বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যুগের চিন্তা’র টক শো

বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান (ভিডিও) 

প্রকাশিত: ৩ এপ্রিল ২০২০  

স্টাফ রিপোর্টার : করোনা মোকাবেলায় গরীব দুঃখিদের নিজে সহযোগীতা করছেন এবং সমাজের বিত্তবানদেরও সহযোগীতার জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব ওমর ফারুক।

 

বৃহস্পতিবার বিকেলে যুগের চিন্তার লাইভ টকশোতে এই আহবান জানান তিনি। এ সময় সঞ্চালনায় ছিলেন চ্যানেল আই এর বিশেষ প্রতিনিধি মোরছালীন বাবলা। 

 

প্রথম প্রশ্ন ছিল আপনি আপনার এলাকায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করছেন করোনাভাইরাস মোকাবেলায়?

কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন আমরা সর্ব প্রথম আপনাদের পত্রিকার মাধ্যমেই জানতে পেরেছি যে, আল জয়নায়ল প্লাজায় ২জন ইতালি প্রবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর পরপরই আমি আমার ওয়ার্ডে এবং বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় হ্যান্ড মাইক নিয়ে সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন করি। 


সবাইকে বাসায় থাকার জন্য বলি। আর যেহেতু আমার ওয়ার্ডের বেশির ভাগ মানুষই চাকুরি করে, তাই সবাইকে আমি বলি যে আপনারা বাইরে থেকে বাড়িতে আসলে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন এবং মাস্ক ব্যবহার করবেন। 


এছাড়া বাড়ির মধ্যে থাকা মা বোনদের এ বিষয়ে সচেতন করতে আমি আমার ওয়ার্ডে বিভিন্ন মসজিদের মাইকে এ্যালাউন্স করেছি। বলেছি, আপনারা বাড়ির মধ্যেই থাকুন। আপনাদের সন্তানদের দেখাশুনা করুন তাঁরা যাতে বাড়ি থেকে বিনা করণে বাহিরে না আসে।

 

এরপর যখন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বন্ধ করা হলো, তখন আমি আমার ওয়ার্ডে প্রায় ৫০ হাজার লিপলেট বিতরণ করেছি এবং সেই লিপলেটে লিখা ছিলো মূলত করোনাভাইরাস কি?

 

কিভাবে এই ভাইরাস থেকে বাঁচা যায় সেই বিষয়গুলো এই লিপলেটে উল্ল্যেখ করা ছিলো। পাশাপাশি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানেটাইজার প্রতিটি বাসায় পৌছে দিয়েছি। এবং যারা যারা পায়নি তাঁদের জন্য বলে দিয়েছি যে, আমার অফিস থেকে এসব জিনিস সংগ্রহ করে নিতে।

 

এছাড়া আমি আমার নিজের অর্থায়ণে একটি ১ হাজার লিটারের ট্রাক ভাড়া করে সেই ট্রাক দিয়ে প্রতিটি রাস্তায় জীবাণুনাশক পানি ছিঁটিয়েছি। যাতে কারে এই করোনাভাইরাসের সংক্রমন ছড়াতে না পারে। আর এখন সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদে কম যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও মানুষ কিন্তু মসজিদ মুখী। তাই মসজিদগুলোতেও আমি জিবাণুনাশক দিচ্ছি যাতে সেখান থেকে সংক্রমন ছড়াতে না পারে।


এছাড়া মশক নিধনের বিষয়ে কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন, আমরা বুঝতে পারছি যে আমরা করোনাভাইরাসের মোকাবেলা করতে করতে ডেঙ্গুও এসে পরতে পারে! তাই আমি কাউন্সিলর হওয়ার পর আমার নিজের অর্থায়নে যেই মশা নিধনের মেশিন কিনেছিলাম সেই মেশিন দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রমও পরিচালনা করে যাচ্ছি। 


আর আজকে যেহেুতু আকাশে বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব ছিলো তাই আজও আমি বলে এসেছি যতটুকুই সম্ভব আজকে যাতে মশার ঔষধ দেয়া হয়। আর যেহেুতু আগে থেকেই মশার উপদ্রব কমাতে আমার ওয়ার্ডে বিভিন্ন উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছে তাই মশা আমি কন্ট্রোলে রাখতে পারবো।


অন্যদিকে আমার ওয়ার্ডে যেহেতু ভাসমান লোকজনের বসবাস বেশি তাই দেখাযায়, এরা সারাদিন কষ্ট করে বাড়িতে অবস্থান করলেও বিকেল হলে বাহিরে বের হয়ে যায়। তাই আমি প্রায় সময়তেই প্রশাসনের লোকজনের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করে দেই যাতে তাঁরা ঘরে অবস্থান করে।

 

করোনা মোকাবেলা আপনার ওয়ার্ডের মসজিদগুলোতে কি ধরনের নির্দেশনা দেয়া আছে?

আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি মসজিদের ইমাম এবং সেক্রেটারির ফোন নম্বরের তালিকা আমার কাছে আছে। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে আমি তাঁদের সাথে কথা বলি। যাতে তাঁরা নামাজের আগে মুসুল্লিদের বলে যে আপনারা ফরজ নামাজ পড়ে বাড়ি চলে যাবেন। এবং যতটুকু সম্ভব বাড়িতেই নামাজ আদায় করুন। 


আপনার ওয়ার্ডের বিদেশ ফেরতদের অবস্থা কি ?

আসলে আমার ওয়ার্ডে বিদেশ ফেরতের মধ্যে ৭টি পরিবার হোম কোয়ারেন্টিনে আছে। এবং এদের সকলের তালিকাই আমার কাছে আছে। এদের বিষয়ে ডিসি অফিস, এসপি অফিস এবং নগর ভবনের ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়। এসব পরিবারের সমস্ত চাহিদাগুলো আমরা পূরন করছি। আর এরমধ্যে খাবার, ঔষধ, সবজি, বাজার অনেককিছুই রয়েছে।

 

আপনার ওয়ার্ডের পাশে আদমজি ইপিজেটে অধিকাংশ শ্রমিকই এখন বেকার হয়ে গেছে তাঁদের জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

আসলে এখানে গরীব লোকের সংখ্যাই বেশি যারা দিন আনে দিন খায়। এদের ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থা একটু একটু করে সাহায্য দিচ্ছে। আর আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ৩ হাজার মানুষকে খাদ্যপন্য দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এগুলো সকলের বাড়ি বাড়ি পৌছে দেয়া হবে।


এছাড়া আমার ওয়ার্ডে যেসব মধ্যবিত্ত পরিবার আছে তারাও খুব কষ্টে আছে কিন্তু মুখ খুলে বলতে পারছেনা! তাই আমি আমার ওয়ার্ডে প্রতিটি এলাকায় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তালিকা তৈরী করছি যে, কার কি অবস্থা? আশা করি দ্রুতই সকলের কাছে খাদ্য পৌছে দেয়া হবে। 

পাশাপাশি আমি এটাও আশা করি যে আমার ওয়ার্ডে গরীব এবং মধ্যবিত্ত যারাই আছে তাঁদের অন্তত খাবারের জন্য কষ্ট করতে হবেনা। আমি সকলের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দিবো। এবং এরজন্য আমার একটি স্বেচ্ছাসেবক দল রয়েছে।

 

সরকারের কাছে আপানাদের কোন চাহিদা আছে কিনা?

আসলে এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোন ত্রান পাইনি। তবে মেয়রের সাথে আমার কথা হয়েছে। মনেহচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকে অমাদের জন্য একটি বাজেট এসেছে। (৩ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ডিসি অফিসে আমাদের মিটিং আছে সেখানে হয়তো আমাদের ওয়ার্ডের ত্রান আমরা সিটি করর্পোরেশনের কাছ থেকে আমরা বুঝে পাবো।

 

আপনার এলাকায় বিত্তবানদের সংখ্যা কেমন?

আমার ওয়ার্ডে বিত্তবানদের সংখ্যা মোটামুটি। এরা সকলেই করোনাভাইরাসের প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজ পরিচালনা করছেন। সাহায্য সহযোগীতাও চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি নিজে তাঁদের বলেছি এই সংকটের সময়ে সকলের পাশে দাঁড়াতে। 


পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলোও সকলকে এই মাহামারী থেকে বাঁচাতে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া সকলের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতেও আমার ওয়ার্ডে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া আছে। এরজন্য আমরা নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরেশন থেকে বরাবরই সাহায্য পাচ্ছি।


সবশেষ এলাকার  জনগণের উদ্দ্যেশে নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উমর ফারুক বলেন, আমি বিত্তবানদের বলতে চাই আপনারা এতোদিন সকল গরীব-দুঃখিদের আমার সাথে মিলে যেভাবে সাহায্য করেছেন। করোনার বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই সাহায্য করবেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর