শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিতর্কিত ব্যক্তিকে স্কুলের সভাপতি না করতে এলাকাবাসীর স্মারকলিপি

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৯  

সোনারগাঁ (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের ৭২ নং নাগেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে বিতর্কিত রফিকুল ইসলাম সরকারকে সভাপতি না করার জন্য সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে এলাকাবাসী। বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে এলাকাবাসীর পক্ষে নাগের গাঁও গ্রামের  মো. মোবারক হোসেনের ছেলে মো. নুরুল ইসলাম এ স্মারকলিপি প্রদান করেন। 

 

উপজেলার ছয়হিস্যা গ্রামের মৃত আবুল কাশেম সরকারের ছেলে রফিকুল ইসলাম প্রতিদিন মেঘনা নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন জাহাজ থেকে কোটি কোটি টাকার তেল চুরি করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব চুরি হওয়া তেল স্থানীয় বাজার ও নদীর ঘাটে দোকান খুলে বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত নৌযানে সিন্ডিকেট করে বিক্রি করে তিনি। এ সিন্ডিকের সাথে পিরোজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০-২৫জন জড়িত বলে জানিয়েছেন জানা যায়।

 

র‌্যাব-১১-এর একটি দল গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে তেল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতা রফিকুল ইসলাম সরকারসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে। পরে ৯ দিন জেল হাজতে থাকার পর জামিনে আসে। এ তেল চুরির সাথে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন, সেলিম রেজা, লুৎফর রহমান, নজরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম ও শ্যামলসহ ২০-২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট জড়িত। 

 

মেঘনা নদীতে বিভিন্ন জাহাজ থেকে সয়াবিন, পামওয়েল, ডিজেল ও কেরোসিন তেল চুরি করে নিয়ে আসে। চুরি করা এসব তেল স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে ও মেঘনা নদীর তীরে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে ডিজেল ও কেরোসিন তেল বিক্রি করে থাকে। এসব চুরির তেলের ব্যবসা করে এ সিন্ডিকেট অল্প দিনেই কোটিপতি বনে গেছেন।

 

সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে ১০ ব্যারেল চোরাই তেলসহ মেঘনা ঘাট এলাকা থেকে সেলিম রেজা নামের এ সিন্ডিকেটের সদস্য গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর তাদের সিন্ডিকেটের নাম একে একে বেরিয়ে আসে। সেলিম রেজাকে র‌্যাবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে সিন্ডিকেটের প্রধান রফিকুল ইসলাম সরকার ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে গিয়ে টাকাসহ গ্রেফতার হয়। তার স্বীকারোক্তিতে র‌্যাব তার বাড়ির ঘাট থেকে প্রায় ২১ লাখ টাকার চোরাই তেলসহ তিনটি স্টিলের বোর্ড জব্দ করে। 

 

এ ঘটনায় ৯ দিন হাজত বাস করার পর জামিনে এসে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই সিন্ডিকেট আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন রফিকুল ইসলামের অবৈধ অর্থের লোভে তাকে নাগেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি করার জন্য পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা আলমগীর হোসেন ও প্রধান শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ উঠে পড়ে লেগেছেন।

 

  
এদিকে ৭২ নং নাগেরগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে সোনারগাঁয়ের শীর্ষ তেল চোরাকারবারী রফিকুল ইসলাম সরকারকে সভাপতি না করার জন্য সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে এলাকাবাসী। 

 


এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাতায় পার্টির নেতা আলমগীর হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তেল চোরাকারবী রফিকুল ইসলাম সরকারকে সভাপতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।একজন তেল চোরাকারারী যদি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? 

 

অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সোনারগাঁ থানা পুলিশ তদন্ত করছে। আমাকে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সভাপতি হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। 


সোনারগাঁ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, অভিযোগের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। এমন চরিত্রের লোক কমিটিতে সভাপতি হলে শিক্ষার মান নিচের দিকে যাবে।

এই বিভাগের আরো খবর