বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই গলদ

প্রকাশিত: ৪ মে ২০১৯  

রণজিৎ মোদক : “মনই যদি নিবারে বন্ধু, কেন মন করিলা কালো।” অনেকদিন পূর্বে এ গানটি শুনেছিলাম। এখন আর তেমন গান শুনা বা সিনেমা দেখা হয় না। তবে অবসরে পুরনো গানগুলো শুনি তাও আবার একাকি যখন থাকি। গানের মধ্যে নিজের দুঃখগুলো খুঁজে পাই। দুঃখের সাথে দুঃখ মিলিয়ে সুখ বা সান্তনা খোঁজার চেষ্টা করি। শুনেছি গান আর কবিতা যে ভাল না বাসে সে নাকি পাথর দিয়ে গড়া।

সে মানুষ খুন করতে পারে! মানুষে মানুষ খুন করতে পারে এ আমার বিশ্বাসই হয় না। তবে মানুষ যখন মনুষত্ব হারা হয়ে পশুত্বে রূপ নেয় তখন সেই মানুষরূপী পশুরা মানুষ হত্যা করতে পারে। আজ পৃথিবীর শান্তির বিখ্যাত স্থানগুলোতে মানুষ হত্যার কুৎসিত উৎসব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী মায়ানমারে নরহত্যা যজ্ঞের বলি হয়ে নিঃস্ব রিক্ত প্রায় ১০/১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কঠিন পরিস্থিতির শিকার, মানবতার অগ্নি পরীক্ষায় সত্যি ভূয়সী প্রশংসার দাবী রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু কবে কখন এই শরণার্থীরা তাদের নিজস্বালয়ে ফিরে যাবে তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। বিশ্ব বিবেক কবে জাগ্রত হবে? তা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ-ই জানেন।

১০/১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী যখন দেশের ভেতর অবস্থান করছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া, বাসস্থান ও চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঠিক তার পূর্বেই দেশের ভিতরে চলছে আন্দোলন, সন্ত্রাস, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন। অপরদিকে সমাজের সবচাইতে বড় শত্রু মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারীদের সমাজ ধ্বংসের পায়তারা।

 

এদিকে সরকার খাদ্য, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দেশকে যখন রেলপাতে দাঁড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ বহির্বিশ্বগুলো বাংলাদেশকে অনুসরণ করছে। ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, চীন, জাপান ও নেপালের মত দেশগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের প্রশংসা করছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের দশবছর পেরিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচন এসে যায়। সংসদ নির্বাচনের পূর্ব থেকে দেশের অলিখিত বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী জানান। নির্বাচন সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। কঠিন কঠিন বাক্যবান প্রয়োগ করা হলো পত্রিকার পাতায়-পাতায়। কিন্তু কথায় আছে যত গর্জে, তত বর্ষে না। আপোষহীন নেতৃর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব যা যা বললেন, তা তা আর দেখা গেল না। শুধু প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল।

দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাক এটা সচেতন মহল চায়। কিন্তু শেষে ২০ দলীয় ঐক্যজোট নির্বাচনের মাঠে এলেন। নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হলো। রাজনীতি বা, নির্বাচনী মাঠে তেমন কাউকে দেখা গেল না। ২০ দলীয় জোট প্রচার করলেন ভোট বিপ্লব হবে। জনগণের প্রতি বিশ্বাস রেখেই একথা বলা হয়েছিলো।

তবে ভোট কেন্দ্রগুলো পাহারার জন্য প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা বিভিন্ন রকম হতেই পারে কিন্তু নির্বাচন শেষে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ ও তার শরীক দল। নির্বাচনী ফলাফল দেখে ২০ দলীয় জোট নির্বাচনের ফলাফল বর্জন করলো।

বিভিন্ন মিডিয়া নির্বাচনে ছোট-খাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রচার করায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান সরকার শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান। যথা সময়ে আওয়ামী লীগ তার শরিকদের নিয়ে সরকার গঠন করেন। কিন্তু বিএনপি তার সহযোগী নির্বাচিত কেউ সংসদে না এসে আওয়ামী সরকার ও নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। এক ধাক্কা দিয়ে সরকারকে উল্টে দিবেন।

জনগণ এসব কথা কানে নেয়নি। একশত দিন পাড় হয়ে গেল- রাজপথে নেই কোন আন্দোলন-অবরোধ। জনগণ এখন আর আন্দোলন-অবরোধ চায় না। নেই যে তারও একাধিক কারণ রয়েছে। দীর্ঘ দশ বছরে বিএনপি ও তার সংগীয় জোট জনগণের অধিকার নিয়ে রাজপথে আসেনি। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ ও মুক্তির দাবীতেই শুধু প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

একথাও ঠিক বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত। এসব মামলার পিছে কর্মীর পেছনে নেতাদের লক্ষ্য করা যায়নি। তৃণমুল নেতাকর্মীদের এ ধরণের বহু অভিযোগ রয়েছে। যারা সত্যিকারের বিএনপির পরীক্ষিত নেতা তারা অনেকেই নেতৃত্ব হারিয়ে নিরব নিথর। এমনকি রাজনীতির জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন।

গত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রকৃত নেতারা মূল্যায়িত হয়নি। তার প্রমাণ বিএনপি উপদেষ্টা কমিটির প্রবীন রাজনীতিবিদ এড. তৈমুর আলম খন্দকারের বেশ কিছু লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। সবাই জানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী হবেন শিল্পপতি শাহ আলম নয়তো সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু না! যাকে মনোনয়ন দেওয়া হলো মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে।

তাকে সাধারণ ভোটাররা কেউ-ই চেনে না। পরীক্ষার খাতায় অংক ভুল হলে নাম্বার কম পাওয়া যায়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে ভুল হলে তা সংশোধন করা যায় না। বেচারা নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান তার স্বভাব সুলভ হাসির জন্য খেসারত কম দেননি। পাটমন্ত্রী এমপি লতিফ সিদ্দিকী একটি কথার জন্য মন্ত্রীত্ব হারালেন।

কথায় আছে, যিনি কম কথা বলেন তিনি জ্ঞানী, আর যিনি আস্তে কথা বলেন তিনি মহাজ্ঞানী। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কম কথা বলেন। তাকে নিয়ে কোন সমালোচনা আজও শুনা যায়নি। এদিকে ফাটাকেষ্ট খ্যাত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দেশের মানুষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসেন হঠাৎ করেই তার অসুস্থতার সময় তার প্রমাণ শতভাগ প্রতীয়মান হয়েছে। দেশের বিরোধী দলের নেতারা সুন্দর সুন্দর প্রশংসা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সারাদেশের মানুষ শত্রু-মিত্র সবাই তার জন্য দোয়া করেছেন। দেশ ও দশের মঙ্গল কামনায় যার হৃদয় পূর্ণ, তাকে দেশের মানুষ অবশ্যই ভালবাসে। কর্মীর কর্ম দেখে আমাদের সবার দেশপ্রেমের শিক্ষা নেওয়া উচিত। শুধু দুঃখ হয় দীর্ঘ সময় ধরে যারা একটি দেশ পরিচালনা করেন। সেই বিএনপির নেতৃত্বে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যে বিভিন্ন সময় তা প্রতীয়মান হয়েছে।

আজ সেই দলের এ পরিণতি কেন? চার এমপির শপথ নিয়ে অন্ধকারে ছিল স্থায়ী কমিটি। ফখরুলের আসন শূণ্য ঘোষণায় তৃণমূলে হতাশা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়। বিএনপির রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই গলদ রয়েছে। যা কিনা একটি দল ধ্বংস করতে যথেষ্ট।

কারণ, বিএনপির বেশিরভাগ নেতারাই টাকা ও ক্ষমতার লোভী তারা কখনোই সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেনি। তারা শুধু চেষ্টা করেছে নিজেদের অট্টালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করার। বর্তমানে মান্দাতার আমলের রাজনীতির অবসান হয়েছে। এখন রিকশাওয়ালাও বুঝে রাজনীতির মারপ্যাঁচ।

আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে অনেকবার শেখ হাসিনার জনসভা ও খালেদা জিয়ার জনসভায় উপস্থিত থেকে সংবাদ পরিবেশন করেছি। এতো কাছে থেকে আমি তাদেরকে দেখেছি সত্যি যা হোক বিএনপি জল এত্তো ঘোলা করে শেষে সংসদে এলেন। এতে কে কেমন ভাবে দেখছে আমি জানিনা, তবে রাজনীতির শেষ বলতে কিছু নেই।

জনগণের কথা নিয়ে আসুন এটাই সবার কাম্য। সংসদ প্রাণবন্ত হোক, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ মূল্যায়িত হোক। আজ আমাদের বুঝতে হবে শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী নন। তিনি বাংলাদেশের সবার নেত্রী। তিনি আজ বিশ্ব নেত্রীর আসনে অবস্থানে করছেন। মন কালা-কালির দরকার নেই। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সবার এগিয়ে আসাই আমাদের সবার কাম্য।

এই বিভাগের আরো খবর