় নেই, মানুষ যাবে কোথায় ? আমরা ডায়িংগুলোর মালিককে নোটিশ করছি, জানাচ্ছি তবে তারা কেউ গায়েই মাখছেনা কথা। নদীতে পানি ফেলার লাইন থাকার পরও বিদ্যুৎ বিলের ভয়ে তারা এভাবেই পানি ছাড়ছে। জলাবদ্ধাতার নিরসনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।

 

ফতুল্লার বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীও থাকেন এই এলাকায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ডাইং ফ্যাক্টরির মালিকদের জন্য জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আজাদ ডাইংকে পানি ছাড়তে নিষেধ করেছি তবে তারা কথা শুনেনা। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক বলেন, ‘পাঁচ-ছয় মাস আগে আমি ওই এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এখন আবার কী কারণে পুরো এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়লো বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি ওই এলাকার চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ 
বকেয়া বিল থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে জানিয়ে ডিপিডিসি ফতুল্লা সাবস্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বকেয়া বিল পরিশোধ না করা হলে আমাদের কিছুই করার নেই। মানুষ কষ্ট করছে, কিন্তু আমরা আমাদের দায়িত্বের বাইরে যেতে পারিনা।’ 

 

যে কোন উপায় বের করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত জলাবদ্ধতা দূর করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাগব করবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

এই বিভাগের আরো খবর